বাসভবনে বিক্ষোভকারীদের হানার আগে নিরাপদ স্থানে পালিয়ে যাওয়া শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসেকে দেশটির প্রধান বিমানবন্দরের কাছের একটি বিমানঘাঁটিতে উড়িয়ে নেওয়া হয়েছে। সোমবার বিমানঘাঁটিতে লঙ্কান প্রেসিডেন্টের পৌঁছানোর খবর জানাজানি হওয়ার পর বিদেশে তার নির্বাসনে যাওয়ার গুঞ্জনও ছড়িয়েছে।
শনিবার নৌবাহিনীর নিরাপত্তা ব্যবস্থার আওতায় কলম্বোর প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ থেকে পালিয়ে যান রাজাপাকসে। কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী প্রেসিডেন্ট ভবন দখলে নেওয়ার কিছুক্ষণ আগে পালিয়েছেন তিনি। এর কয়েক ঘণ্টা পর দেশটির সংসদের স্পিকার ঘোষণা দেন, ক্ষমতা শান্তিপূর্ণ হস্তান্তরে প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে আগামী বুধবার পদত্যাগ করবেন।
সোমবার দেশটির শীর্ষ একজন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, কাতুনায়েকে বিমানঘাঁটিতে নেওয়ার আগে ৭৩ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে নৌবাহিনীর একটি স্থাপনায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। এই বিমানঘাঁটির সাথে দেশটির প্রধান বন্দরনায়েকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সীমানা রয়েছে।
ওই কর্মকর্তা বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট এবং তার দলবলকে দুটি বেল ৪১২ হেলিকপ্টারে করে কলম্বোতে নেওয়া হয়েছে। তবে গোতাবায়ার অবস্থান সম্পর্কে প্রেসিডেন্টের কার্যালয় আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও মন্তব্য করেনি। কিন্তু স্থানীয় কয়েকটি গণমাধ্যমের খবরে সোমবার আরও পরের দিকে গোতাবায়া দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে কলম্বো ত্যাগ করবেন বলে জানানো হয়েছে।
এদিকে, লঙ্কান প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের দফতর বলেছে, গোতাবায়া রাজাপাকসে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগের ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন।
কলম্বোতে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের প্রত্যেকটি প্রান্ত এবং কোণ দখলে নিয়েছেন লঙ্কান বিক্ষোভকারীরা। জিমে ব্যায়াম, প্রেসিডেন্ট পুলে সাঁতার কাটা, রান্নাঘরে খাওয়া, শয়নকক্ষে বিশ্রাম নেওয়ার ভিডিও এবং ছবি ভাইরাল হওয়ার পর এবার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের টেলিভিশনে নিজেদের বিক্ষোভের লাইভ দেখা বিক্ষোভকারীদের আরেকটি ছবি অনলাইনে ছড়িয়েছে।
‘এনিথিং ইজ পসিবল’ নামের একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে শেয়ার করা ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একদল বিক্ষোভকারী প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের একটি কক্ষের মেঝেতে শুয়ে টেলিভিশনে লাইভে নিজেদের বিক্ষোভ দেখছেন। তারা টেলিভিশনে ‘ব্রেকিং নিউজ’ও দেখছেন।
টুইটের ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে শ্রীলঙ্কার বিক্ষোভকারীরা তাদের বিক্ষোভ দেখছেন। কয়েক মাসের তুলনামূলক শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের চূড়ান্ত পরিণতিতে এসব দৃশ্য এখন দেখা যাচ্ছে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে।
১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভের পর গত সাত দশকে প্রথমবারের মতো ভয়াবহ বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতির মুখোমুখি হয়েছে। দেশটিতে দীর্ঘস্থায়ী বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতার পাশাপাশি তীব্র খাদ্য ও জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে।