সুখের সংসারে স্বামী ও দুই সন্তান ছিল। স্বামীর মৃত্যুর পর বড় মেয়ে মারা যায়। ছিল এক ছেলে। সেই ছেলেটিও হারিয়ে গেছে। দুই সন্তানকে হারিয়ে পথে পথে ঘুরতে ঘুরতে এখন সুখের নীড়ে (বৃদ্ধাশ্রম) ঠিকানা হয়েছে মা হাজেরা বেগমের (৭০)। সেখানেই বসে সন্তানদের জন্য কাঁদছেন হাজেরা।
হাজেরা বেগম বলেন, আমার দুই ছেলেমেয়ে। মেয়ের নাম তাহসিনা বেগম আর ছেলে হাসান। স্বামী অনেক আগেই মারা গেছেন। মেয়েও মারা গেছে। আর ছেলে হাসান ১৫ বছর বয়সে হারিয়ে যায়। আমি এখন একা। এক আত্মীয়ের বাড়িতে থাকতাম, কিন্তু তারা সেইভাবে দেখতো না। দেড় বছর আগে সেখান থেকে বেরিয়ে আসি। কোথায় যাব কোনো ঠিকানা ছিল না। ঘুরতে ঘুরতে রয়েল মোড়ের কাচ্চি ঘরের সামনে আসি। সেখানে অবস্থান নিই। আমার অনেক কিছু জানতে চায়। সব শুনে ম্যানেজার বলল মানুষ মানুষকে ফেলে না, একটা বুড়ো মানুষকে ফেলবো কোথায়। তারা আমার যত্ন নেয়। পরে এই বাবজান (তাহের) আমাকে এখানে নিয়ে আসে। আমি এখানে দেড় বছর ধরে আছি। কোনো সমস্যা নেই। আমাকে মায়ের আদরে রেখেছে। এখানে খাওয়া-দাওয়ায় কষ্ট হয় না।
তিনি আরও বলেন, আমার মেয়ের দুই ছেলে আছে। তবে তারা আমার দেখাশোনা করে না। একবার একজন এসেছিল। আর আসে না। দেখেও না।
হাজেরা বেগম বলেন, আমার ছেলে হারিয়ে যাওয়ার পর অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি। কবিরাজের কাছে গেছি, তারা বলে বেঁচে আছে, কুয়েতে আছে। কিন্তু সে তো আর ফেরেনি। মন চায় ছেলেডারে দেখি। কিন্তু কই পামু। এই বলে কেঁদে ফেলেন তিনি। সন্তানদের জন্য বিলাপ করতে থাকেন মা হাজেরা বেগম।
বেসরকারিভাবে সুখের নীড় বৃদ্ধাশ্রমটি গড়ে তুলেছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেবার আলো বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তালহা জুবায়ের। নগরীর মিয়াপাড়া এলাকায় ভাড়া বাড়িতে এই সুখের নীড় পরিচালনা করছেন তিনি।
তালহা জুবায়ের বলেন, এই মাকে (হাজেরা বেগম) কাচ্চিঘরের জিম্মায় এনেছি। আলহামদুলিল্লাহ, দেড় বছর তিনি এখানে বেশ ভালো আছেন।
তিনি বলেন, আমার মা নেই। যে কারণে আমি সুখের নীড় বৃদ্ধাশ্রম গড়ে তুলেছি। এখানে টাকার বিনিময় কেউ তার মা-বাবাকে রেখে যেতে পারবে না। আমি একটু ভিন্নভাবে এটা পরিচালনা করছি। যার কেউ নেই, কিছু নেই, পথে পথে ঘুরছে এমন মা-বাবাকে এখানে আশ্রয় দিচ্ছি। এখানে যারা রয়েছেন সকলকেই বিভিন্ন স্থান থেকে খুঁজে এনেছি। দুই বছর আগে একজন মাকে নিয়ে শুরু করা সুখের নীড়ে এখন ১৭ জন মা-বাবা রয়েছে। তাদেরকেই ছেলে হিসেবে দেখভাল করছি।
জুবায়ের বলেন, এখানে প্রতি মাসে ৭০-৮০ হাজার টাকা খরচ হয়। যারা আছেন সবাই বৃদ্ধ, অনেকে অসুস্থ। তাদের খাবার, পোশাক, চিকিৎসা, ওষুধ সবই দিতে হয়। কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী সহায়তা করে তবে তা যতেষ্ঠ নয়। আমি ব্যবসা করি তার প্রায় সবটুকুই তাদের জন্য ব্যয় করি। মা দিবসে অনেকে আসবে, নানা আয়োজনও করেছি। তাদের মাঝে মাকে খুঁজি। তাদের সঙ্গে সময় কাটাতে খুবই ভালো লাগে।
খুলনা গেজেট/এমএম