খুলনা প্রেসকাবের সাবেক সভাপতি মানিক সাহার ১৯তম হত্যাবার্ষিকী আজ রবিবার (১৫ জানুয়ারি)। ২০০৪ সালের এদিনে রিকশায় করে আহসান আহমেদ রোডে নিজ বাড়িতে যাওয়ার সময় খুলনা প্রেসকাবের অদূরে চরমপন্থীদের বোমা হামলায় নিহত হন তিনি।
সাংবাদিক মানিক সাহা দৈনিক সংবাদ ও নিউএজ পত্রিকার খুলনাস্থ জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, ইটিভি প্রতিনিধি ও বিবিসি বাংলা’র খণ্ডকালীন সংবাদদাতা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মানিক সাহা ২০০৯ সালে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন।
খুলনা প্রেসকাবের সাবেক সভাপতি সাংবাদিক মানিক সাহা হত্যাবার্ষিকী উপলে খুলনা প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে প্রেস ক্লাবের শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে মাল্যদান ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। একইভাবে খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নও (কেইউজে) নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এছাড়া মানিক সাহার পরিবারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সিপিবিসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন কর্মসূচি পালন করবে।
সাংবাদিক মানিক সাহা হত্যাকাণ্ডের পর সেদিন রাতেই খুলনা থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) রণজিৎ কুমার পাল বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয়দের আসামি করে দু’টি মামলা দায়ের করেন। ২০১৬ সালে এ হত্যা মামলায় ৯ জনকে যাবজ্জীবন সাজা দেন খুলনার দ্রুত বিচার আদালত। হত্যা মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেওয়া হয় ২০০৪ সালের ২০ জুন। সেসময়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন গোয়েন্দা বিভাগের পরিদর্শক কাজী আতাউর রহমান এবং খুলনা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোশারফ হোসেন। আসামি ছিলেন ১৩ জন।
একই আসামিদের অভিযুক্ত করে বিস্ফোরক মামলার অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয় ২০০৭ সালের ১৯ মার্চ। তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন খুলনা সদর থানার উপ-পরিদর্শক আসাদুজ্জামান। পরে হত্যা মামলাটির অধিকতর তদন্ত হয়। এই অধিকতর তদন্তে সম্পূরক চার্জশিট জমা পড়ে ২০০৭ সালের ২ ডিসেম্বর। তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক চিত্তরঞ্জন পাল। তিনি আরও একজন আসামি যোগ করেন। মোট আসামি হয় ১৪ জন। বিচার কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগেই আসামিদের মধ্যে তিন জন ক্রসফায়ারে মারা যায়। পরে ১১ আসামি নিয়ে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।
আসামিদের মধ্যে তিনজন ক্রসফায়ারে নিহতরা হলেন- আব্দুর রশিদ, আলতাফ ওরফে বিডিআর আলতাফ এবং মাহফুজ ওরফে মফিজ ওরফে নাসিম ওরফে শফিকুল ইসলাম। মামলায় আরো নাম উঠে আসে সুমন ওরফে নূরুজ্জামান, আকরাম হোসেন, আলী আকবর শিকদার, মো. হাই ইসলাম ওরফে কচি, বেলাল, সাত্তার, ওমর ফারুক, সরোয়ার হোসেন ওরফে সাকা ও মিঠুন।
২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর খুলনা বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ এম এ রব হাওলাদার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ১১ আসামির মধ্যে ৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ১০ হজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের দণ্ড দেওয়া হয়। হত্যা মামলায় এসব আসামিদের সাজা হলেও বিস্ফোরক মামলায় কোনও আসামিকে সাজা দেওয়া যায়নি।
সাজপ্রাপ্তরা হলেন সুমন ওরফে নুরুজ্জামান, বুলবুল ওরফে বুলু, আকরাম ওরফে বোমারু আকরাম, আলী আকবর ওরফে শাওন, সাত্তার ওরফে ডিস্কো ছাতার, বেল্লাল, মিথুন, সরোয়ার ওরফে সরো, সাফায়াত ওরফে শওকত ওরফে সাকা পলাতক। এ মামলায় দু’জনের বেকসুর খালাসপ্রাপ্ত হলেন ওমর ফারুক ওরফে কচি ও হাই ইসলাম ওরফে কচি।
খুলনা গেজেট/কেডি/এমএম