খুলনা, বাংলাদেশ | ৪ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  রাজধানীর উত্তরা থেকে সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম গ্রেপ্তার
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১০৮৩
  ১৬ ডিসেম্বর ঘিরে কোনো ধরণের হামলার শঙ্কা নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সবজির বাজারে উত্তাপ, লাগামহীন নিত্যপণ্যের দাম

তানভীর আহমেদ

খুলনায় নিত্যপণ্যের দামের উত্তাপে পুড়ে ছাড়খার হচ্ছে ক্রেতা সাধারণ। লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি ফিরছে না কিছুতেই। একটি পণ্যের দাম কমলে অন্যটির বাড়ছে কয়েক গুণ। এতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষের মধ্যে নাভিশ্বাস দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ পরিবারে একবেলা আমিষ জুটছে না। কাঁচাবাজার নিয়ে এমনটাই অভিযোগ ভোক্তাদের।

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে নগরীর মহসিন মোড় পাইকারি কাঁচা বাজার, দৌলতপুর কাঁচা বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে এ চিত্র।

ব্যবসায়ীদের দাবি, সম্প্রতি বৃষ্টি ও বন্যার কারণে ফসল, মাছ ও মুরগির খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে বাজারে কমে গেছে পণ্যের সরবরাহ। ফলে দাম কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী।

শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, মহসিন মোড় পাইকারি কাঁচা বাজারে প্রতি কেজি পটল ৬০ টাকা, বাঁধাকপি ৬৫ টাকা, লাল শাক ৬০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, কাঁচকলা ৩০ টাকা, মুলা ৫০-৬০ টাকা, বেগুন ৯০-১১০ টাকা, কচুর মুখি ৫০ টাকা, মানভেদে মরিচ ২২০-২৪০ টাকা, আলু ৫২-৫৪ টাকা, পেঁয়াজ ১০৫ টাকা, রসুন ২১০-২২০ টাকা, লাউশাক ৪০ টাকা, আকার ভেদে লাউ ৩০-৫০ টাকা, করলা ৭০-৮০ টাকা, ধেঁড়স ৬০ টাকা, আদা ১৪০ টাকা, শশা ৪০-৫০ টাকা, মানভেদে লেবু ১ টাকা থেকে ৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে এই পাইকারি বাজারটিতে।

বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ কম থাকায় সবজির দাম বেড়েছে। মূলত বন্যার প্রভাব পড়েছে সবজির বাজারে।

পাইকারি এই বাজারটির ব্যাবসায়ী ইমরান হোসেন বলেন, কাঁচামালের দাম প্রতিদিনই উঠানামা করে, আমরা যেরকম দামে কিনি সেরকম দামে বিক্রি করতে হয়। সম্প্রতি বন্যা ও বৃষ্টিতে ফসলের ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে তাই দাম বাড়ছে।

মহসিন মোড় পাইকারি বাজার হতে দৌলতপুর কাঁচা বাজারের দূরত্ব মাত্র ৫০০ মিটার। আর এই স্বল্প দুরত্বের বাজারে এসেই দাম বেড়ে যায় সকল শাক-সবজির। এখানেই ক্ষোভ বাজার করতে আসা ক্রেতাদের।

সকালে দৌলতপুর কাঁচা বাজারে, প্রতি কেজি পটল ৮০ টাকা, বাঁধাকপি ৭০-৭৫ টাকা, লাল শাক ৭০ টাকা, পেঁপে ৩৫-৪০ টাকা, কাঁচকলা ৪০-৫০ টাকা, মুলা ৭০-৮০ টাকা, বেগুন ১২০ টাকা, কচুর মুখি ৬০ টাকা, মানভেদে মরিচ ৩০০-৩২০ টাকা, আলু ৬০ টাকা, পেঁয়াজ ১১০ টাকা, রসুন ২৪০ টাকা, আকার ভেদে লাউ ৬০-৭০ টাকা, করলা ৮০-৯০ টাকা, ধেঁড়স ৮০ টাকা, আদা ২০০ টাকা, শশা ৭০ টাকা, মানভেদে লেবু বিক্রি হচ্ছে ৩ টাকা থেকে ৭ টাকা দরে।

