খুলনা, বাংলাদেশ | ৩০ কার্তিক, ১৪৩১ | ১৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  রাজশাহীতে বাসচাপায় দুই মোটরসাইকেল আরোহীর নিহত
  ফ্যাসিবাদের শেকড় অনেক দূর ছড়িয়ে গেছে : আইন উপদেষ্টা

সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি : ভাতাপ্রাপ্ত ৪৩ শতাংশই অযোগ্য

গেজেট ডেস্ক

সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় যে ব্যক্তিদের সুবিধা দেওয়া হয় তার প্রায় ৪৩ শতাংশই ভাতা পাওয়ার অযোগ্য। বিগত সরকারগুলোর আমলে উপকারভোগী নির্বাচন প্রক্রিয়ায় স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির কারণে তারা তালিকাভুক্ত হয়েছে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে ভাতাভোগীর তালিকা পর্যালোচনা করে অযোগ্যদের বাদ দিয়ে যোগ্যদের অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তালিকা পর্যালোচনা শুরু হওয়ায় এবার উপকারভোগীদের ভাতা দিতে কিছুটা বিলম্ব হবে বলে জানিয়েছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। এ জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ভালো কাজে উৎসাহিত করতে সাময়িক অসুবিধা মেনে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, তাদের নিজস্ব তথ্যের পাশাপাশি ইউনিসেফের জরিপের তথ্য অনুয়ায়ী উপকারভোগীদের তালিকার ৪৩ শতাংশ ত্রুটিপূর্ণ। অর্থাৎ যারা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তারা হওয়ার মতো নয়। এদের মধ্যে অনেকে পেনশন, ভিজিডি বা অন্যান্য ভাতা নিচ্ছে। আবার অনেকে বেশ সম্পদশালী হওয়ার পরও একাধিক ভাতা নিচ্ছে। উপকারভোগী নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইউপি মেম্বার-চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের পক্ষপাত ও দুর্নীতির কারণে এমনটি হয়েছে বলে মন্ত্রণালয় মনে করছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হলে ২০২০ সালে নিম্নআয়ের ৫০ লাখ মানুষকে আড়াই হাজার টাকা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তৎকালীন সরকার। এ টাকা দিতে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় সেই তালিকা যাচাই করে দেখতে পায় ১৬ লাখের বেশি সরকারি কর্মচারী, সঞ্চয়পত্রের মালিক, পেনশনভোগী এতে ঢুকে পড়েছে। পরে সরকার এ ১৬ লাখকে বাদ দিয়ে প্রায় ৩৪ লাখ মানুষকে এককালীন আড়াই হাজার করে টাকা দেয়।

কর্মকর্তাদের দাবি, এ ঘটনার পর থেকে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির তালিকা পর্যালোচনার জন্য জোরালোভাবে বলে আসছেন তারা। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণাতেও উঠে এসেছে প্রায় একই চিত্র।

গত বছর তাদের এক জরিপে দেখা যায়, সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীদের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ বয়স্ক এবং ৩৩ শতাংশ বিধবা নিজেদের এ ভাতা পাওয়ার অযোগ্য বলে জানিয়েছে। এই অযোগ্য সুবিধাভোগীদের জন্য মোট বরাদ্দের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বা ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। এদের মধ্যে আবার প্রায় ১২ শতাংশ পেনশন, ভিজিডি বা অন্যান্য ভাতা নিচ্ছে।

সংস্থাটির মতে, অযোগ্যদের ভাতা দেওয়া বন্ধ করা হলে প্রকৃত যোগ্য ৪৫ শতাংশ ব্যক্তিকে সুরক্ষার আওতায় আনা সম্ভব।

সিপিডির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বয়স্ক ভাতা পাওয়ার জন্য কার্ড পেতে সংশ্লিষ্টদের গড়ে ২ হাজার ৬৫৩ টাকা ঘুষ দিতে হয়। ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ লেনদেন হয়। অনেকে এ ভাতা পাওয়ার যোগ্য হলেও ঘুষ দিতে না পারায় ভাতা পান না। এসব কারণে ভাতা বিতরণের যে লক্ষ্য তা ব্যাহত হচ্ছে।

বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, স্বামী পরিত্যক্ত ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতাসহ বিভিন্ন শ্রেণিতে সরকার হতদরিদ্র মানুষের মাঝে ভাতা বিতরণ করে থাকে। উপকারভোগী নির্বাচনের ক্ষেত্রে অনিয়মের বিষয়টি বার বার আলোচিত হয়েছে। যথাযথভাবে প্রকৃত উপকারভোগী নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে আসছে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা।

এতদিন তালিকা পর্যালোচনা করা না হলেও এবার সেই উদ্যোগ নিল অন্তর্বর্তী সরকার। সূত্রগুলো বলছে, তালিকা হালনাগাদ হলে মোট উপকারভোগীর সংখ্যা কমবে না। কারণ অযোগ্যদের বাদ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও যারা এতদিন সুবিধা পাননি তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল বলেন, বর্তমান সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তালিকা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। নীতিমালা অনুযায়ী উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত প্রতিনিধিসহ অন্যদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির এটি করার কথা। কিন্তু বর্তমানে তাদের অনুপস্থিতিতে বিকল্প কমিটিকে দ্রুত এটি সম্পন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে ইউএনওরা উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্বের রয়েছেন। তাদের নেতৃত্বে বিকল্প কমিটির মাধ্যমে সরকার পরিচ্ছন্ন তালিকা তৈরি করে যোগ্য ব্যক্তিদের ভাতা দিতে চায়। সাম্প্রতিক সময়ে নানা কারণে বিভিন্ন ভাতা প্রদানে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। আগামীতে যেন দেরি না হয় সে বিষয়েও নজর রাখা হচ্ছে।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!