খুলনার রূপসা উপজেলায় পরিত্যক্ত সরকারি ভবন বিক্রিতে সিন্ডিকেটের কারণে ওপেন নিলামে সর্বোচ্চ মূল্য উঠছে না। প্রভাবশালীদের কাছে জিম্মি হয়ে সরকারি পরিত্যক্ত ভবন নামমাত্র দরে বিক্রি করতে দেখা গেলেও অজানা কারণে মুখ খুলছে না প্রশাসন। সিন্ডিকেটের প্রভাবে সর্বোচ্চ মূল্যে পরিত্যক্ত ভবন কেনার স্বদিচ্ছা থাকা সত্বেও নিলামে অংশগ্রহণ করতে পারছে না অনেকেই। ফলে একদিকে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে রাজস্ব থেকে, অন্যদিকে কতিপয় প্রভাবশালীর হচ্ছে পকেট ভারী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি ১০টি স্কুলের পরিত্যক্ত ভবন বিক্রিতে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ওপেন নিলামের ব্যবস্থা করা হয়। যা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ক্রেতারা ক্রয় করে ওই দিনই এর তিন/ চার গুণ বেশি টাকায় বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে সরকারি মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে শুভাঙ্করের ফাঁকি দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, উপজেলার ১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন পরিত্যক্ত হওয়ায় নিলামে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় উপজেলা প্রশাসন। তারই ধারাবাহিকতায় স্থানীয় পত্রিকায় উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ আব্দুর রব স্বাক্ষরিত প্রকাশ্যে নিলামে বিক্রির জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে ২৬ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস কক্ষে আগ্রহী প্রার্থীদের আসার আহবান জানানো হয়। সে মোতাবেক বিভিন্ন স্থান থেকে শতাধিক আগ্রহী নিলাম ক্রেতা সেখানে উপস্থিত হলেও ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী কতিপয় ব্যক্তি সিন্ডিকেট করে সেখানে কাউকে ঢুকতে দেয়নি। বিধি মোতাবেক সর্বোচ্চ দরদাতাকে নিলাম দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হয়নি। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নামমাত্র দামে কিনে নেয় ভবনগুলি। যার কারণে বিপুল পরিমাণ অর্থ রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে সরকার। বিষয়টি নিয়ে জনমনে নানান প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
সূত্র মতে, চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সরকারি ভবনের ধার্যকৃত ৬৫ হাজার ১৪৪ টাকার স্থলে ৬৬ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য আব্দুল মজিদ ফকির, উপজেলা সদর আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের ধার্যকৃত ৬২ হাজার ৯ টাকার স্থলে ৬৪ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে ইউপি সদস্য ও আওরঙ্গজেব স্বর্ণ, আনন্দনগর আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের ধার্যকৃত ৬২ হাজার ৯ টাকার স্থলে ৬৫ হাজার টাকা দিয়ে সাবেক ইউপি সদস্য ও আওয়ামীলীগ নেতা তাহিদ হোসেন মোল্লা, পাথরঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের ধার্যকৃত ৫৯ হাজার ৯৫৭ টাকার স্থলে ৬২ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোর্শেদুল আলম বাবু, মায়রাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের (পিছনের দেওয়াল বাদে) ধার্যকৃত ৫৭ হাজার ২৯৬ টাকার স্থলে ৬০ হাজার টাকা দিয়ে মো. আলী জিন্নাহ, নন্দনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের ধার্যকৃত ৬০ হাজার ৪৮৭ টাকার স্থলে ৬১ হাজার ৫০ টাকা দিয়ে সরদার মিজানুর রহমান, সিন্দুরডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের ধার্যকৃত ৫৩ হাজার ৫৯৯ টাকার স্থলে ৫৫ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে ঘাটভোগ ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা ওয়াহিদুজ্জামান মিজান, বাগমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের (পিছনের দেওয়াল বাদে) ধার্যকৃত ৫১ হাজার ১৪৮ হাজার টাকার স্থলে ৫৪ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে সাবেক ফুটবলার হামিদ খান ভাসানী, অবিনাশচন্দ্রশীল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের ধার্যকৃত ৬২ হাজার ৯ হাজার টাকার স্থলে ৬৪ হাজার টাকা দিয়ে ঘাটভোগ ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, রাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের ধার্যকৃত একলাখ ৩৯ হাজার ২১৬ টাকার স্থলে একলাখ ৪৪ হাজার টাকায় উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক এবিএম কামরুজ্জামান ভবন ক্রয় করে নেন। তবে নিলাম বিজ্ঞপ্তিতে থাকা ২টি স্কুলের গাছ কেউ ক্রয় করেনি।
এর আগে স্থানীয় এক প্রভাবশালী উপজেলা পরিষদের বিশাল দুইতলা ভবন সিন্ডিকেট করে মাত্র তিন লাখ টাকায় ক্রয় করে ১২ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেয় বলেও জনশ্রুতি রয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য আব্দুল মজিদ ফকির বলেন, আমি সর্বোচ্চ দর দিয়ে চাঁদপুর প্রাইমারি ভবন কিনেছি। জিয়ার কাছে বিক্রি করে দিয়েছি। তবে কত মূল্যে বিক্রি করেছেন এটা জানাতে অসম্মতি জ্ঞাপন করেন।
স্বল্প বাহিরদিয়ার জিয়া জানান, ডাকের মাধ্যমে চাঁদপুরেরটিসহ ৪টি কিনেছি। কত মূল্যে কিনেছেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই মুহুর্তে স্মরণ নেই। পরে খাতা দেখে জানাবো। তিনি আরও জানান, প্রথমে সরকারি ডাক হয়। পরে দলীয় ফোরামে ডাক হয়। আর সেখান থেকে আমরা কিনি।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী এস.এম.ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ইউএনও স্যার ও শিক্ষা অফিসারের সাথে সমন্বয় করে মার্কেট রেটের সাথে মিল রেখেই পরিত্যক্ত ভবনের সরকারি মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। নিলামের দিন আমিও উপস্থিত ছিলাম, সর্বোচ্চ দর দাতার কাছে বিক্রি করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুবাইয়া তাছনিম বলেন, আমার কক্ষের ভিতরে ও বাইরে অবস্থানকারী সকলকে নিলামে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। আমি ভিডিও করে রেখেছি, যেসব সাংবাদিক ছিল তারাও ভিডিও করে রেখেছেন। এরপরেও এসব অভিযোগ কেন দিচ্ছে জানিনা। আর সর্বনিম্ন সরকারি দর যথাযথ হয়েছে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা ইঞ্জিনিয়ার সাহেব বলতে পারবেন। তারাই এস্টিমেট দেন।