স্বল্প দূরত্বের বাজার থেকে পন্য কিনে এনে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করার কারন জানতে চাইলে এ বিষয়ে কথা বলতে নারাজ বিক্রেতারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বিক্রেতা বলেন, এই দামে বিক্রি না করলে আমাদের চালান থাকে না। দোকান ভাড়া, সমিতির কিস্তি দেওয়া লাগে। এর চেয়ে কমে বিক্রি করতে গেলে আমাদের সংসার চলেনা।

দিন দিন নিম্নবিত্তে নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে পাঙ্গাস তেলাপিয়াসহ সকল রকমের মাছ। সাইজ অনুযায়ী প্রতি কেজি রুই বিক্রি হচ্ছে ২৭০-৩৫০ টাকায়। এছাড়া চাষের পাঙাশ ২২০-২৫০ টাকায়, তেলাপিয়া ১৮০-২৫০ টাকা, আকার অনুযায়ী চাষের কৈ ৩০০-৪০০ টাকায় এবং দেশি কৈ বিক্রি শুরু হচ্ছে ৬০০ টাকা দরে, আকার অনুযায়ী চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬০০-১২০০/১৫০০ টাকায়।

এদিকে, বুধবার (১৬ অক্টোবর) ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তর। উৎপাদক পর্যায়ে ১০ টাকা ৯১ পয়সা, পাইকারিতে ১১ টাকা ১ পয়সা। খুচরায় ১১ টাকা ৮৭ পয়সায় ডিম বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে হিসেবে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি ডজন কিনতে খরচ হবে ১৪২ টাকা ৪৪ পয়সা।

সরজমিনে দেখা যায়, দৌলতপুর বাজারে আকার অনুযায়ী সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১৩ টাকায় এবং লাল ডিমের দাম ১৩ টাকা থেকে ১৩ টাকা ৫০ পয়সা।

হিসাব করে দেখা যায় খুচরা পর্যায়ে এক ডজন ডিম কিনতে ভোক্তাকে বেশি গুনতে হচ্ছে ৭ টাকা ৫৬ পয়সা থেকে ১৯ টাকা ১২ পয়সা পর্যন্ত। আর এই একই ডিম, পাড়া মহল্লার খুচরা দোকানে বিক্রি হচ্ছে ডজন প্রতি ১৬৮ টাকা দ্বরে।

স্বস্তি নেই মুরগির বাজারেও, গত কয়েকদিনে বাজার ভেদে ২০-৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে মুরগিতে। আজ, দৌলতপুর বাজারে ব্রয়লার মুরগি ১৯০ টাকা, কক ২৯০, সাদা লেয়ার ২৭০, সোনালি মুরগি ২৭০ এবং মোরগ ৩৫০ টাকা দ্বরে বিক্রি হচ্ছে।

ছুটির দিনে দৌলতপুর বাজারে এসেছিলেন সরকারি চাকরিজীবী জাহিদুল ইসলাম। এ সপ্তাহের মুরগির দাম দেখে চক্ষু চড়ক গাছ এই ব্যক্তির। তিনি বলেন গত কয়েকদিন আগেও পোল্ট্রি মুরগি ১৭০ টাকায় কিনেছি আজ ১৯০ টাকা। তিন দিনে ২০ টাকা বেড়ে গেলো কিভাবে?

তিনি আরো বলেন, বাজার মনিটরিং করে কোন কাজ হবে না। মনিটরিং শুরু হলে ব্যবসায়ীরা দাম কমিয়ে দেয়, যখন পুলিশ চলে যায় তারা আবার বেড়ে যায়। প্রশাসনের উচিত, যারা বাজারে দ্রব্যমূল্যে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে তাদের গ্রেপ্তার করা।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!