ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ থেকে যাত্রা শুরু করে চারুকলা বিভাগ। সম্প্রতি বিভাগটির জন্য রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনে শ্রেণিকক্ষ বরাদ্দ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে অন্যবিভাগ কক্ষগুলো দখল করে রাখায় নিজেদের বরাদ্দকৃত শ্রেণিকক্ষ ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে না চারুকলা বিভাগ। আর তাই নিজেদের বরাদ্দকৃত শ্রেণিকক্ষ ফিরে পেতে এবার অনশন শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (৪ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টায় প্রশাসন ভবনের সামনে শিক্ষার্থীরা অনশন শুরু করেন। শিক্ষার্থীদের দাবি- রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবন থেকে অবৈধ দখলকারীদের উচ্ছেদ ও বরাদ্দকৃত কক্ষ ব্যবহারের সুযোগ দিতে হবে। এর আগে একই দাবিতে ক্যাম্পাসে দুই দফায় বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি করেছিল শিক্ষার্থীরা।
অনশন পালনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা শ্রেণিকক্ষ বরাদ্দ পেয়েও ব্যবহার করতে পারছি না। কক্ষগুলো ফোকলোর ও ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ দখল করে আছে। এদিকে আমাদের ক্লাস পরীক্ষা পরিচালনা করার কোনো জায়গা নেই। আমরা আমাদের নতুন চেয়ারম্যানকে বসতে দেওয়ারও জায়গা পাইনি। আমরা প্রসাশনের দ্বারস্থ হয়েও কোনো সমাধান পাইনি। আমাদেরকে বিভিন্নভাবে আশ্বস্ত করা হয়েছে, কিন্তু কোনো ফল পাইনি। তাই আমরা বাধ্য ও নিরুপায় হয়ে আমরণ অনশনে বসেছি। আমাদের দাবির বিষয়ে প্রশাসন লিখিত কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া পর্যন্ত আমরা অনশন চালিয়ে যাবো।
এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহিনুজ্জামান বলেন, উপাচার্য ক্যাম্পাসের বাইরে রয়েছেন। তিনি ক্যাম্পাসে ফিরলে আগামীকাল বসে বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমি দুপুরেই আন্দোলনকারীদের বিষয়টি জানিয়েছি। আমরা একটা সমাধানের দিকে যাচ্ছি।
প্রসঙ্গত, গত ৮ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগকে রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনের চতুর্থ তলায় ২৩টি ও পঞ্চম তলায় ১টি কক্ষসহ মোট ২৪টি কক্ষ বরাদ্দ দেয় কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগকে পঞ্চম তলায় ১৫টি ও ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগকে একই তলায় ১৭টি কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়। কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বিভাগগুলোকে এসব কক্ষ বরাদ্দ দেন। গত আগস্টে অনুষদীয় সভায় এসব কক্ষ বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এদিকে কক্ষ বরাদ্দ দেওয়ার আগে থেকেই ভবনের চতুর্থ তলায় চারুকলার জন্য বরাদ্দ দেওয়া কক্ষগুলো দখলে নিয়ে ফোকলোর স্টাডিজ ও ডেভোলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ তাদের একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। কক্ষ বরাদ্দের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি আকারে নির্দেশনা এলেও চারুকলার চেয়ে কম কক্ষ বরাদ্দ দেওয়ায় দখলকৃত কক্ষগুলো ছাড়তে নারাজ বিভাগ দুইটি। অন্যদিকে অনুষদীয় সভা থেকে ভবনটি চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগকে কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হলেও তারা ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের জন্য তৃতীয় তলায় বরাদ্দকৃত কক্ষগুলো দখল করে ব্যবহার করছেন।
এ নিয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ এবং চারুকলা বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। নিজেদের জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষগুলো ব্যবহারের সুযোগ না পেয়ে গত ২৩ অক্টোবর মানববন্ধন করেন চারুকলার শিক্ষার্থীরা। এসময় উপাচার্য তাদেরকে বিষয়টি দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেন। তবে সপ্তাহ পেরোলেও কোনো সমাধান না পেয়ে রোববার ফের আন্দোলন শুরু করে বিভাগটির শিক্ষার্থী। এ দিন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। এরপরও কোনো সমাধান না পেয়ে দাবি আদায়ে আজ অনশনে বসেছেন বিভাগটির শিক্ষার্থীরা৷
খুলনা গেজেট/ টিএ