খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  পাকিস্তানে যাত্রীবাহী গাড়িতে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ৪৫
  মার্কিন শ্রম প্রতিনিধি দল ঢাকা আসছে আজ

শ্রমিকের অধিকার ও তার আইন

রাজু আহমেদ

ছোট্ট বাড়ি কিংবা অট্টালিকা, কলকারখানা কিংবা মটরগাড়ী প্রতিটি সভ্যতার মূলে রয়েছে শ্রম।জন্ম থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত এই পৃথিবীর সব কাজে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা যা কিছু দৃশ্যমান সবই অর্জিত হয় শ্রমের মাধ্যমে। যারা শ্রম দেয় তাঁরাই হলেন শ্রমিক। কিন্তুু এই শ্রমিকরা সেই ১৮৮৬ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটের ম্যাসাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দাবিদাবা নিয়ে রাজপথে দেখা যায়। শ্রমিকদের অধিকার মর্যাদা রক্ষার্থে রয়েছে নানা আইন। এছাড়াও বেশ কিছু সংগঠনও শ্রমিকদের অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে কাজ করে থাকে।

বাংলাদেশে তার ব্যতিক্রম কিছু নয়, নানা সময়ে এই খেটে খাওয়া মানুষকে দেখা যায় তাদের অধিকার, বেতনসহ ন্যায্য দাবী আদায়ে সোচ্চার। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১৪ নং অনুচ্ছেদে কৃষক ও শ্রমিকের মুক্তির কথা বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে- রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হইবে মেহনতী মানুষকে- কৃষক ও শ্রমিককে এবং জনগণের অনগ্রসর অংশসমূহকে সকল প্রকার শোষণ হইতে মুক্তি দান করা। এছাড়াও ২০, ৩৪ নং অনুচ্ছেদে যথাক্রমে অধিকার ও কর্তব্য রুপে কর্ম এবং জবরদস্তি-শ্রম নিষিদ্ধকরণ সম্পর্কে বলা হয়েছে।

প্রত্যেক শ্রমিকের তার পছন্দ অনুযায়ী বৈধ কাজের স্বাধীনতা রয়েছে, তাকে জবরদস্তি মূলক কাজে বাধ্য করা যাবে না। প্রত্যেক শ্রমিক তার ন্যায্য বেতন পাবেন, কর্ম স্থলে শ্রমিকের অধিকার, কর্তব্য ও সম্মান নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তুু বর্তমান সমাজের এসবের উল্টো চিত্র মানুষের চোখে পড়ে। ধনী, চাকরিজীবীরা যেনো তাদেরকে সম্মান দিতে ভুলে গেছে। ক্ষমতা আর টাকা-পয়সার বড়াইয়ে তারা যেনো তাদের নৈতিক অবস্থান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ক্ষমতা আর টাকা পয়সার কাছে যেনো শ্রমিকরা অসহায়।

শ্রমিক নিয়োগ, মালিক ও শ্রমিকের মধ্যে সম্পর্ক, সর্বনিম্ন মজুরীর হার নির্ধারণ, মজুরী পরিশোধ, কার্যকালে দুর্ঘটনাজনিত কারণে শ্রমিকের জখমের জন্যে ক্ষতিপূরণ, ট্রেড ইউনিয়ন গঠন, শিল্প বিরোধ উত্থাপন ও নিষ্পত্তি, শ্রমিকের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, কল্যাণ ও চাকুরীর অবস্থা ও পরিবেশ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ প্রণীত হয়েছে। এই আইনে প্রতিটি পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় শ্রমিক আইনের কথা বলা হয়েছে। কিভাবে তাদেরকে নিয়োগ দিতে হবে, কতদিন কাজ করবে, তাদের মজুরি কেমন হবে, এক কথাই শ্রমিকদের আদ্যোপান্ত বিষয় নিয়ে এ আইন প্রণীত হয়েছে।

স্বপ্ন কি কখনো বাস্তবে রুপান্তরিত হবে? আর এই বইয়ের পাতার আইন গুলো কবে বাস্তবরুপ দান করবে?

আমাদের দেশ স্বল্প উন্নত দেশ, এদেশের অধিকাংশ মানুষের একদিন কাজ না করলে খেতে পাবে না। এই শ্রমজীবী মানুষের আর্তনাদ প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে পত্রিকার পাতায় কিংবা টেলিভিশনে দেখা যায়। বিল্ডিং থেকে পড়ে গেছে, মালিকের হাতে শ্রমিক লাঞ্চিত, শ্রমিকের মজুরি বন্ধ ইত্যাদি সহ নানান খবর আমরা দেখতে পাই। যাদের ঘামের প্রতিটি ফোঁটায় আমাদের অর্থনীতি সচল থাকে, যাদের হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রমে আমরা সুবিশাল অট্টালিকায় মনের আনন্দে ঘুমাচ্ছি, তারা আজ সকল সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

শ্রমিকরাই দেশের অর্থনীতি চালিকার প্রধান হাতিয়ার। শ্রমিক বাঁচলে দেশের অর্থনীতি বাঁচবে আর অর্থনীতি বাঁচলে দেশ বাঁচবে। সুতরাং শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে সরকারের পাশাপাশি সকলকে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে যারা মালিক তারা যেনো এই খেটে খাওয়া মানুষ গুলোর প্রতি সদয় হয়, তারা যেনো তাদের ন্যায্য সম্মান দেয়। সকল মানুষ সমান এই মনোভাব সবার মাঝে জাগ্রত হোক শ্রমিক দিবসে এটাই রইলো প্রত্যাশা।

লেখক : রাজু আহমেদ, আইন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

খুলনা গেজেট/ এস আই




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!