সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের ফুলতলা গ্রামে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের বসতবাড়িতে হামলা চালিয়েছে একদল সন্ত্রাসী। মোটরসাইকেল ও পিকআপযোগে আসা সন্ত্রাসীরা বেশ কয়েকটি বসতবাড়িসহ মন্দিরের তিনটি প্রতিমা ভাংচুর করে। মঙ্গলবার রাত আটটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে রাত ৯টার দিকে কালিগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপারসহ শ্যামনগর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
সন্ত্রাসীদের হামলায় আহতরা হলেন, মৃত ফণীন্দ্র বাউলিয়া ছেলে নগেন্দ্রনাথ বাউলিয়া (৭০), তপন বাউলিয়া (৬০), নগেন্দ্র নাথ বাউলিয়ার তিন ছেলে সুভাষ বাউলিয়া (৫০), যতিন বাউলিয়া (৪০) ও গোবিন্দ বাউলিয়া (৪৫), যতিন বাউলিয়ার স্ত্রী কৌশল্যা বাউলিয়া (৩৫), সুভাষ বাউলিয়ার স্ত্রী পূর্ণিমা বাউলিয়া (৪৫), মেয়ে মমতা বাউলিয়া (১৮), ছেলে মিলন বাউলিয়া (১৯), যতিন্দ্র বাউলিয়া মেয়ে বিজলী বাউলিয়া (১১) ও গোবিন্দ বাউলিয়া ছেলে নিত্যানন্দ বাউলিয়া (১৬)।
স্থানীয় একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের উত্তর কদমতলা গ্রামের শ্রীপদ মন্ডলের ছেলে পল্লব মন্ডলের নেতৃত্বে ৫/৬টি মটর সাইকেলে বংশীপুর থেকে আসা তরুণরা সরাসরি এ হামলায় অংশ নেয়। পল্লব মন্ডল শেখ রাসেল শিশু কিশোর পরিষদ এর মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন শাখার সম্পাদকীয় পদে রয়েছে বলে জানা যায়।
এদিকে মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য এবং ওয়ার্ড আ’লীগের সভাপতি আকবর পাড়ের বাড়ি থেকে হামলায় অংশগ্রহণকারীদের ইট-পাটকেল সরবরাহ করা হয় বলেও স্থানীয়দের দাবি।
হামলার শিকার সুভাষ বাউলিয়ার স্ত্রী পূর্ণিমা বাউলিয়া বলেন, উত্তর কদমতলা ফুলতলা এলাকার শ্রীপদ মন্ডলের ছেলে পল্লব মন্ডল (১৯) এই ঘটনা ঘটায়। প্রেম ঘটিত বিষয় নিয়ে পল্লব ও এক মেয়েকে একটি বিলের ভিতরে সুভাষ বাঊলিয়ার ছেলে মিলন বাঊলিয়া (১৮) সহ কয়েক জন ধরে ফেলে এবং পরবর্তীতে বিষয়টি মীমাংসা হয়ে যায়। কিন্তু ওই ঘটনার রেশ ধরে পল্লব ৫/৭ টা মোটর সাইকেলে লোকজন নিয়ে এসে সন্ধ্যায় আমাদের ওপর হামলা চালায়।
তিনি আরো বলেন, এ ঘটনায় ভয়ে আমরা পলাই। এসময় আমাদের না পেয়ে তারা আমাদের দুই মেয়ে বিজুলী ও মমতা কে তুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য হাত ধরে টেনে ঘরের বাইরে বের করতে চাইলে ছোট মেয়ে চিৎকার করলে ওর বাবা, দাদা, কাকারা আর পালিয়ে না থাকতে পেরে বেরিয়ে আসে। তখনই তারা আমাদের উপর ইট ছুড়ে মারতে থাকে এবং ঘরে থাকা টিভি, ল্যাপটপ, মোবাইল ও মোটর সাইকেল নিয়ে যায়। আর কিছু লোক তাদের তাড়া করে মন্দিরে নিয়ে গিয়ে প্রতিমা ভাংচুর করে। তিনি আরও বলেন, এই ঘটনার পিছনে আজগর মেম্বারের সহযোগীতা রয়েছে।
হামলার শিকার গোবিন্দ বাউলিয়া জানান, হামলাকারীরা ইট পাটকেল ছুড়তে ছুড়তে বাড়িতে ঢুকে পড়ে তার ভাইয়ের মেয়েকে উঠিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এসময় বাঁধা দিতে যেয়ে তার ভাইসহ পরিবারের ১০/১১ জন সদস্য আহত হয়।
স্থানীয় উন্নয়ন সংগঠন লিডার্স এর নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার মন্ডল জানান, সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় গোটা এলাকায় আতংক ভর করছে। ইতিমধ্যে কালিগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপারসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে হামলার বর্ণনা জানার চেষ্টা করছেন।
এদিকে হামলার বিষয়ে জানার জন্য ১নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগের সভাপতি আকবর পাড়ের মুঠোফোনে বার বার যোগাযোগ করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। একইভাবে বন্ধ পাওয়া যায় পল্লব মন্ডলের ব্যবহৃত মুঠোফোন।
এ বিষয়ে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজমুল হুদা জানান, এটি একটি প্রেম ঘটিত কারণ বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। পল্লব মন্ডল এবং ওই মেয়ে দু’জনেই মুন্সিগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে এইচএসসি প্রথম বর্ষে পড়ে। উভয়ের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এ ঘটনায় দুটি মন্দিরের প্রতিমা ভাংচুর ও ১১ জন আহত হয়েছে।
হামলার খবরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে ওই এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। কালিগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। হামলার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় নেয়ার ব্যবস্থা চলছে বলে তিনি জানান।
খুলনা গেজেট/এনএম