দীর্ঘ ৪০ বছর পর ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকদের দাবি পূরণ হতে যাচ্ছে। ভাগ্য খুলছে প্রথম ধাপে ১ হাজার ৫১৯ ইবতেদায়ী মাদ্রাসার ৬ হাজারের বেশি শিক্ষকের। তাদের এমপিওভুক্তির প্রস্তাবের ফাইলে শেষদিন বুধবার স্বাক্ষর করে গেছেন বিদায়ী শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। ফলে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে তারা এমপিওভুক্ত হচ্ছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বুধবার বিদায়ী বক্তব্যে বিষয়টির ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন ওয়াহিদ উদ্দিনমাহমুদ নিজেই। তিনি বলেছেন, একই কারিকুলামে পড়াশুনা করিয়ে সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের সঙ্গে ইবতেদায়ী শিক্ষকদের চরম বৈষম্য ছিল। সেই বৈষম্য নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশে অনেক ইবতেদায়ী মাদ্রাসা আছে। এর মধ্যে অনেকগুলো অনানুষ্ঠানিক। কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠানের নথি (রেজিস্ট্রেশন) আছে। সরকারি প্রাথমিক স্কুলের মতো তারা বাংলা, ইংরেজি গণিত পড়াচ্ছে। অবকাঠোমো, শিক্ষক থাকার পরও তাদের এমপিওভুক্ত করা হয়নি। তাদেরকে এমপিওভুক্ত করা সম্ভব। সেই কাজ আমি করে দিয়েছি।
মন্ত্রণালয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর গত নভেম্বর-ডিসেম্বর মাস থেকে ইবতেদায়ী শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করার জন্য কাজ করছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ। সারা দেশে এডুকেশনাল ইনস্টিটিউট আইডেন্টিফিকেশন নম্বর বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শনাক্তকারী নম্বর আছে (ইআইআইএন) এমন ১ হাজার ৫১৯টি মাদ্রাসাকে এমপিও করার ফাইল প্রধান উপদেষ্টার কাছে পাঠানো হবে। আজ বুধবার (৫ মার্চ) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শেষ কর্মদিবসে সেই ফাইলে স্বাক্ষর করে গেছেন বিদায়ী শিক্ষা উপদেষ্টা। সেই ফাইল এখন প্রধান উপদেষ্টার কাছে পাঠানো হবে। তার সম্মতি মিললে মে মাসের মধ্যে শিক্ষকরা বেতন-ভাতা পেতে পারেন।
এদিকে আজ বঙ্গভবনে নতুন শিক্ষা উপদেষ্টার শপথ অনুষ্ঠানে এই শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির বিষয়টি অর্থ বিভাগের সচিবকে অবহিত করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা। এ সময় অর্থ সচিব প্রধান উপদেষ্টার সম্মতি মিললে টাকা ছাড় করার বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বাস দেন।
জানতে চাইলে কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম বুধবার ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিদায়ী উপদেষ্টা এই ফাইলে স্বাক্ষর করেছেন। ফাইলটি এখন প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ের অনুমতির জন্য পাঠানো হবে। তিনি সদয় অনুমতি দিলে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করা হবে।
কতদিন লাগতে পারে— জানতে চাইলে সচিব বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় চলতি বছরের বাজেট বরাদ্দ থেকে অর্থ ছাড়ের আশ্বাস দিয়েছেন। মে মাসের বেতন যেন শিক্ষকরা পান সেই চেষ্টা চালাচ্ছি।
বিদায়ী বক্তব্যে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ইবতেদায়ী মাদ্রাসায় প্রায় একই কারিকুলামে পাঠদান করা হয়। কিন্তু সরকারি স্কুলের শিক্ষকরা শতভাগ সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেলেও ইবতেদায়ী শিক্ষকরা নামেমাত্র ৩ হাজার টাকার মতো অনুদান পান, এটা চরম বৈষম্যে। অথচ আলিয়া মাদ্রাসায় পড়াশুনা করা অনেক ছাত্র শুধু দেশে নয়, বিদেশেও শিক্ষকতাসহ বিভিন্ন পেশায় সুনামের সঙ্গে চাকরি করছেন। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে সাধারণ শিক্ষা ও আলিয়া মাদ্রাসার মধ্যে পার্থক্য দেখি না। যেই বৈষম্য ছিল সেটি দূর করা হবে। এমপিওভুক্ত করা হচ্ছে।
ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে জট থাকায় একসাথে সবাইকে এমপিওভুক্ত করা সম্ভব না। যেসব মাদ্রাসার নথি (রেজিস্ট্রেশন) আছে সেগুলো প্রথমধাপে এমপিওভুক্ত করা হবে। পর্যায়ক্রমে সবাইকে এমপিওভুক্ত করা হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো ইবতেদায়ী মাদ্রাসাকে এমপিওভুক্ত করতে যাচ্ছে সরকার। এর আগে কয়েক দফা উদ্যোগ নিলেও শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি। এবার পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন সচিবের নেতৃত্বে শিক্ষকদের দুঃখ মোচনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। প্রথমবারের মতো নিবন্ধিত ১ হাজার ৫১৯টি ইবতেদায়ী মাদ্রাসা এবং সেখানে কর্মরত শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করা হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী মে মাস থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা বেতন-ভাতা পেতে পারেন। এসব শিক্ষকের এমপিও দিতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট থেকে ১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাবনা রেখে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠানো হচ্ছে।
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের হিসাবে বর্তমানে দেশে ৬ হাজার ৯৯৭টি (কোডভুক্ত) স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা আছে। এ ছাড়া মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের হিসাবে আরও পাঁচ হাজারের মতো মাদ্রাসা আছে। তার মধ্যে ইআইআইএনধারী ১ হাজার ৫১৯টি মাদ্রাসার একজন প্রধান শিক্ষক ধরে মোট চারজন শিক্ষক এমপিওভুক্ত হবেন। সেই হিসাবে ৬ হাজার ৭৬ জন শিক্ষক এমপিওভুক্ত হতে পারেন।
খুলনা গেজেট/এমএম