খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ কার্তিক, ১৪৩১ | ২৩ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  সাবেক মন্ত্রী আমুর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আবেদন
  তেলবাহী ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত, খুলনার সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ

সাঁতারের উজ্জ্বল নক্ষত্র ৩০ স্বর্ণ জয়ী মোদাচ্ছের হোসেন

একরামুল হোসেন লিপু

মোঃ মোদাচ্ছের হোসেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সাঁতারের উজ্জ্বল নক্ষত্র। পূর্ব পাকিস্তানের সুনাম এবং সম্মান বয়ে আনা একজন রেকর্ডধারী জাতীয় সাঁতারু ছিলেন। সমসাময়িক সময়ে খুলনা বিভাগে সাঁতারে তার মত অর্জন দ্বিতীয় কেউ করতে পারেনি।

১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত টানা ৫ বার জাতীয় পর্যায়ে সাঁতার প্রতিযোগিতায় পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তান মিলে পাকিস্তানের চ্যাম্পিয়ন ছিলেন। এছাড়াও পূর্ব পাকিস্তান প্রভিনশিয়াল ইন্টার স্কুল স্পোর্টস এসোসিয়েশন কর্তৃক আয়োজিত সাঁতার প্রতিযোগিতায় তিনি একাধিকবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন জেলা এবং বিভাগীয় পর্যায়ে। সাঁতারের ৫ টি ইভেন্টে অংশ নিয়ে তিনি তার খেলোয়াড়ি জীবনে ৩০ টি স্বর্ণপদকসহ অর্ধশতাধিক পদক, পূর্ব পাকিস্তান ক্রীড়া সংস্থা এবং পাকিস্তান ক্রীড়া সংস্থা থেকে জেলা, বিভাগীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে একাধিক প্রশংসাপত্র অর্জন করেছেন।

Oplus_131072

মোদাচ্ছের হোসেন ছোটবেলা থেকে সাঁতারের প্রতি প্রবল আগ্রহী ছিলেন। ১৯৬২ সালে দৌলতপুর মুহসিন স্কুলের ৭ম শ্রেণীর ছাত্র থাকাকালীন নিজ জন্মভূমি খুলনার দিঘলিয়ার কূলঘেঁষে বয়ে যাওয়া ভৈরব নদীতে সাঁতারের অনুশীলন শুরু করেন। পাশাপাশি এলাকার গোয়ালপাড়া গ্রামের সরকারি পুকুর, মরহুম মজিদ সাহেবের ডক ইয়ার্ডের পুকুর এবং বিএল কলেজের পুকুরেও নিয়মিত সাঁতারের অনুশীলন করতেন। লক্ষ্য একটাই জাতীয় পর্যায়ে সাঁতারে চ্যাম্পিয়ন হওয়া।

Oplus_131072

জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্নের শুরুটা হয় ১৯৬৬ সালে ইন্টার স্কুল স্পোর্টস এসোসিয়েশন, খুলনা আয়োজিত সাঁতার প্রতিযোগিতায় প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জনের মধ্য দিয়ে। একই বছর পাকিস্তানের পেশোয়ারে অনুষ্ঠিত জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে রৌপ্য পদক লাভ করেন। এছাড়াও একই বছর ঢাকায় অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ব্যাক স্ট্রক এন্ড রিলে ইভেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি সাঁতারে ৪×১০০ মিটার ব্যক্তিগত রিলেতে রেকর্ড তৈরি করেন। ১৯৬৭ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান ক্রীড়া সংস্থা আয়োজিত ত্রয়োদশ সাঁতার প্রতিযোগিতায় মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের পক্ষে অংশগ্রহণ করে ১০০ মিটার ব্যাক স্ট্রক (পুরুষ) প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেন।

একই বছর ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত

পূর্ব পাকিস্তান প্রভিনশিয়াল ইন্টার স্কুল স্পোর্টস এসোসিয়েশন আয়োজিত সাঁতার প্রতিযোগিতায় ১০০ মিটার ব্যাক স্ট্রকে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৯৬৭ সালের ২৪ আগস্ট খুলনায় অনুষ্ঠিত বিভাগীয় ইন্টার স্কুল স্পোর্টস এসোসিয়েশন কর্তৃক আয়োজিত সাঁতার প্রতিযোগিতায় ২০০ মিটার ব্যাক স্ট্রক গ্রুপ রিলেতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। এরপর পর্যায়ক্রমে তিনি ১৯৭০ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ এবং ‘৭৩ সালে বাংলাদেশ ক্রীড়া সংস্থা আয়োজিত সাঁতার প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন।

