বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের কোল ঘেষে অবস্থিত শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। সৈকতের দুই পাশে ঝাউবনে ঘেরা নয়নাভিরাম এই মাঠে বসেছে বাংলাদেশের সাবেক কিংবদন্তি তারকা ক্রিকেটারদের মেলা। খালেদ মাহমুদ সুজন, নাঈমুর রহমান দুর্জয় হতে শুরু করে মোহাম্মদ রফিক-খালেদ মাসুদ পাইলটসহ হাবিবুল বাশার; বাদ যাননি কেউই। ক্রিকেটারদের এমন মিলন মেলা রূপ নিয়েছে চাঁদের হাটে।
বাংলাদেশের কিংবদন্তি ক্রিকেটারদের নিয়ে আয়োজিত ‘লিজেন্ডস চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি-(টেন ডট টেন) পাওয়ার্ড বাই ওয়ালটন’-টুর্নামেন্টে খেলছেন তারা। আজ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে টুর্নামেন্টটি। সমুদ্রের গর্জন ছাপিয়ে সুজন-দুর্জয়দের কলরবে মুখরিত ছিল মাঠ।
খেলায় কেউ জিতেছেন আবার কেউ হেরেছেন; সবকিছু ভুলে তারা মেতেছিলেন হাসি-আড্ডা আর খুনসুটিতে। ঝাউবনের ফাঁক গলে সূর্য তখন উঁকি দিচ্ছে একাডেমি গ্রাউন্ডে। দুর্জয়ের দল নারায়াণগঞ্জ ওয়ারিয়র্সের খেলোয়াড়দের টিপস দিচ্ছিলেন আতহার আলী খান; এটা দেখে যেন সহ্য হয়নি সুজনের। তাইতো পাশ থেকে সুজন ডাক দিয়ে বলেন, ‘আতহার ভাই আমাদেরও একটু টিপস দিয়েন।’ এই বলে সুজন নিজেই মেতে ওঠেন অট্টহাসিতে।
এখন কেউ বোর্ডের বড় কর্তা, কেউ আবার ব্যবসায়ী; সবকিছু ছাপিয়ে আজ তারা আবার হয়ে উঠেছেন ক্রিকেটার। ২২ গজের সতীর্থদের পেয়ে কেউ হয়েছেন স্মৃতিকাতর আবার কেউ আনন্দে আত্মহারা। ব্যাট-বল তুলে শো-কেসে রেখে দিলেও তারা ভোলেননি মজ্জায় মিশে থাকা প্রিয় এই নেশা আর একসময়ের পেশাকে। তা বলে দেয় বল হাতে মোহাম্মদ রফিকের ঘূর্ণির সঙ্গে ব্যাট হাতে ঝড় তোলার দৃশ্য।
রফিক বলেন, ‘প্রতিবছর এখানে যে একটা মিলনমেলা হয়, সেটাই কিন্তু বড় পাওনা। সবচেয়ে বড় কথা হলো, আমি এখনও মাঠে আছি, আলহামদুলিল্লাহ্! আল্লাহ্ আমাকে সুস্থ রাখছেন। যারা আমার দর্শক, দেশপ্রেমিক আছেন, ক্রিকেট পছন্দ করেন, তারা সবসময়ই আমাকে পছন্দ করেন। আমি ইনশাআল্লাহ্ চাই, সবসময় মাঠে থাকার।’
বিসিবি পরিচালক ইসমাইল হায়দার মল্লিক মনে করেন সাবেক তারকাদের এমন আয়োজন উদ্বুদ্ধ করবে বর্তমান প্রজন্মকে, ‘সাবেক ৬ অধিনায়ক সুজন ভাই, দুর্জয় ভাই, নান্নু ভাই, সুমন ভাই, পাইলট ভাই আছেন, রফিক ভাইদের মতো তারকা যারা আছে, সবাইকে এক প্ল্যাটফর্মে একত্রিত করলে এটা আসলে ক্রিকেটকে প্রচার ও প্রসারে উদ্বুদ্ধ করবে, বিশেষ করে তরুণদের। কারণ বর্তমান প্রজন্ম তাদের খেলা দেখেনি।’
