খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় বাস-মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে দুইজন নিহত
  মিরপুরে গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ, নারী-শিশুসহ দগ্ধ ৭
  সাবেক প্রধান বিচারপতির মৃত্যুতে আজ সুপ্রিম কোর্টের বিচারকাজ বন্ধ

সঞ্চয়পত্রে সর্বোচ্চ কতো টাকা বিনিয়োগ করা যাবে ?

গেজেট ডেস্ক

বাংলাদেশে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের সর্বোচ্চ সীমা নিয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশের সরকার। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) ওই প্রজ্ঞাপনটি জারি করা হয় বৃহস্পতিবার। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমার বিষয়ে এই প্রজ্ঞাপনে পরিষ্কার করে দেয়া হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সঞ্চয়পত্র বিধি ১৯৭৭ এবং পরিবার সঞ্চয়পত্র নীতিমালা ২০০৯-এ বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা বিষয়ে যাই বলা হোক না কেন, এখন থেকে আর সেটি কার্যকর হবে না।

সঞ্চয়পত্রে সর্বোচ্চ কতো টাকা বিনিয়োগ করা যাবে?

বাংলাদেশে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের নিয়ম অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি তিন মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র এবং পরিবার সঞ্চয়পত্র, তিনটি স্কিম মিলিয়ে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে পারতে পারবেন। তবে যেকোনো একটি স্কিমে ৩০ লাখ টাকার বেশি কিনতে পারবেন না।

(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

তবে যৌথ নামে আরও ৫০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন। অর্থাৎ সবমিলিয়ে এক কোটি টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে।

তবে এই নিয়মের কিছুটা ব্যতিক্রম রয়েছে পেনশনার সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে। এটি শুধুমাত্র পেনশনধারী ব্যক্তিরা কিনতে পারবেন। ফলে তারা এক নামে ৫০ লাখের সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন। এর বাইরে এককনামে অথবা যৌথ নামে তারা ৫০ লাখ অন্যান্য স্কিমের সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন।

যেভাবে এই যাচাই বাছাই করা হয়

জাতীয় সঞ্চয় স্কিম অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম নামের একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে ২০১৯ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে আগের মতো এখন আর সঞ্চয়পত্রের বই বা কুপন ব্যবহার করতে হয় না। সঞ্চয়পত্র কেনার পাশাপাশি তার মুনাফাও সরাসরি গ্রাহকদের হিসাবে জমা হয়ে যায়।

বাংলাদেশের সঞ্চয় অধিদপ্তরের পরিচালক মোঃ শাহ আলম বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ”প্রজ্ঞাপনটা এখন জারি করা হলেও পহেলা জুলাই ২০১৯ সাল থেকেই কিন্তু এই ব্যবস্থাটি ব্যবহার করা হচ্ছে। তখন থেকেই সঞ্চয়পত্র কিনতে এনআইডি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

”ফলে যখন কেউ সঞ্চয়পত্র কিনতে যান, এই সফটওয়্যার যাচাই করে দেখে, এই এনআইডির বিপরীতে কতো টাকার সঞ্চয়পত্র কেনা রয়েছে। ফলে বিনিয়োগের সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়ে ফেললে তার নামে আর সঞ্চয়পত্র ইস্যু করা যায় না,” বলেন মি. শাহ আলম।

আগে যারা সর্বোচ্চ সীমার বেশি কিনেছেন, তাদের ক্ষেত্রে কী হবে?

বাংলাদেশের সঞ্চয় অধিদপ্তরের পরিচালক মোঃ শাহ আলম বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, ২০১৯ সালের পহেলা সেপ্টেম্বরের আগে যারা সঞ্চয়পত্র কিনেছেন, তারা সেসব স্কিমের মেয়াদ পূর্তি পর্যন্ত সেগুলোর পূর্ণাঙ্গ সুবিধা পাবেন। মুনাফা উত্তোলনের ক্ষেত্রে তারা হাতে লেখা কুপনও ব্যবহার করতে পারবেন। তবে নতুন করে যখন সঞ্চয়পত্র কিনতে যাবেন, তখন তাদের সর্বোচ্চ সীমার ভেতরে থেকেই নতুন করে কিনতে হবে।

নাবালকদের নামে কেনার সুযোগ নেই

সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে এনআইডি বাধ্যতামূলক হওয়ায় এখন আর নাবালকের নামে সঞ্চয়পত্র কেনার সুযোগ নেই বলে কর্মকর্তারা বলছেন।

পরিচালক মোঃ শাহ আলম,” ১৮ বছর হওয়ার আগে তো আর এনআইডি করা যায় না। কিন্তু সঞ্চয়পত্র কিনতে এনআইডি বাধ্যতামূলক। ফলে এখন আর নাবালকের নামে কেউ সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন না।”
ব্যাংক হিসাব ছাড়া সঞ্চয়পত্র নয়

(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

বাংলাদেশে সঞ্চয়পত্র কেনার নিয়ম অনুযায়ী, এখন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে সঞ্চয়পত্র কিনতে হচ্ছে, তেমনি মুনাফার টাকাও সরাসরি ব্যাংক হিসাবে জমা দেয়া হচ্ছে। ফলে আগের মতো কুপন কেটে মুনাফার টাকা উত্তোলনের সুযোগ নেই। ফলে সঞ্চয়পত্র কেনার সময় একটি ব্যাংক হিসাবের নাম ও নম্বর সঙ্গে দিতে হয়।

ই-টিআইএন

এক লাখ টাকার বেশি অঙ্কের সঞ্চয়পত্র কিনতে হলে ইলেকট্রনিক কর শনাক্তকরণ নম্বর (ই-টিআইএন) নম্বর থাকতেই হবে। সঞ্চয়পত্র কেনার সময় এই নম্বর ও তার কপি জমা দিতে হবে।

দেশের নারী, বয়স্ক নাগরিক এবং অবসরে যাওয়া সাবেক চাকরিজীবীদের একটি বড় অংশ, তাদের পারিবারিক আয়ের ক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্রের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল।
ছবির ক্যাপশান,

দেশের নারী, বয়স্ক নাগরিক এবং অবসরে যাওয়া সাবেক চাকরিজীবীদের একটি বড় অংশ, তাদের পারিবারিক আয়ের ক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্রের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল।

যেভাবে সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে

সব সঞ্চয়পত্রের জন্য নির্দিষ্ট ফর্ম রয়েছে। ওয়েবসাইটে অথবা সংশ্লিষ্ট অফিসে এসব ফর্ম পাওয়া যায়। সেটি পূরণ করে গ্রাহক ও নমিনি দুই কপি করে পাসপোর্ট আকারের ছবি দিতে হবে।

প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তা গ্রাহকের ছবি সত্যায়িত করে দেবেন, তবে নমিনির ছবি সত্যায়িত করবেন গ্রাহক নিজেই। সেই সঙ্গে গ্রাহক ও নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্র ও গ্রাহকের ইটিআইএনের ফটোকপি সংযুক্ত করতে হবে। যে হিসাবে গ্রাহকের মুনাফা ও আসল টাকা জমা হবে, গ্রাহকের সেই নিজ ব্যাংক হিসাবের চেকের কপি দিতে হবে।

পেনশনার সঞ্চয়পত্র কিনতে হলে বাড়তি দিতে হবে সর্বশেষ নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের সনদ, পেনশনপ্রাপ্তির প্রমাণপত্র। শুধুমাত্র পেনশনভোগীরা এই সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন।

সঞ্চয়পত্র কিনতে হলে বয়স অবশ্যই ১৮ বছর বা তার ঊর্ধ্ব হতে হবে।

পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে নারী, বাংলাদেশি শারীরিক প্রতিবন্ধী নারী ও পুরুষ এবং ৬৫ বছর বা বেশি বয়সের নারী ও পুরুষ।।

পেনশনার সঞ্চয়পত্র রয়েছে ৫০ হাজার, ১ লাখ টাকা, ২ লাখ টাকা, ৫ লাখ টাকা ও ১০ লাখ টাকা মূল্যমানের। অন্যদিকে পরিবার সঞ্চয়পত্র রয়েছে ১০ হাজার, ২০ হাজার, ৫০ হাজার, ১ লাখ, ২ লাখ, ৫ লাখ ও ১০ লাখ টাকা মূল্যমানের।

বাংলাদেশের জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের ৭১টি সঞ্চয় ব্যুরো কার্যালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের সব কার্যালয়, সব তফসিলি ব্যাংক, ডাকঘর থেকে সঞ্চয়পত্র কেনা যায়। একই স্থানে সেটি ভাঙ্গানোও যায়। তবে এক বছরের আগে ভাঙ্গানো হলে কোন মুনাফা পাওয়া যায় না।

গ্রাহকদের প্রতিক্রিয়া

সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগ সীমা বেঁধে দেয়ার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছেন দুইজন গ্রাহক। শাহনাজ পারভীনের স্বামী সরকারি চাকুরীজীবী ছিলেন। তার জমানো টাকা দিয়ে তারা সঞ্চয়পত্র কিনে রেখেছেন, যা দিয়ে তাদের সংসারের খরচ নির্বাহ হয়।

তিনি বলছিলেন, ”ব্যাংকে মুনাফা জমা হওয়ার পদ্ধতিতে ভালো হয়েছে, আমাদের ঝামেলা কমেছে। কিন্তু আমার স্বামীর সব আয়, জমি বিক্রির আয় দিয়ে সঞ্চয়পত্র কিনেছি। ব্যাংকে সুদের হার কম, শেয়ার বাজারের অবস্থা ভালো নয়। এখন যদি বিনিয়োগের সীমা কমিয়ে দেয়া হয়, তাহলে আমাদের বাকি টাকা কোথায় বিনিয়োগ করবো?”

দেশের নারী, বয়স্ক নাগরিক এবং অবসরে যাওয়া সাবেক চাকরিজীবীদের একটি বড় অংশ, তাদের পারিবারিক আয়ের ক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্রের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল।

দেশের ব্যাংকগুলোর তুলনায় সঞ্চয়পত্রে সুদের হার বেশি হওয়ায় অনেকেই এই খাতে বিনিয়োগে উৎসাহী হন।

আরেকজন গ্রাহক লায়লা রুমিনার বিনিয়োগের সীমা এখনো অতিক্রম করেনি। তবে তিনি বলছেন, ”আমাদের মতো মধ্যবিত্তের টাকা বিনিয়োগের ভরসার জায়গা সঞ্চয়পত্র। সেখানে যদি এতরকম বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, সেটা আসলে আমাদেরকেই বিপদে ফেলে দেয়।”সূত্র : বিবিসি বাংলা।

খুলনা গেজেট/কেএম

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!