১৯৭৩ সালে খুলনা বিভাগীয় সাঁতারের কোচ মনোনীত হন। সাঁতারের কোচ মনোনীত হওয়ার পর তার নেতৃত্বে নিজ মাতৃভূমি দিঘলিয়ায় সুইমিং ক্লাব এবং ওয়াটার পোলো টিম গঠিত হয়। তার পৃষ্ঠপোষকতা এবং অনুশীলনে নিজের ছোট তিন ভাই মোজাম্মেল হোসেন, মোফাজ্জেল হোসেন, মরহুম মোক্তাদের হোসেনসহ দিঘলিয়া গ্রামের খান জিন্নাত হোসেন, খান শওকাতুল আলম, মরহুম খান ফজলুল হক, খান শাহাজান, শেখ আবুল বাশার, হানিফ সরদার, শেখ আলাউদ্দিন, খান সাবু হোসেনসহ এলাকার অনেকে ওই সময় ঐতিহ্যবাহী ওয়াই এম এ ক্লাবের নিয়মিত সাঁতারের সদস্য হিসেবে জেলা এবং বিভাগীয় পর্যায়ে সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ব্যাপক সফলতা দেখান। এ সময় টিম ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তৎকালীন ওই এলাকার কৃতি ক্রীড়াবিদ খান নজরুল ইসলাম।

Oplus_131072

খুলনা বিভাগীয় কোচের দায়িত্বে পালনের পাশাপাশি তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাঁতারু টিমের ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব পালন করেন। এবং ওই বছর অনুষ্ঠিত ইন্টার বিশ্ববিদ্যালয় সাঁতার প্রতিযোগিতায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে।

সাঁতারের জাতীয় সংগঠক হিসেবে তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় ঢাকার মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব এবং ভিক্টোরিয়া ক্লাবে সাঁতারের টিম গঠিত হয়। তার নেতৃত্বে টিম গঠনের পর ক্লাব দু’টি জাতীয় পর্যায়ে সাঁতার প্রতিযোগিতায় অনেক সুনাম এবং কৃতিত্ব অর্জন করতে সক্ষম হয়।

১৯৭৮ সালে সাঁতারু হিসেবে খুলনার শিরোমনি বাদামতলা এলাকায় অবস্থিত ক্যাবল শিল্প লিমিটেডে সুইমিং পুলের চাকুরীতে যোগদান করেন। ক্যাবল ফ্যাক্টরিতে যোগদানের পর তার সহযোগিতায় খুলনা বিভাগীয় ওয়াটার পোলো এবং সুইমিং প্রতিযোগিতা এ ভ্যেনুতে অনুষ্ঠিত হয়।

মোদাচ্ছের হোসেন ২ বছর ক্যবল শিল্প লিমিটেডে চাকরি করার পর চাকুরীরত অবস্থায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েতের কুয়েত গার্ল ক্যাবলে সুপারভাইজার হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন।

Oplus_131072

পরবর্তীতে মধ্যপ্রাচ্যে ইরাক যুদ্ধের সময় দেশে চলে আসেন। বর্তমানে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন দৌলতপুর থানার রেলিগেট মহেশ্বরপাশা নিজ বাড়িতে। মোদাচ্ছের হোসেন একজন ভালো মানের সাঁতার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তৎকালীন রাশিয়ার একজন দক্ষ সাঁতারুর কোচের কাছে সাঁতারের উপর তিন মাসের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

জাতীয় রেকর্ডধারি সাঁতারু মোদাচ্ছের হোসেন বলেন, একজন ভালো সাঁতারও হতে হলে অবশ্যই তাকে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। প্রশিক্ষণের কোন বিকল্প নেই। তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশের সুইমিং ফেডারেশনের দুর্বলতা এবং ব্যর্থতার কারণে নতুন করে আর কোন সাঁতারু আমাদের খুলনাঞ্চলে থেকে তৈরি হচ্ছে না। তিনি সুইমিং ফেডারেশনকে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান।

মোদাচ্ছের হোসেনের জন্ম এবং বেড়ে ওঠা খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী দিঘলিয়া গ্রামে। একজন সাঁতারু হিসেবে তিনি এলাকায় বিভিন্ন জনহিতকর কাজের সাথেও সম্পৃক্ত থেকেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে মোদাচ্ছের হোসেন ২ পুত্র এবং এক কন্যা সন্তানের গর্বিত পিতা।

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!