বিশ্বের যেখানেই খেলা হোক; বাংলাদেশ থাকলে থাকেন টাইগার শোয়েবও। এই টুর্নামেন্টেও যথারীতি উপস্থিত আছেন তিনি। উচ্ছ্বাসিত কণ্ঠে বলেন, ‘আমরা তাদের খেলা খুব একটা দেখিনি, এখানে এমন একটা আয়োজনে আসতে পেরে ভালো লাগছে। তামিম ভাই-মুশফিক ভাইরা আমাকে চেনেন মাঠে থাকার কারণে। কিন্তু এখন দেখি তারাও আমাকে চেনেন এ জন্য আরও বেশি ভালো লাগছে।’
‘লিজেন্ডস চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি-(টেন ডট টেন) পাওয়ার্ড বাই ওয়ালটন’ এর আয়োজক এসিই ও ক্রিকবল। টুর্নামেন্টটি হচ্ছে টেন-টেন ফরম্যাটে। প্রতিটি ইনিংসের দৈর্ঘ্য ১০ ওভার ১০ বল অর্থাৎ মোট ৭০ বল। বাংলাদেশ জাতীয় দল কিংবা ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ খেলা সাবেক ক্রিকেটাররা অংশ নিচ্ছেন এই টুর্নামেন্টে। তবে ৩৫ বছরের নিচের কেউ অংশ নিতে পারছেন না।
টুর্নামেন্টের ৬টি দল হলো একমি স্ট্রাইকার্স, জেমকন টাইটানস, নারায়ণগঞ্জ ওয়ারিয়র্স, এক্সপো রেইডার্স, বৈশাখী বেঙ্গলস ও জা’দুবে স্টার্স।
এমন টুর্নামেন্টের সঙ্গে জড়িত থাকা সম্মানের বলে জানিয়েছেন ওয়ালটনের ফার্স্ট এডিশনাল ডিরেক্টর রবিউল ইসলাম মিল্টন। তিনি বলেন, ‘আজকের বাংলাদেশের যে ক্রিকেট, এটা যাদের মাধ্যমে হয়েছে, যারা ক্রিকেটের ভিত্তি গড়ে দিয়েছেন তারা এখানে খেলছেন। তাদের স্পন্সর করা ওয়ালটনের জন্য সম্মানের। তাছাড়া এই টুর্নামেন্ট থেকে অর্জিত একটা অঙ্ক দুস্থ ক্রিকেটারদের জন্য দান করা হবে। এটা মহৎ উদ্যোগ। পাশাপাশি বিজনেস স্ট্র্যাটেজি হিসেবে কোম্পানির ব্র্যান্ডিংতো আছে। তাই এই টুর্নামেন্টে আমরা এসেছি। সাবেক ক্রিকেটারদের নিয়ে এর আগেও তিনবার মাস্টার্স ক্রিকেট হয়েছে সেই আসরগুলোতেও ওয়ালটন স্পন্সর করেছিল।’
আয়োজক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী ইশতিয়াক সাদেক বলেন, ‘অবশ্যই ভালো লাগছে, বাংলাদেশের সব সাবেক ক্রিকেটারদের নিয়ে এটা আয়োজন করছি। ফরম্যাটটা শর্ট করার কারণ হচ্ছে খেলোয়াড়দের সবাইতো ফিট না। টি-টেন তো আমরা আগেও খেলেছি। তবে আমার কাছে মনে হয় টেন-টেন জনপ্রিয় হবে।’
টুর্নামেন্ট থেকে অর্জিত অর্থ ব্যয় করা হবে অস্বচ্ছল ও বিপদগ্রস্থ ক্রিকেটারদের সাহায্যার্থে। ২০ ফেব্রুয়ারি ফাইনালের ফাঁকে পেশাদার ক্রিকেটারদের সংগঠন- ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (কোয়াব) হাতে তুলে দেওয়া হবে সেই অর্থ।
খুলনা গেজেট/কেএম