বাংলাদেশে সঞ্চয়পত্র বিক্রির ক্ষেত্রে নতুন নতুন নিয়ম চালু করা হয়েছে। যদিও নতুন করে সুদের হারে পরিবর্তন আনা হয়নি।
নতুন নিয়ম চালু করার কয়েকটি উদ্দেশ্য রয়েছে বলে কর্মকর্তারা বলছেন। প্রথমতঃ সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে লাগাম টেনে ধরা। দ্বিতীয়তঃ নতুন করদাতা খুঁজে বের করা।
দেশের অনেক মানুষ জমানো টাকা বিনিয়োগের জন্য সঞ্চয়পত্রকে প্রথম পছন্দ হিসেবে বেছে নেন।
সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা টাকা থেকে যে সুদ আসে সেটি দিয়ে অনেকে সংসারের ব্যয় নির্বাহ করে থাকেন।
তাছাড়া অন্য ক্ষেত্রে বিনিয়োগের চেয়ে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা নিরাপদ এবং বেশি লাভ থাকায় মানুষ সেদিকেই আকৃষ্ট হয়। কিন্তু সঞ্চয়পত্র বিক্রি সরকারের জন্য ঋণ। এই ঋণের সুদ মেটানোর জন্য প্রতিবছর সরকারকে হাজার-হাজার কোটি টাকা খরচ করতে হয়।
এজন্য সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু লাগাম টেনে ধরার চেষ্টা করছে সরকার। ফলে এক বছর আগে সুদের হারে পরিবর্তন এনেছিল সরকার।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মাসুদুর রহমান বলেন, সর্বশেষ ২০২২ সালের জুন মাসে বাজেট ঘোষণার পর থেকে সঞ্চয়পত্র বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে।
এক কথায়, বলতে গেলে সঞ্চয়পত্র ক্রয় কিছুটা কঠিন করা হয়েছে।
যেসব পরিবর্তন এসেছে
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের যে প্রভিডেন্ট ফান্ড বা ভবিষ্য তহবিল থাকে সেখান থেকে সঞ্চয়পত্র কেনা যায়। আগে এক্ষেত্রে কোনো সীমা নির্ধারণ করা ছিল না। কিন্তু এখন এক্ষেত্রে পরিবর্তন এসেছে।
প্রভিডেন্ট ফান্ডের মোট স্থিতির ৫০ শতাংশ সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে। তবে এটি সর্বোচ্চ ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত কেনা যাবে।
জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরোর একজন কর্মকর্তা বলেছেন, কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের প্রভিডেন্ট ফান্ডের ব্যাংক হিসেবে যদি ৫০ লাখ টাকা জমা থাকে তাহলে সেই প্রতিষ্ঠানের অর্ধেক টাকার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবে।
অর্থাৎ ব্যাংকে যখন যত টাকা জমা থাকবে, তার অর্ধেক টাকা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা যাবে।
এভাবে একটি প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ ৫০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবে।
এ নিয়মের মাধ্যমে স্পটতই বোঝা যাচ্ছে যে, সঞ্চয়পত্র বিক্রির ক্ষেত্রে সরকার লাগাম টেনে ধরতে চায়।
ব্যক্তির ক্ষেত্রে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কিনতে হলে টিআইএন (ট্যাক্স আইডেনটিফিকেশ নম্বর) সার্টিফিকেট জামা দেয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল। কিন্তু সেটি এখন তুলে নেয়া হয়েছে।
অর্থাৎ যারা পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র ক্রয় করবেন, তাদের টিআইএন সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে না। এতে তাদের জন্য কিছু সুবিধা হয়েছে। কিন্তু যারা পাঁচ লাখ টাকার চেয়ে বেশি ক্রয় করবেন তাদের ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম করা হয়েছে।
সর্বশেষ পরিপত্রে বলা হয়েছে, এর বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে গেলে শুধু টিআইএন সার্টিফিকেট দাখিল করলেই হবে না।
সঞ্চয়পত্রে পাঁচ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীকে আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ দিতে হবে। এখান প্রমাণ বলতে নিম্নোক্ত কাগজপত্র বোঝানো হয়েছে।
আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রাপ্তিস্বীকারপত্র; অথবা করদাতার কর সনাক্তকরণ নম্বর, নাম ও রিটার্ন দাখিলকৃত অর্থবছরের তথ্য সম্বলিত সিস্টেম জেনারেটেড সনদপত্র; অথবা করদাতার কর সনাক্তকরণ নম্বর, নাম ও রিটার্ন দাখিলকৃত অর্থবছরের তথ্য সম্বলিত উপ-কর কমিশনারের নিকট থেকে ইস্যুকৃত সনদপত্র।
সরকার মনে করছে, যারা সঞ্চয়পত্র ক্রয় করেন তাদের অনেকেই আয়কর রিটার্ন জমা দেন না। আয়কর রিটার্নে ব্যক্তির আয়, ব্যয় এবং সম্পদের বিবরণ থাকে।
আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার কাগজ বাধ্যতামূলক করার ফলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বুঝতে পারবে যারা পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনছেন তাদের আয়-ব্যয়-সম্পদ কেমন।
এছাড়া এর আরেকটি ফলাফল থাকতে পারে। সেটি হচ্ছে, আয়কর রিটার্ন জমা দিয়ে অনেকে সঞ্চয়পত্র কিনতে চাইবেন না। ফলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে আসতে পারে ধারণা করা হচ্ছে। সূত্র : বিবিসি