সাতক্ষীরার শ্যামনগরের টেংরাখালী গ্রামের জোড়া খুনের মামলায় আটক চার আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে ৭দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়েছে। মামলা তদন্তকারি কর্মকর্তা শ্যামনগর থানার উপপরিদর্শক মোমরেজ হোসেন রোববার (১০ জুলাই) এই আবেদন জানান। ঈদের ছুটির পর আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে রিমান্ড আবেদনের শুনানী হবে।
এদিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জোড়া খুনের মামলার আরো তিন আসামীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব সদস্যরা। বর্তমানে তারা খুমেক হাসপাতালে পুলিশি নজরদারিতে রয়েছে।
খুমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আটক তিন আসামী হলো সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার টেংরাখালী গ্রামের মোহাম্মদ মোল্লার ছেলে সোবহান মোল্লা, তার ভাই আল আমিন মোল্লা একই গ্রামের দাউদ গাজীর ছেলে আব্দুল আজিজ গাজী।
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য যাদের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়েছে সে আসামীরা হলো, শ্যামনগর উপজেলার টেংরাখালী গ্রামের আব্দুর রশিদ কয়ালের ছেলে মোঃ নাসির উদ্দীন কয়াল (৩২), আব্দুল আজিজ গাজীর ছেলে মোঃ আলাউদ্দীন গাজী (২৯), সুলতান গাজীর ছেলে মোঃ সাদেক আলী গাজী (৩৯) ও আবু বাক্কার মালীর ছেলে মোঃ আলমগীর হোসেন মালী (২২)।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা শ্যামনগর থানার উপপরিদর্শক মোমরেজ হোসেন জানান, শ্যামনগরের জোড়া খুনের ঘটনায় টেংরাখালী গ্রামের মৃত তফিলউদ্দিন গাজীর ছেলে ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল বারি বাদি হয়ে ইউপি সদস্য আব্দুল হামিদ লাল্টু, ইউপি সদস্য আজগার আলী বুলুসহ ৭৩ জনের নাম উল্লেখ পূর্বক অজ্ঞাতনামা আরো ৫০ জনকে আসামী করে শনিবার থানায় একটি হত্যা মামলা (মামলা নং-১৩) দায়ের করেন।
তিনি আরো বলেন, খুলনা র্যাব-৬ এর সদস্যরা শনিবার বিকেল তিনটার দিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকা থেকে চার জন ও চিকিৎসাধীন অরো তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। চারজনকে শনিবার রাতেই শ্যামনগর থানায় সোপর্দ করা হয়। বাকী তিনজনকে আটক করে পুলিশি নিরাপত্তায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। থানায় হস্বান্তরকৃত চারজনকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রত্যেককে সাত দিন করে রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে রাববার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। ঈদের ছুটির পর আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে তাদের রিমান্ড আবেদনের শুনানী হবে। মামলার অন্য আসামীদের গ্রেপ্তারে পুলিশি তৎপরতা অব্যহত রয়েছে বলে হানান তিনি।
প্রসঙ্গত, একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার (৭ জুলাই) সকালে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের টেংরাখালী গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল বারীর সমর্থক নাদের আলীকে মারধর করে বর্তমান ইউপি সদস্য আব্দুল হামিদ লাল্টুর লোকজন। এ ঘটনার জেরে শুক্রবার সন্ধ্যার আগে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় আব্দুল বারীর কর্মী সমর্থকরা আব্দুল হামিদ লাল্টুর লোকজনকে গালিগালাজ করে। এসময় দু’পক্ষ বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়লে মুহূর্তের মধ্যে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। প্রায় ঘন্টাব্যাপি চলে এই সংঘর্ষে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়। খবর পেয়ে রায়নগর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সংঘর্ষে আহতদের শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স নেয়ার পর চিকিৎসকরা আব্দুল বারীর ভাতিজা টেংরাখালী গ্রামের আবুল হোসেন গাজীর ছেলে আমির আলীকে মৃত ঘোষণা করে। এছাড়া অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় একই গ্রামের সাকাত আলী শেখের ছেলে আব্দুল কাদের শেখ (৩৬) সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখান থেকে ঢাকায় নেওয়ার শনিবার (৯ জুলাই) ভোর রাত সাড়ে ৩টার দিকে পথে মারা যান আব্দুল কাদের।
খুলনা গেজেট / আ হ আ