“সাংবাদিকগণ জাতির বিবেক, সমাজের দর্পন। তাই তাদের মধ্যে কোন বিভেদ ও অনৈক্য সৃষ্টি হলে এতে একদিকে তাদের পেশাগত যেমন সমস্যা হয়, তেমনি সমাজের জন্য অকল্যাণ বয়ে আনে। তাই সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে কোন বিভেদ ও অনৈক্য কাম্য নয়।” মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য নিয়ে আপত্তি দিয়ে রফিউল ইসলাম টুটুলের দায়ের করা মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে শ্রম আদালত খুলনার চেয়ারম্যান জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ আরাফত হোসেন একথা উল্লেখ করেছেন। সাড়ে ছয় বছর ধরে মামলার বিচারকার্ষ শেষে বাদীর আবেদন খারিজ করে নির্বাচিত কমিটিকে আগামী ৬০ দিনের মধ্যে নতুন নির্বাচনের আদেশ দিয়েছেন।
শ্রম আদালতের রেজিষ্ট্রার আজ বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) স্বাক্ষর করা রায়ের কপি হতে জানা যায়, বিগত ২৮/০৬/২০১৪ তারিখের নির্বাচন অকার্যকর বেআইনী এবং ২২ জন ভোটার তালিকাভুক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন রফিউল ইসলাম টুটুল। এই মামলায় মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাসান আহমেদ মোল্লা এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রবীণ সাংবাদিক কাজী মোতাহার রহমানসহ ৫ জনকে বিবাদী করা হয়।
দীর্ঘ শুনানী শেষে শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান জেলা ও দায়রা জজ আদালত সৈয়দ আরাফত হোসেন দীর্ঘ পর্যবেক্ষণ সহ সাত পৃষ্ঠার কম্পিউটার টাইপ করা রায় ২২ ডিসেম্বর বিকেলে ঘোষণা করেন। রায়ের আদেশে তিনি জানান, “অত্র মামলাটি দোতরফা সূত্রে নামঞ্জুর ভাবে খারিজ করা হইল। এতদ্বারা খুলনা মেট্রোপালিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন [রেজিষ্ট্রেশন : ১০৬৭] এর কার্যকরী কমিটির নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের গঠণতন্ত্রের ২৩[ঙ] ধারার বিধান অনুযায়ী অত্র রায়ের পর্যাবেক্ষণের আলোকে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিটি গঠন করিয়া আগামী ৬০ দিনের মধ্যে বিধি বিধান মোতাবেক নির্বাচন অনুষ্ঠানের নির্দেশ দেয়া গেল। এ বিষয় সার্বিক তত্ত্বাবধান ও প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহনের জন্য পরিচালক ও রেজিষ্ট্রার অব ট্রেড ইউনিয়ন, শ্রম অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া গেল।”
রায়ে বিচারক সৈয়দ আরাফত হোসেন উল্লেখ করেন যে, “নথি পর্যালোচনায় দেখা যায় যে ২৮/০৬/২০১৪ তারিখেরে নির্বাচিত কমিটির মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। প্রতিপক্ষ দাবি করেন যে কার্যনির্বাহী কমিটির উক্ত নির্বাচন বাতিল হইলে ট্রেড ইউনিয়নের গঠনতন্ত্র শূন্যতার মধ্যে পড়িবে এবং উক্ত কমিটির আর্থিক ও প্রশাসনিক বিষয় বিভিন্ন সময় যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন তা সম্পর্কে নানাবিধ জটিলতার সৃষ্টি হবে।”
বিচারক আরো বলেন, “নথি পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, সাংবাদিক ইউনিয়ন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের অধিনস্থ হইলেও ইহা নিয়ে যুক্তিতর্কের শুনানীকালে উভয় পক্ষের মত পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। এখানে বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য যে, সাংবাদিকগন জাতির বিবেক, সমাজের দর্পন। তাই তাদের মধ্যে কোন বিভেদ ও অনৈক্য সৃষ্টি হলে এতে তাদের পেশাগত যেমন সমস্যা হবে তেমনি সমাজের জন্য অকল্যাণ বয়ে আনে। তাই সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে কোন বিভেদ ও অনৈক্য কারোই কাম্য নয়।”
এই রায়ের ফলে ২০১৪ সালে ২৮ জুন নির্বাচিত কমিটির সভাপতি মো: আনোয়ার আহমেদ মৃত্যুবরণ করায় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আতিয়ার পারভেজ এবং সাধারণ সম্পাদক হাসান আহমেদ মোল্লা বৈধ কমিটি বলে বিবেচিত হল। একই ভাবে কাজী মোতাহার রহমান প্রধান নির্বাচন কমিশানার হিসেবে নির্বাচন পরিচালনা সঠিক বলে বিবেচিত হল। আতিয়ার পারভেজ-হাসান মোল্লার নেতৃত্বাধীন কার্যকরী পরিষদ গঠনতন্ত্র মোতাবেক ৬০ দিনের ভেতর নতুন নির্বাচন দিবেন।
খুলনা গেজেট / এআর