সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ভেটখালি গ্রামে বসবাসকারি মুন্ডা সম্প্রদায়ের জমি স্থানীয় প্রভাবলাশী কর্তৃক জবরদখলের অভিযোগ উঠেছে। প্রতিকার চেয়ে ওই মুন্ডা পরিবারের স্বজনরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
ভেটখালি গ্রামের কল্যাণী মুন্ডা ও শুককুলী মুন্ডা জানান, তাদের ঠাকুর দাদা রাজু মুন্ডার নামে হরিনগর মৌজায় প্রায় ১৬ বিঘা জমি ছিল। মুন্ডাদের সম্পত্তি বিক্রি বা হস্তান্তরের আইন না থাকলেও একটি মহল মুন্ডা পদবী পরিবর্তণ করে সরদার বানিয়ে কৌশলে নামমাত্র টাকা দিয়ে ১৯৭৩ সালে ঠাকুরদাদা রাজু মুন্ডার কাছ থেকে নিতাই মন্ডল ও গৌর মন্ডল চার বিঘা, একই বছরে বাবা হিমচাঁদের কাছ থেকে হযরত গাজী তিন বিঘা, ট্যাংরাখালির মান্দার মেম্বর তিন বিঘা ও কাকা ফুলচাঁদের কাছ থেকে অভয় চরণ বিশ্বাস তিন বিঘা জমি লিখে নেন বলে জানা যায়।
এ ছাড়া ১৯৭২ সালের ১১ ডিসেম্বর ৫৪৭৫ নং রেজিষ্ট্রি কোবালা দলিল মূলে আমাদের কাকা ফুলচাঁদের কাছ থেকে আব্দুল মজিদ ও আব্দুল কাদের ২৩ শতক ও ১৯৭৩ সালে বাবা হিমচাঁদ মুন্ডার কাছ থেকে হযরত গাজীর দু’ ভাই আরশাদ গাজী ও সুন্নত গাজী বাড়িসহ ২৩ শতক ভিটা ও ২৬ শতক বিলান জমি লিখে নেয় বলে বলে চলতি বছরের ৬ ফেব্র“য়ারি বাবার মৃত্যু পরবর্তী সময়ে তারা দাবি করছে। মৃত্যুর আগে বাবার কাছ থেকে কেনা ৭২ শতক জমি আরশাদ বা ছুন্নত কোনদিনও দখল করতে আসেননি। বর্তমানে চার শতক জমি বর্তমান মাপ জরিপে তাদের বাবার নামে অনুমতি দখল দেখানো আছে।
কল্যাণী মুন্ডা আরো জানান, বাবার জমিতে তিনি পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করে আসছেন। সম্প্রতি তার ছোট বোন সরস্বতীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে হযরত গাজী বাবার কাছ থেকে নেওয়া জমি ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলেন। এ জন্য চার লাখ ২০ হাজার টাকা দাবি করেন হযরত আলী। জমি বিক্রির কোন আইনগত কারণ না থাকায় তারা জমি পাল্টা দলিল করে নিতে আপত্তি জানান। এমন পরিস্থিতিতে গত বৃহষ্পতিবার সকালে হযরত গাজীর কথামত তার ভাইপো শওকত গাজী, মোসলেম উদ্দিন, সোরা গ্রামের আলতাফ হোসেন, এরশাদ ও মুজিবরসহ কয়েকজন তাদের চার শতক জমি মেপে দিয়ে গোয়াল ঘরসহ বাকী জমি ঘিরে নেন। এরপর থেকে তারা গরু ছাগল নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন।
কল্যাণী মুন্ডা অভিযোগ করে বলেন, আরশাদ গাজী ও ছুন্নত গাজী তার বাবার কাছ থেকে বসতবাড়িসহ জমি কিনে নিলেন কিভাবে ? তাদের জমি হস্তান্তরে অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, বৈধ দলিল হলে বাবার মৃত্যুর পরে হযরত গাজীরা তার বাবার মৃত্যুর পর দখল নিতে আসতো না। বর্তমানে তার বাবার বসতবাড়িসহ ভিটা জমি ফিরিয়ে দেওয়ার নামে তার ছোট বোন সরস্বতীর কাছে চার লাখ ২০ হাজার টাকা দাবি করা হয়েছে। তারা হস্তান্তর নিষিদ্ধ এসব জমি ফেরত পেতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হযরত গাজী সোমবার সকালে বলেন, ১৯৭৩ সালে তার ভাই আরশাদ ও ছুন্নত বিলান ৪৬ শতক ভিটা, ২৬ শতক বিলান ও তিনি তিন বিঘা বিলান জমি হিমচাঁদ মুন্ডার কাছ থেকে কিনেছেন। হিমচাঁদের স্ত্রী তাকে ধরম বাবা ডাকায় তিনি হিমচাঁদ ও তার স্ত্রীর জীবদ্দশায় দু’ ভাইকে ২৩ শতক ভিটা জমিতে যেতে দেননি। ছয় বছর পূর্বে স্ত্রী ও গত ৬ ফেব্রুয়ারি হিমচাঁদ মারা যান। হিমচাঁদের ছেলে না থাকায় বড় জামাতা কমলেশ মুন্ডা শ্বশুর শ্বাশুড়িকে দেখা শুনা করতো ওই বাড়িতে থেকেই। ওই জমির উপর দিয়ে যাতায়াতের রাস্তা না দেওয়ায় হিমচাঁদের ছোট মেয়ে সরস্বতী ক্ষব্ধ হন।
তিনি আরো বলেন, বিষয়টি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের জানালে তারা কাগজপত্র দেখে কমলেশ মুন্ডাকে চার শতক বাদে ওই জমি ছেড়ে দিতে বলেন। এরপরও তারা রাস্তার জায়গায় পুকুর নির্মাণ করায় গত বৃহষ্পতিবার ভাইপো শওকতসহ কয়েকজন রেকডীয় চারশতক ছাড়াও পাঁচ শতক জমি বাদ দিয়ে বাকী অংশ গোয়ালঘরসহ নেট দিয়ে ঘিরে দখলে নিয়েছে। হিমচাঁদের ছোট মেয়ে ওই জমি নেওয়ার জন্য মঙ্গলবার তার কাছে আসবে বলে জানান তিনি।
এবিষয় জানতে চাইলে সাতক্ষীরা জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাড. আবুল কালাম বলেন, মুন্ডাদের সম্পত্তি অবৈধভাবে দলিল বা কোন কাগজপত্রের মাধ্যমে হস্তান্তর দেখানো হলে তা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাতিল করা যাবে। শুধু হযরত নয়, আওয়ামী লীগের সাবেক এক সাংসদ ছাড়াও বাঘা বাঘা লোকজন মুন্ডাদের পদবী পরিবর্তণ করে অবৈধ হস্তান্ত—রের মাধ্যমে শত শত বিঘা জমির মালিক বনের গেছেন। মুন্ডারা অশিক্ষিত ও অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হওয়ায় এ হস্তান্তর সম্ভব হয়েছে। তাই বিলুপ্তির পথে মুন্ডা জাতিকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্টপোষকতা দরকার।
খুলনা গেজেট/কেএম