সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির দু’পক্ষের বিরোধকে কেন্দ্র করে বারে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। মুখোমুখি অবস্থান করছে দু’পক্ষ। কর্মচারীরা তৃতীয় দিনের মতো মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ও দায়িত্ব পালন করেনি। এরফলে উকালতনামা, বেলবন্ড, হাজিরা বিক্রি বন্ধ রয়েছে। একারনে বিচার প্রার্থীরা ওকালাতনামা, হাজিরা, বেলবন্ড খরিদ করতে না পারায় বিচার কার্যবিঘিœত ও বিলম্বিত হচ্ছে এবং তারা হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। একই সাথে সমিতির প্রতিদিন ক্ষতি হচ্ছে লক্ষাধিক টাকা।
এদিকে সমিতির দু’পক্ষের বিরোধ নিস্পত্তির লক্ষ্যে মঙ্গলবার বিকালে সিনিয়র আইনজীবীরা বারের এক নাম্বার ভবনের নিচতলায় আলোচনায় বসেন। প্রবীন এড. গোলাম মোস্তফা, এড. একেএম শহিদ উল্লাহ, মোঃ আলাউদ্দিন, এড. আবু বক্কর সিদ্দিকসহ শতাধিক আইনজীবী এতে অংশগ্রহণ করেন। আলোচনায় বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কর্মচারীদের বারে এসে দায়িত্ব পালন করা এবং উকালতনামা, বেলবন্ড, হাজিরা বিক্রি চালু করতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ জন্য এড. গোলাম মোস্তফার কাছে বারের চাবি, এড. শহিদুল্লাহ (২) এর কাছে প্রতিদিনের হিসাব এবং এড. মমতাজুর রহমান মামুনের কাছে উকালতনামা, হাজিরা ও বেলবন্ডে স্বাক্ষর করার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
আলোচনা চলাকালে এড. শাহ আলম উপস্থিত হয়ে দায়িত্বপ্রাপ্তদেরকে সহায়তা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। তবে সর্বশেষ নির্বাচিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক এড. আ.ক.ম রেজওয়ান উল্লাহ সবুজ তাৎক্ষণিক কোন মন্তব্য করেননি। এড. আবুল হোসেন শারিরীকভাবে অসুস্থ্য থাকায় গতকাল বারে যাননি বলে জানা গেছে।
অপরদিকে সাতক্ষীরা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনী কার্যালয়ের তালা ভাংচুরের চেষ্টার ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। ৮ ফেব্রুয়ারি ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার এড. কুন্ডু তপন কুমার সাতক্ষীরা সদর থানায় এ সাধারণ ডায়েরি করেন। যার নং- ৫৬০। সাধারণ ডায়েরি সূত্রে জানা গেছে, ৭ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনী মনোনয়পত্র সরবরাহ শেষে ৪টার দিকে নির্বাচশন কমিশনের নেতৃবৃন্দ কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে চলে যান। রাত ১০টার দিকে নির্বাচন কমিশনের নেতৃবৃন্দ খবর পান অজ্ঞাত ব্যক্তিরা কার্যালয়ের তালা ভাংচুরের চেষ্টা করছেন। বিষয়টি পুলিশকে অবগত করানো হলে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। নির্বাচন কমিশনের নেতৃবৃন্দ আশংকা করছেন নির্বাচন ব্যাহত করতে এধরের অপতৎপরতা চালানো হচ্ছে।
আবুল হোসেন-সবুজকে কুন্ডু তপনের চিঠি:
এদিকে সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির গঠনতন্ত্রের তৃতীয় অনুচ্ছেদের ৪ (চ) ধারা মোতাবেক সর্বশেষ নির্বাচিত কমিটির সভাপতি এড. আবুল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক এড. আ.ক.ম রেজওয়ান উল্লাহ সবুজকে নির্বাচন কমিশনারের নিকট দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার এড. কুন্ডু তপন কুমার মঙ্গলবার রেজিস্ট্রি ডাযোগে এই চিঠি প্রেরণ করেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, আপনাদের কার্যনির্বাহী পরিষদ (২০২১-২০২২) বিগত ৩০ জানুয়ারি তারিখ হতে বিলুপ্ত হয়েছে। যা ৩০ জানুয়ারি তারিখে নোটিশ দ্বারা অবগত করানো হয়। কিন্তু অদ্যবধি আপনারা বারের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনারের হাতে বুঝিয়ে দেননি। উপরন্তু গত ৫ ফেব্রুয়ারি বারের কর্মচারীদের নিকট হতে আপনারা বারের অফিসের চাবি হস্তগত করে নিজেদের কাছে রেখেছেন। সে কারন বারের কর্মচারীরা গত ৬ ফেব্রুয়ারি হতে আপনাদের প্ররোচয়ায় আইনজীবী সমিতি অফিসে আসা বন্ধ করে দিয়েছে এবং তাদের দায়িত্ব পালনে বিরত আছে। সংগত কারনে বিচার প্রার্থীরা ওকালাতনামা, হাজিরা, বেলবন্ড খরিদ করতে না পারায় বিচার কার্যবিঘ্নিত ও বিলম্বিত হচ্ছে এবং তারা হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। উক্তরূপ কার্য সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির গঠনতন্ত্র বহির্ভূত এবং দেশের প্রচলিত আইনের পরিপন্থী।
চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, এমতাবস্থায় সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির আর্থিক ক্ষতি এবং সাধারণ আইনজীবী সহ সাতক্ষীরার বিচার প্রার্থী জনগনের হয়রানী ও বিচার কার্য দ্রুত নিষ্পত্তির কথা বিবেচনা করে সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির আর্থিক হিসাব ও চাবিসহ আইনজীবী সমিতি পরিচালনার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশন বরাবর বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা গেল। ব্যর্থতায় ভবিষ্যতে সমস্ত দায় আপনার উপর বর্তাবে।
সাতক্ষীরা আইনজীবী সমিতির প্রবীন এড. গোলাম মোস্তফা বলেন, সমিতির দু’পক্ষের বিরোধকে কেন্দ্র করে উকিল বারে অচলাবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। এতেকরে সাধারণ বিচার প্রার্থীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। আমরা আলোচনার মাধ্যমে দু’পক্ষের মধ্যকার বিরোধ নিষ্পত্তি চেষ্টা করছি। আশা করি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।