খুলনা, বাংলাদেশ | ৩রা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৭ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  তেহরানে বাংলাদেশ দূতাবাস ঝুঁকিতে, সবাইকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত

শেখ হাসিনার রান্না করেই বিপুল সম্পদ গড়েছেন বাবুর্চি মোশারফ

গেজেট ডেস্ক

গত ৫ আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে আওয়ামী সরকারের এমপি-মন্ত্রীদের দুর্নীতির একের পর এক তথ্য বের হয়ে আসছে। হাসিনার এমপি-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদকে) জমেছে অভিযোগের পাহাড়। এবার বেরিয়ে এলো হাসিনার ব্যক্তিগত বাবুর্চির থলের বিড়াল।

ফরিদপুরের সালথা উপজেলার ভাওয়াল ইউনিয়নের বড় কামদিয়া গ্রামের কৃষক রহমান শেখের ছেলে মো. মোশারফ শেখ (৪৫)। পড়ালেখা না করায় নিজের নামটা পর্যন্ত লিখতে পারতেন না। তিনি সদ্য বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত বাবুর্চি ছিলেন ২৭ বছর। ৫ আগস্টের পর গা ঢাকা দেন মোশারফ।

সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ দিয়েছেন সালথা উপজেলার ভাওয়াল ইউনিয়নের বড় কামদিয়া গ্রামের কৃষক চাঁন মিয়া ফকিরের ছেলে সাগর মিয়া। এরপর থেকে বেরিয়ে আসছে মোশারফের নানা অপকর্ম, নিরহ মানুষের ওপর অত্যাচার-জুলুম ও সম্পদের তথ্য।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত বাবুর্চি মো. মোশারফ শেখ। ৩০ বছর আগে পাবনার একটি হোটেলে বাবুর্চি হিসাবে কাজ শুরু করেন। এর মাত্র দুই বছর পর ১৯৯৬ সালে ভাগ্যক্রমে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসার বাবুর্চির কাজ পান। এরপর ঘুরে যায় মোশারফের ভাগ্যের চাকা। বাবার সম্পত্তি থেকে ভাগ পেয়েছেন মাত্র ৫ শতাংশ জমি। এখন তিনি কয়েক কোটি টাকার সম্পদের মালিক। গ্রামে ও শহরে রয়েছে তার বাড়ি-গাড়ি। এছাড়া মোশারফ তার নিজ গ্রামে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। সাধারণ মানুষের ওপর হামলা-মামলা ও তাদেরকে জিম্মি করে জমি দখল করতে থাকেন।

শুধু গ্রামবাসীর ওপর অত্যাচার করে ক্ষ্যন্ত হননি তিনি, নিজের পরিবারও রেহাই পায়নি তার কাছ থেকে। গত পাঁচ বছর আগে দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে আটকিয়ে রেখে নিজের স্ত্রীকে জোর করে বাড়ি থেকে বের করে দেন মোশারফ। এখনও তার বাড়িতে স্ত্রী আসার আর সুযোগ পায়নি।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার বাবুর্চি মোশারফ হোসেন বড় কামদিয়া গ্রামের বাসিন্দা। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় কৃষক চাঁন মিয়া ফকিরের বড় কামদিয়া ৮১ নম্বর মৌজার ৬১৮ নম্বর দাগের ৪৩শতাংশ জমি জোরপূর্বক দখল করে বাড়ি নির্মাণ করে তিনি। বিভিন্ন সময় ওই জমি ছেড়ে দিতে বললে মোশারফ হুকমি-ধামকি ও মারধর করে কৃষক চাঁন মিয়া ফকির ও তার পরিবারকে এলাকা ছাড়া করেন। আওয়ামী সরকারের পতনের পর গত ১ জুন কৃষক চাঁন মিয়ার পরিবারের দখল করা জমি উদ্ধার করতে গেলে মোশারফ তার লোকজন নানাভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছে।

ভুক্তভোগী কৃষক চাঁন মিয়া ফকিরের ভাতিজা সেন্টু ফকির জানান, আমার চাচা একজন গরীব কৃষক। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে শেখ হাসিনার বাবুর্চি মোশারফ হোসেন তার ৪২ শতাংশ জমি দখল করে পাকা ঘর নির্মাণ করে এবং ওই ঘরের চালের ওপর একটি নৌকা তৈরি করে টানিয়ে রাখেন। তখন আমরা পুলিশ প্রশাসনের কাছে গিয়েও কোনো সমাধান পাইনি। বরং জমি দখল নিয়ে মুখ খুললেই আমাদেরকে মারধর করে ও মামলা দিয়ে এলাকা ছাড়া করে রাখতেন মোশারফ। শুধু আমাদের পরিবার নয়, মোশারফ শেখ হাসিনার বাবুর্চি হওয়ায় পুরো বড় কামদিয়া গ্রামের সাধারণ মানুষের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছেন।

মোশারফ এর প্রতিবেশী মো. জামাল শেখ জানান, মোশারফের বাবা অন্যের জমিতে শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালাতেন। অভাবের সংসার হওয়ায় মোশারফ পড়ালেখাও করতে পারেনি। ছোট সময় থেকেই তিনি পাবনা শহরের একটি হোটেলের বাবুর্চির কাজ করতেন। তখন তিনি বাবার সম্পত্তির ভাগ পান মাত্র ৫ শতাংশ জমি। কিন্তু ১৯৯৬ সালে তিনি শেখ হাসিনার বাসার বাবুর্চির চাকরি পাওয়ার পর থেকে যেন আলাদীনের চেরাগ পেয়েছেন। বর্তমানে কামদিয়া গ্রামে ১০০ শতাংশ জমির ওপর করেছেন বাড়ি। ফসলের মাঠেও ১৫০ শতাংশ জমি রয়েছে তার।

তিনি আরও জানান, ফরিদপুর শহরের হাড়োকান্দী এলাকায় ১২ শতাংশ জমির ওপর একটি বাড়ি ও রাজবাড়ি রাস্তামোড় এলাকায় ৮ শতাংশ জমির ওপর একটি বাড়ি রয়েছে তার। এ ছাড়া ঢাকা ও ফরিদপুর শহরে একাধিক ফ্ল্যাট-প্লট ও গাড়ি রয়েছে বলে আমাদের কাছে মোশারফ নিজেই বলেছেন। বর্তমান সরকারেরর গোয়েন্দা সংস্থা যদি অনুসন্ধান করে তাহলে মোশারফের অনেক অজানা তথ্য ও সম্পদের হিসেব বেরিয়ে আসবে।

এসব বিষয়ে বক্তব্য নেয়ার জন্য শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত বাবুর্চি মোশারফের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। এমনকি তার গ্রামের বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার বড় মেয়ে ফারজানা আক্তার মুন্নি মোশারফ এর বিরুদ্ধে ওঠার সকল অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, এই গ্রামের জমি নিয়ে প্রতিবেশীর সাথে আমাদের ঝামেলা চলছে, এই ঝামেলার কারণে আমার বাবা ও ফুফাকে মেরে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে আমার প্রতিবেশীরা।

এ ব্যাপারে সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতাউর রহমান জানান, জমি দখলের বিষয় নিয়ে মোশারফের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!