নারী নির্যাতন আইনে করা মামলায় হাইকোর্টে আগাম জামিন পেয়েছেন একাত্তর টিভির সাংবাদিক শাকিল আহমেদ। বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার বিকেলে এ আদেশ দেয়।
আদালতে আসামি শাকিলের পক্ষে শুনানি করেন সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা। মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী এম সারোয়ার হোসেন বলেন, ‘হাইকোর্টের এই জামিন আদেশের বিরুদ্ধে আমরা আপিলে যাব।’
রাজধানীর গুলশান থানায় বৃহস্পতিবার রাতে ৭১ টিভির বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন আইনে মামলাটি করেন এক নারী চিকিৎসক।
মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারা ও দণ্ডবিধির ৩১৩ ধারায় শাকিল আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়, শাকিল ওই নারী চিকিৎসককে নির্যাতন করেছেন এবং তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গর্ভপাতে বাধ্য করেছেন। গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবুল হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলা করার পর শারীরিক পরীক্ষার জন্য ওই নারীকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। রাত সোয়া ১২টার দিকে তাকে হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করা হয়।
গত ৩ নভেম্বর শাকিল আহমেদের বিরুদ্ধে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে প্রতারণার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেন ওই নারী। রাজধানীর সেগুনবাগিচার একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি ও ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে সংবাদ সম্মেলনটি করার চেষ্টা করেও তিনি ব্যর্থ হন।
ওই নারী জানান, তিনি রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) কর্মরত ছিলেন। পাশাপাশি সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে কয়েকটি টেলিভিশনে কাজ করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, ‘৭-৮ মাস আগে চাকরির জন্য তিনি শাকিল আহমেদের কাছে যান। সেই সূত্রে দুজনের কথা হয় এবং একপর্যায়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে, যেটি শারীরিক সম্পর্কে গড়ায়।’
একপর্যায়ে ওই নারী গর্ভবতী হয়ে পড়েন। তিনি অভিযোগ করেন, এ সময় শাকিল তাকে ভ্রূণ নষ্ট করতে চাপ দেন।
সংবাদ সম্মেলনে ওই নারী বলেন, ‘সে (শাকিল) আমার সঙ্গে বিভিন্নভাবে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। এ সময় আমি গর্ভবতী হয়ে পড়ি। বিষয়টি জানালে সে আমাকে বাচ্চা নষ্ট করতে বলে। ওই সময় আমি উচ্চতর ডিগ্রির জন্য বাচ্চা পেটে নিয়ে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে চলে যাই। তারপর অসুস্থ হয়ে পড়ি।
‘যুক্তরাজ্য যাওয়ার পর তার আশ্বাসেই বাংলাদেশে ফিরে আসি। দেশে ফেরার সময় বিমানের ট্রানজিট রুট কাভারে আসার পর আমার ভয়াবহ রক্তপাত শুরু হয়। ১৭ ঘণ্টা চেষ্টার পর রক্তপাত বন্ধ হয় ও বাচ্চা রাখা হয়। এরপর আমি দেশে আসার পর বাচ্চা নষ্ট করতে বাধ্য হই।’
ভ্রূণ নষ্ট করার পর বিয়ের আশ্বাস দিলেও শাকিল তা রাখেননি বলে অভিযোগ ওই নারীর। তিনি বলেন, ‘উল্টো ও আমার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখতেই অসম্মতি জানায়।’
শাকিল আহমেদের কারণে আইইডিসিআরে তার চাকরিটি ৩ নভেম্বর চলে যায় বলেও দাবি করেন ওই নারী। তিনি বলেন, ‘আমি প্রায় ২০ লাখ টাকা খরচ করে যুক্তরাজ্য গিয়ে তার আশ্বাসে দেশে ফিরে আসি। এরপর কোনো এক অনলাইন পত্রিকার সাংবাদিক বিষয়টি জানতে পারেন। এ কথা জানার পর শাকিল আমাকে মিথ্যা অপবাদ দেয় ও কুৎসা রটনা করে। বলা হয়, আমার সঙ্গে বিভিন্ন মানুষের সম্পর্ক রয়েছে এবং এ কারণে আমার সরকারি চাকরি চলে গেছে।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে শাকিল আহমেদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
খুলনা গেজেট/ এস আই