কোরবানির ঈদের পর থেকেই বাজারে বেড়েছে সবজির দাম। গত সপ্তাহের কয়েক দিনের বৃষ্টির পর চলতি মাসের শুরুতেই আরও অস্থির হয়ে উঠেছে সাতক্ষীরার সবজির বাজার। বাজারে বেশিরভাগ সবজি কিনতে হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে। বৃষ্টির কারণে সরবরাহের সংকটের অজুহাতে প্রতিটি সবজির দাম বেড়েছে কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে কাঁচা মরিচ, আলু, পেঁয়াজ ও বেগুনসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি। এর মধ্যে অস্বাভাবিকভাবে দাম বেড়েছে কাঁচা মরিচের। তবে স্থিতিশীল রয়েছে মাংসের বাজার। কিছুটা কমেছে ডিমের দাম।
শনিবার (৬ জুলাই) সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বড়বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারি বাজারে কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি। যা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজি। অথচ মাত্র এক সপ্তাহ আগে এই কাঁচা মরিচ ছিল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি। পাইকারি বাজারের ১১০ টাকার বেগুন খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা, ৭০ টাকার বরবটি ১০০ টাকা, ৫০ টাকার কাঁচাকলা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, ৪৫ টাকার ঢেড়স ৬০ টাকা, ৩৫ টাকার পেঁপে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি।
এছাড়া পাইকারি বাজারে আলু ৫০ টাকা, পেঁয়াজ ৯৫ টাকা, রসুন ২শ’ টাকা, টমেটো ১০০ টাকা, কচুরমুখী ৭০ টাকা, নজিনার ডাটা ১৪০ টাকা, পটল ১৮ থেকে ২০ টাকা, ওল ৯০ থেকে ১০০ টাকা, দেশী উচ্ছে ৯০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, খিরাই ৮০ টাকা, ধুন্দুল ২০ টাকা চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, ঝিঙ্গা ৫০টাকা এবং মিষ্টি কুমড়া ১৮ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি তরকারি কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে। এতে করে নাভিশ্বাস উঠছে সাধারণ মানুষের। ক্রয় ক্ষমতার বাইরে হওয়ায় বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ।
তবে বাজারে স্থিতিশীল রয়েছে মাংসের দাম। ৩০০ টাকা কেজি দরের সোনালী মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা, ব্রয়লার ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০ টাকা, লাল ডিম প্রতি পিচ ১২ টাকা, সাদা ডিম ১১টাকা ৫০ পয়সা বিক্রি হচ্ছে। দেশী মুরগির ডিম ১৫ টাকা পিচ বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতারা বলছেন, বৃষ্টির কারণে সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাজারের আড়তে প্রতিটি তরকারির দাম বেড়েছে। তাই তাদেরও বেশি দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। ক্রেতারা বলছেন, বাজারে সবকিছুর দাম আকাশ ছোয়া। কোনোভাবেই নির্দিষ্ট আয়ে জীবনযাপন সম্ভব হচ্ছে না। যা কয়েকদিন আগে পিচে ১/২ টাকা বেশি ছিল।
সুলতানপুর বড় বাজারে কেনাকাটা করতে আসা আব্দুস সালাম বলেন, বাজারে প্রতিটি সবজির দাম কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে। আমরা সীমিত আয়ের মানুষ। কিন্তু এখন বাজার করলে আগের চেয়ে দ্বিগুণ বেশি খরচ হচ্ছে। ধরতে গেলে ১০০ টাকার নিচে বাজারে কোন ভাল তরকারি নেই। এছাড়া মাছ মাংস কেনার সাহস করতে পারি না। ডাল আলু ভর্তা খেতে গেলে এখন অনেক খরচ। খুচরা বাজারে এক কেজি আলুর দাম ৬০ টাকা। পরিবার নিয়ে কোন রকমে সংসার চালাচ্ছি।
অপর এক ক্রেতা আব্দুল ওদুদ বলেন, বাজারে আসলে বোঝা যাবে মানুষ কেমন আছে। বাজারে জিনিসপত্রের দামের কি অবস্থা , সেটা তো আপনারাও দেখছেন। এভাবে মানুষ চলতে পারে না। ছোট চাকরি করি। জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও আমাদের আয়তো বাড়েনি। একশ’ গ্রাম কাঁচা মরিচ কিনতে হচ্ছে ৩০ টাকায়।
তবে বিক্রেতারা বলছেন, বৃষ্টির অজুহাতে আড়তে প্রতিটি তরকারির দাম বেড়েছে। তাই তাদেরও বেশি দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
সুলতানপুর বড়বাজারের খুচরা তরকারি বিক্রেতা ইসমাইল হোসেন বলেন, বাজারে সরবরাহ কমের কারণে প্রতিটি সবজির দাম বেশি। পাইকারি বাজার থেকে আমরা যে দামে কিনি তার চেয়ে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করি। আমাদেরও তো সংসার আছে। তিনজন লোক সারাদিন খেটে যদি কিছু আয় করতে না পারি তাহলে সংসার চলবে কিভাবে।
সাতক্ষীরা সুলতানপুর বড়বাজারের আড়তদার ও বাজারের কাঁচাপাকা মাল ব্যবসায়ি সমিতির সাধারণ সম্পাদক রজব আলী খা বলেন, বৃষ্টির কারণে বেশ কিছুদিন ধরে বাজারে সবজির সরবরাহ কমে গেছে। এছাড়া বেগুনসহ অনেক সবজির ইতিমধ্যে মৌসুম শেষ হয়ে গেছে। শেষ সময়ে অল্প কিছু সবজি আসছে বাজারে। যে কারণে সরবরাহ কম থাকায় দামও বেড়েছে। এখানে বাজারের আড়তদার বা ব্যবসায়িদের কোন কারসাজি নেই। নতুন করে যখন আবার ফসল উঠতে শুরু করবে তখন ফের সবজির দাম কমে আসবে বলে জানান তিনি।
খুলনা গেজেট/এনএম