খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৮৬

সংবাদপত্র‌সে‌বী মোস্তফা র‌শিদী সুজা

গাজী আলাউদ্দিন আহমদ

১৯৯৯ সা‌ল। খুলনা সা‌র্কিট হাউস ময়দা‌নে ঈ‌দের নামাজ আদা‌য়ের পর শু‌ভেচ্ছা বি‌নিম‌য়ের সময় উচ্চ স্ব‌রে বল‌লেন, “তোমার আচর‌ণে আ‌মি খুব কষ্ট পে‌য়ে‌ছি। বাংলার বাণী‌তে তোমার যোগদানের খবর অন্যের কা‌ছে আমা‌কে শুন‌তে হ‌লো কেন ?” আমার কোন অজুহাত সে‌দিন তাঁকে কন‌ভিন্স কর‌তে পা‌রে‌নি। প‌রে ক্ষমা চে‌য়ে সে যাত্রা রক্ষা পে‌য়ে‌ছিলাম। এ রকম দা‌বি নি‌য়ে জোর গলায় তি‌নিই কথা বলতে পা‌রেন, যার ঐ অ‌ধিকার থা‌কে।

আজ সুজা ভাইয়ের ই‌ন্তেকা‌লের পর এরকম অ‌নেক স্মৃ‌তি আমা‌কে খুব নাড়া দি‌চ্ছে।

রাজনী‌তি, ক্রীড়া ও সাংস্কৃ‌তিক অঙ্গন‌ের পাশাপা‌শি প্রকৃত অর্থেই একজন মি‌ডিয়াবান্ধব ছি‌লেন এস এম মোস্তফা র‌শিদী সুজা। আমার সা‌থে তার পরিচয় ১৯৯৩ সা‌লে দৈ‌নিক পাঠ‌কের কাগজ প‌ত্রিকায় কাজ করার সুবা‌দে। যে প‌ত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক ছি‌লেন তি‌নি।

আ‌মি ক‌লে‌জে লেখাপড়ার পাশাপা‌শি নিয়‌মিত সাংবা‌দিকতায় ঢু‌কে‌ছি কেবল। খুলনায় থাক‌লে আমা‌দের সা‌থে হাজী মুহ‌সিন রো‌ডের প‌ত্রিকা অ‌ফি‌সে নিয়‌মিতই দেখা সাক্ষাত হ‌তো। এক‌দিন রা‌তে আমা‌কে অ‌ফি‌স কক্ষে ডে‌কে পাঠান সুজা ভাই। ‌তেরখাদার এক‌টি স্কু‌লের অ‌নিয়‌মের খবর ছাপা হ‌য়ে‌ছিল ঐ‌দি‌নের প‌ত্রিকায়।

প্রথ‌মেই সুন্দর নিউ‌জের জন্য বেশ প্রশংসা ক‌রে জান‌তে চাই‌লেন, “তু‌মি কি জানো, ঐ স্কু‌লের ম্যা‌নে‌জিং ক‌মি‌টির চেয়ারম্যান কে ? ” সহজ সরলভা‌বে ‘না ‘ জবাব দেয়ার পর হে‌সে দি‌য়ে‌ছি‌লেন। প‌রে জে‌নে‌ছি চেয়ারম্যান তি‌নি নি‌জে। ঐ নিউজে তি‌নি কিছুটা বিব্রত হ‌লেও বস্তু‌নিষ্ঠ সাংবা‌দিকতার প‌ক্ষে ছি‌লেন। স্থানীয় প‌ত্রিকার নানা অসংগ‌তি নি‌য়ে তি‌নি বি‌ভিন্ন সময় শেয়ার কর‌তেন, তখন তা‌কে ম‌নে হ‌তো একজন পেশাদার সাংবা‌দিক।

পাঠ‌কের কাগজ প‌ত্রিকা‌টি শুরু‌তে পাঠ‌কের হৃদয় জয় কর‌তে পার‌লেও অর্থ‌নৈ‌তিক মজবুত ভি‌ত না থাকায় কিছু‌দিন পর ছন্দপতন ঘ‌টে। একপর্যা‌য়ে আমা‌দের টিম ভে‌ঙ্গে যাওয়ায় ১৯৯৪ সা‌লের ১ জুন দৈ‌নিক পূর্বাঞ্চল প‌ত্রিকায় যোগদান ক‌রি। এর আ‌গের দিন অর্থাৎ ৩১ মে রা‌তে অ‌ফি‌সে বিদায়ী সাক্ষা‌তে দোয়া চাই‌তে গে‌লে সুজা ভাই ব‌লে‌ছি‌লেন, “আ‌মি দেখ‌তে চাই, তু‌মি কিভা‌বে পাঠ‌কের কাগজ ছে‌ড়ে অন্য প‌ত্রিকায় যাও।” আমার সাংবা‌দিকতার প্রাথ‌মিক পর্যা‌য়ে সম্পাদ‌কের এই আস্থা ও ভালবাসা আমা‌কে ম‌নে হয় আর সাংবা‌দিকতা ছাড়‌তে দেয়‌নি। বারবার চেষ্টা ক‌রে‌ছি থ্যাংকলেস এই জবটি ছাড়ার, কিন্তু আমা‌কে‌তো ছা‌ড়ে না।

