প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। গতকাল মঙ্গলবার রাতে গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। বৈঠক শেষে গণভবন থেকে বেরিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি ভারতের পররাষ্ট্র সচিব।
পরে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলী দাশের কাছে বৈঠকের বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা জানতে চাইলে তিনি জানান, বৈঠকে দুই দেশের সর্ম্পক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ ভারতের সম্পর্ক উন্নয়নে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বার্তাও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পৌছে দেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা, এমনটাই জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলী।
হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। হর্ষবর্ধন শ্রিংলা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করেন যে, করোনা মহামারির কারণে মুজিববর্ষের অনুষ্ঠান বাতিল হওয়ায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে আসতে না পারায় তাঁকে পাঠিয়েছেন।
নরেন্দ্র মোদি শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। শ্রিংলা জানান, মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভারত স্মারক ডাক টিকিট প্রকাশ করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও শ্রিংলাকে পাঠানোর জন্য মোদির সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেন।
এ ছাড়া মহামারির মধ্যেও উভয় দেশের মধ্যে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে জানান। এ সময় সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্র নিয়েও কথা হয়।
আজ বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। বৈঠকে দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা বিষয় ছাড়াও করোনাভাইরাসের টিকা, রোহিঙ্গা ইস্যুসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গে তাদের মধ্যে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।
করোনা মহামারীর মধ্যে শ্রিংলার এ ঝটিকা সফরকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন বিশ্লেষকরা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিশেষ বার্তা নিয়ে তিনি ঢাকায় এসেছেন বলেও মনে করছেন তাঁরা।
এদিকে গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ভারতীয় হাইকমিশন জানায়, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করতে ও দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা এগিয়ে নিতে দুই দিনের সফরে ঢাকা এসেছেন।
শ্রিংলার সফর নিয়ে মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। তিনি বলেন, ‘তাঁর (শ্রিংলা) সফর ঝটিকা বা আকস্মিক নয়, এটা নিয়মিত। যেহেতু আমাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী ভারত, সুতরাং তাদের সঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়েসহ বিভিন্ন ধাপে প্রচুর ইনটারঅ্যাকশন হয়। এ বছর কোভিডের কারণে বরং কমই হচ্ছে।’
মোমেন বলেন, আজ দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের টিকা উৎপাদনের সঙ্গে ভারতের যুক্ত থাকার বিষয়ে আলোচনা হবে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের টিকাসহ অন্য টিকাগুলো যাতে বাংলাদেশ দ্রুত পেতে পারে, সে বিষয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা অব্যাহত রাখা হচ্ছে। সেটা যুক্তরাষ্ট্রের হোক, অক্সফোর্ডের হোক, তারা ইন্ডিয়ায় ট্রায়াল দিচ্ছে, এর সবকটি কীভাবে আমরা দ্রুত পেতে পারি, সে ব্যাপারে সবার সঙ্গে আমাদের আলাপ-আলোচনা চলছে। এটার অংশ হিসেবে আমরা ভারতের সঙ্গে আলাপ করব। আমরা কীভাবে সবার সঙ্গে সহযোগিতা করতে পারি, এ বিষয়ে আলোচনা করব।
বৈঠকের অন্যান্য এজেন্ডা সম্পর্কে সচিব বলেন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয় সব সময় আমাদের এজেন্ডার মধ্যে থাকে। বাংলাদেশ এবং ভারত কীভাবে আরও সহযোগিতা জোরদার করতে পারে, সে বিষয়টিও আছে।
এ ছাড়া শ্রিংলার মার্চের সফরে আলোচনার অগ্রগতিও এবারের বৈঠকের এজেন্ডায় থাকছে জানিয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, এর মধ্যে বেশ কিছু ভালো কাজ হয়েছে, ট্রান্সশিপমেন্টের কিছু কাজ হয়েছে, সব মিলিয়ে যেসব অগ্রগতি হয়েছে, সেগুলো আমরা আলোচনা করব। সামনে আরও কী করা যায়, সেগুলো আলোচনা করব। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের বিষয়টিও আলোচনায় থাকছে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব।
খুলনা গেজেট/এআইএন