খুলনার কয়রা থেকে সাতক্ষীরার তালা পর্যন্ত সড়ক সোজা করার কাজে ধীরগতির কারণে স্থানীয়রা ভোগান্তি পোহাচ্ছে। সড়ক ব্যবহারকারীরা বলছে, চলাচল নির্বিঘ্ন ও ঝুঁকিমুক্ত করতে সরকার বাঁক সোজা করা এবং সড়কের উন্নয়নে এই প্রকল্প নিয়েছে। সময়মতো প্রকল্পটি বাস্তবায়িত না হওয়ায় মানুষের বিড়ম্বনা কমছে না।
খুলনা সড়ক বিভাগের পাইকগাছা, কয়রা ও তালা উপজেলার বেতগ্রাম-তালা-পাইকগাছা-কয়রা সড়কের দৈর্ঘ্য ৬০ কিলোমিটার। সাতক্ষীরা অংশের বাঁক সরলীকরণে জমি অধিগ্রহণ শেষ হয়েছে। এখন সড়কের খুলনা অংশে জমি অধিগ্রহণ চলছে। স্থানীয়রা বলছে, দুই দফায় প্রকল্পের মেয়াদের পাশাপাশি ব্যয়ও বেড়েছে। কিন্তু কাজে তেমন গতি নেই। আগামী জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। তবে ঠিকাদার দ্রুততার সঙ্গে কাজ করলে শেষ হলেও হতে পারে।
খুলনা সড়ক ও জনপথ (সওজ) দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের ২১ জানুয়ারি ‘বেতগ্রাম-তালা-পাইকগাছা-কয়রা সড়ক যথাযথ মানে উন্নীতকরণ’ প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) পাস হয়। দরপত্র শেষে কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টারপ্রাইজ।
২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর তাদের ৩৩৯ কোটি ৫৮ লাখ ৪৭ হাজার টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ২০২২ সালের ৩০ জুন কাজ শেষ করার কথা ছিল। পরবর্তী সময়ে এক বছর করে সময় বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের ৩০ জুন করা হয়। প্রকল্পে ব্যয় বাড়নো হয় ৪০ কোটি টাকা। এ ছাড়া প্রকল্পের মধ্য থেকে তিন কিলোমিটার অংশের জন্য আলাদা করে ব্যয় বাড়ানো হয় আরো ৫৫ কোটি টাকা।
সর্বশেষ পাইকগাছা পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে ছয় ফুট প্রশস্তকরণের জন্য বরাদ্দ করা হয় আরো ১০০ কোটি টাকা। এভাবে প্রকল্পের ব্যয় ১৯৫ কোটি টাকা বেড়েছে।
সড়ক বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, প্রকল্পটির গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল ৩০টি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক সোজা করা। এতে ১১.২৫ হেক্টর জমি অধিগ্রহণে ৭১ কোটি ৮২ লাখ বরাদ্দ রাখা হয়। সম্প্রতি সাতক্ষীরা জেলা অংশের বাঁক সোজা করতে জমি অধিগ্রহণ শেষ হয়েছে। খুলনা জেলা অংশে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া চলছে।
সাতক্ষীরার তালা উপজেলা সদরের বাসিন্দা অরুণ দাস (৩২) বলেন, ‘এই রাস্তায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। প্রাণহানি না হলেও অনেকের হাত-পা ভাঙে। এই কষ্ট কবে শেষ হবে জানি না।’
সড়কে চলাচলকারী খুলনার ডমুরিয়ার শাহপুর গ্রামের দুলি বেগম (৪২) বলেন, ‘ছেলেমেয়েদের স্কুলে যাতায়াত বড় কষ্টকর। কেউ অসুস্থ হলেও তাকে আমরা ঢাকা নিতে পারি না। আমাদের কষ্ট কেউ দেখছে না।’
তালার মোহান্দি গ্রামের আকরামুল হোসাইন বলেন, ‘ঠিকাদাররা চলার মতো রাস্তা করলেও কষ্ট কিছু কমত। এখন পর্যন্ত বাঁক ঠিক করার লক্ষণ নেই।’
মাইক্রোবাসচালক মো. ইমরান হোসেন বলেন, ‘পারতপক্ষে এই রাস্তায় আসতে চাই না। গাড়ি আর গাড়ি থাকে না। ৬০ কিলোমিটার পথ যেতে চার ঘণ্টা লাগে। অথচ এই সময়ে ঢাকা যাওয়ার কথা, কষ্টও কম।’
কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম ও সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘কয়রা-পাইকগাছা অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি এই সড়কের উন্নয়ন। সড়কে অর্ধশতাধিক বাঁক আছে। আমরা চাই, সড়কটি দ্রুত চওড়া করার পাশাপাশি বাঁক সোজা করার কাজ শেষ করা হোক। এতে এই অঞ্চলের মানুষের সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে। ভোগান্তিও কমবে।’
খুলনা সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী আনিসুজ্জামান মাসুদ বলেন, ‘প্রকল্পটি ২০২৪ সালের জুনে শেষ হবে। জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতা ছিল। সাতক্ষীরা অংশের সেই কাজ শেষ হয়েছে। খুলনা জেলা অংশের কাজ চলছে। এ ছাড়া সড়কের প্রস্থ বাড়ানো হচ্ছে। আমরা ঠিকাদারদের দ্রুত কাজ করার নির্দেশ দিয়েছি।’
খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) আসনের সংসদ সদস্য মো. আখতারুজ্জামান বাবু বলেন, ‘সড়কটির ৭৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সড়ক সরলীকরণ ও প্রশস্তকরণ প্রক্রিয়াধীন। এটি শেষ হলে পাইকগাছা-কয়রার যোগাযোগব্যবস্থায় নতুন দিগন্তের সূচনা হবে। মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হবে।’
খুলনা গেজেট/এইচ/বাপী