খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ পৌষ, ১৪৩১ | ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে ঢাকার চিঠি গ্রহণ করেছে দিল্লি, নিশ্চিত করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহকারী মুখপাত্র
  ২০২৫ সালে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছুটি ৭৬ দিন, একটানা বন্ধ ২৮ দিন

সরকারের ১০০ দিন : প্রত্যাশা পূরণ হয়নি, সমর্থন রয়েছে সবার

গেজেট ডেস্ক

জুলাই পেরিয়ে আগস্ট, আন্দোলন-সংঘর্ষ-রাজনৈতিক পালাবদলে উত্তাল দেশ। ৫ আগস্ট দুপুরে তীব্র জল্পনা; সেনাপ্রধানের কথায় স্পষ্ট হয়, শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করছেন; পদত্যাগ করেছেন বলেও শোনা গেল। তারপরেই ছাত্র-জনতা উল্লাসে ফেটে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখা হতে থাকে, ‘স্বাধীনতার দিন, ৩৬ জুলাই’ প্রভৃতি। আবির্ভূত হয় নতুন বাংলাদেশ।

সে বিজয়ের তিন মাস পেরিয়ে গেছে। গতকাল ১৫ নভেম্বর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০তম দিন পূর্ণ হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের চাওয়া অনুযায়ীই দায়িত্ব নিয়েছিলেন ড. ইউনূস ও অন্য উপদেষ্টারা। কতটা আশা পূরণ করতে পেরেছে এ সরকার? জুলাই অভ্যুত্থানের আকাক্ষা কতটা পূরণ হয়েছে এ সময়ে?

সমন্বয়করা বলছেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের যে আকাক্সক্ষা তা এখনো পূরণ করতে পারেনি বর্তমান সরকার। ফ্যাসিবাদের বিলোপ ঘটেনি, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তও হয়নি। যারা শহীদ হয়েছে এবং যারা আহত হয়েছে তাদের পাশে দাঁড়াতে এই ১০০ দিনে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। অথচ এটি করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আহতরা রাজপথে নামতে বাধ্য হয়েছে, যা হওয়ার কথা ছিল না। এছাড়া গণহত্যার সঙ্গে যারা জড়িত, ফ্যাসিবাদের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে তিন মাসেও দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে আশাহত ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। তবু তারা আস্থা রাখছেন, তারা পাশে থাকবেন অন্তর্বর্তী সরকারের।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তিন মাসের বেশি সময়ে আহত-নিহতদের নিয়ে সরকারের যে ভূমিকা রাখা দরকার ছিল সেটা তারা রাখতে পারেনি। শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের যে ধরনের বিচারের পদক্ষেপ নেওয়ার দরকার ছিল তা করা হয়নি। এ কারণে ছাত্র-জনতার মধ্যে অসন্তুষ্টি রয়েছে। বিশেষ করে দ্রব্য-সিন্ডিকেট ভাঙার লক্ষণীয় উদ্যোগ চোখে পড়েনি। সরকারের সিস্টেমেটিক্যালি কাজ করার প্রবণতা কম; জনসম্পৃক্ত থাকার চেষ্টাও কম। বিষয়গুলো আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে জানিয়েছি কিন্তু সরকার, বলা যায়, নীরব। বিভিন্ন ধরনের সিন্ডিকেট তৈরি হচ্ছে এবং সিন্ডিকেট বাণিজ্য বেশ শক্তিশালী। সরকার যদি এ রকম দুর্বল হয় তাহলে অভ্যুত্থান সফল হবে কি না আমরা সন্দিহান।’

সরকারের ছাত্র-জনতাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে ঘাটতি রয়েছে উল্লেখ করে সমন্বয়ক রিফাত রশিদ বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতেই অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। এ কারণে এ সরকারের কাছে মানুষ অনেক কিছু পেতে চায়। চাহিদার কিছুটা পূরণ হলেও এখনো ঘাটতি অনেক। যে আকাক্সক্ষার ভিত্তিতে এ গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে সে আকাক্সক্ষা পূরণ করতে পারছে না সরকার। তারা এমন সব মানুষকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়ে আসছে যারা ফ্যাসিবাদী আমলে সুবিধাভোগী ছিল। আমি মনে করি, সেকেন্ড প্রক্লেমেশন অব রিপাবলিক প্রকাশ করা উচিত। এ ঘোষণার মধ্য দিয়েই সংবিধান বাতিল হবে এবং নতুন বাংলাদেশ গঠিত হবে। সরকারের কাছে আমাদের দাবিÑ নতুন সংবিধান, নতুন রাষ্ট্রকাঠামো এবং নতুন বাংলাদেশ।’

জনগণ এখনো সরকারের প্রতি আস্থা রেখেছে বলে মনে করেন আরেক সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার। তিনি বলেন, ‘গত ১০০ দিনে এ সরকারের কাছে মানুষের আশা অনেক বেশি তৈরি হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই তারা আকাক্সক্ষা পূরণ করতে পারেনি। ফ্যাসিবাদী কাঠামো অনেক জায়গায় রয়ে যাওয়ায় সরকারের জন্য কাজ করাও কঠিন ছিল। তবে জনগণ সরকারের প্রতি আস্থা রাখছে। তারা শত শত শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে রক্ষার শেষ ভরসাস্থল হিসেবে ছাত্রদের ও অন্তর্বর্তী সরকারকে দেখছে।’

তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের পরে আমরা দেখেছি সরকার ও আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। দীর্ঘ আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সময়ে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করা হয়েছে; এ টাকা এখন আমাদের বিরুদ্ধে ইনভেস্ট করা হচ্ছে। তারা নেগেটিভ মার্কেটিং করার চেষ্টা করছে। তবে আশার দিক হলো জনগণ এসব বুঝে। এ সরকার যেন জুলাই বিপ্লবের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ থাকে। যেসব মানুষ জীবন দিয়েছে তারা শুধু ক্ষমতার পরিবর্তন চায়নি, তারা বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ চেয়েছে।’

ফ্যাসিবাদী সিস্টেমকে ভাঙা প্রধান চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে সমন্বয়ক তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ছাত্র-জনতা যেমন আশা করেছিলাম সরকার সেভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেনি বলেই আমরা মনে করছি। প্রচলিত সিস্টেম না ভাঙলে আমাদের আকাক্সক্ষা পূরণ হবে না। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলুপ্ত এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত হবে না।’

সরকার ব্যর্থ হলে পুরো বিপ্লব ব্যর্থ হবে উল্লেখ করে আরেক সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম বলেন, ‘গত তিন মাসে জনগণের আকাক্সক্ষা অনুযায়ী সরকার ভূমিকা রাখতে পেরেছে কি না সন্দেহ। এ সরকারের প্রধান দায়িত্ব ছিল ফ্যাসিবাদীব্যবস্থা বিলুপ্ত করা, সেটি এখনো হয়নি। আমরা দেখেছি বেশ কয়েকটি সংস্কার কমিশন হয়েছে কিন্তু সে সংস্কারের রূপরেখা কী গত ১০০ দিনেও তা স্পষ্ট হয়নি। যা উচিত তা হলো জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষাকে সামনে রেখে সংস্কারের পূর্ণ রোডম্যাপ প্রকাশ করা। আমরা চাই, এ সরকার সফল হোক। আমরা পাশে আছি।’

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!