দৈ‌নিক বাংলার বাণী বন্ধ হওয়ার পর ২০০১ সা‌লের মে মা‌সে বন্ধু মোস্তফা স‌রোয়ার‌কে সা‌থে নি‌য়ে বের করলাম দৈ‌নিক প্রবর্তন প‌ত্রিকা। আ‌মি প্রথ‌মে বার্তা সম্পা‌দক ও প‌রে নির্বাহী সম্পাদ‌কের দা‌য়ি‌ত্বে থাকায় বেশ ক‌য়েকবার নিউজ সম্পর্কিত বিষ‌য়ে কথা হ‌য়েছে সুজা ভাই‌য়ের সা‌থে। সময়টা তাঁর জন্য খুব একটা অনুকূল না থাকায় দা‌বি নি‌য়ে কথা বল‌তেন, যা রক্ষার চেষ্টাও করতাম।
দীর্ঘ‌দিন পর ২০১০ সা‌লে দৈ‌নিক সম‌য়ের খবর প‌ত্রিকা অ‌ফি‌সে আবার দেখা সুজা ভাই‌য়ের সা‌থে। প‌ত্রিকার তৎকালীন সম্পাদক কামরুল মুনীর ভাই‌য়ের অ‌ফিস ক‌ক্ষে আমা‌কে দে‌খে প্রথ‌মেই বল‌লেন, “সারা‌দিন কাজ নি‌য়ে ব্যস্ত থা‌কো, শরী‌রের দি‌কে ম‌নে হয় খেয়াল রাখ‌তে পা‌রো না ।” ম‌নে হ‌লো, আ‌মার প্রথম সম্পাদক শুধু নয়, আ‌মি কথা বল‌ছি আপন বড় ভাই‌য়ের সা‌থে। প্রায় এক ঘন্টার সেই আলাপচা‌রিতায় উ‌ঠে এ‌সে‌ছিল আঞ্চ‌লিক সংবাদপ‌ত্রের নানা সীমাবদ্ধতা ও এব্যা‌পা‌রে তাঁর স্বপ্ন নি‌য়ে। সে‌দিনই প্রথম জে‌নে‌ছিলাম, শ্র‌দ্ধেয় কামরুল মুনীর ও সুজা ভাই উভয়ই ছাত্র ইউ‌নিয়‌ন কর‌তেন। যেকার‌ণে দুই‌ জ‌নের ম‌ধ্যে অ‌নেক বিষয় মিল খুঁ‌জে পেতাম। আর অ‌মিলটা আজ অপ্রাস‌ঙ্গিক, কারণ দু’জনই আজ গত। একজন আমার সাংবা‌দিকতার প্রথম সম্পাদক, আর অন্যজন আমার শেষ সম্পাদক। ‌

সাংবা‌দিকতা ও সংবাদপত্র তি‌নি ছাড়‌তে পা‌রেন‌নি। কিছুটা অসুস্থ শরীর নি‌য়েও সুজা ভাই আবার প‌ত্রিকার ডিক্লা‌রেশন নি‌লেন, নাম পাঠ‌কের প‌ত্রিকা। এবার তি‌নি প্রকাশক হ‌লেও সম্পাদক কর‌লেন তাঁরই উত্তরসূ‌রি একমাত্র পূত্র সূকর্ণ‌কে। কিন্তু সাংবা‌দিকতা নি‌য়ে তাঁর স্ব‌প্নের পূর্ণ বাস্তবায়ন দে‌খে যে‌তে পার‌লেন না। আশাক‌রি আমাদের সূক‌র্ণের সম্পাদনায় পাঠ‌কের প‌ত্রিকায় ভবিষ্যতে তার প্র‌তিফলন ঘট‌বে। সুজা ভাই বেঁ‌চে থাক‌বেন পাঠ‌কের প‌ত্রিকার হাজারও পাঠ‌কের হৃদ‌য়ে।

(ফেসবুক ওয়াল থেকে, ২৭ জুলাই ২০১৮ তারিখের পোস্ট)

 

খুলনা গেজেট / এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!