কনকনে শীতে হালকা হিম শীতল বাতাস জানিয়ে দিচ্ছে ঋতু পরিবর্তনের কথা। এর ভেতর আবারও হয়ত শুরু হতে পারে করোনাভাইরাসের দাপট। তার মাঝে খুসখুসি সর্দি-কাশি বারোটা বাজাচ্ছে স্বাস্থ্যের। শীতের কারণে কিছু সমস্যা অনেকেরই হয়, যেমন- খাবার হজম না হওয়া, পেট ফাঁপা, পাতলা পায়খানা, আমশয়, জ্বর, নিউমোনিয়া, ত্বকের নানা ইনফেকশন ইত্যাদি।
যারা শহুরে জীবনে নানা কাজ-কর্মের মাধ্যমে নিজেদের ব্যস্ত রাখেন। তারা প্রতিদিনের কাজে বেশকিছু বিষয়ে ভুলেই জান যে, শরীরের দিকে নজর দেয়া উচিত। আর যখন শরীর তার নিজের ভাষায় জানান দেয় যে, তার প্রতি খেয়াল করা দরকার তখন শুধুই মনে পড়ে আহা কিছু সময় আগে যদি জানতাম! কোন কোন বিষয়ে খেয়াল করা দরকার আসুন জেনে নেই-
খাবার-দাবার : শীতকালে নানা খাবারের আয়োজন এমনিতেই থাকে। পিঠা খাওয়ার ধুম আর বিয়ের আয়োজন আমাদের রসনার পরিতৃপ্তির অনেকটা জায়গাজুড়ে। ফলে একেবারে খাবারের মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে দিলে দেখবেন আপনার শরীর নানাভাবে তার সমস্যার কথা জানিয়ে দিচ্ছে। মূলত খেয়াল রাখবেন খাবারের পরিমাণ যেন অতিরিক্ত না হয় এবং তেলসমৃদ্ধ ও মিষ্টি জাতীয় খাবার যেন আপনাকে গ্রাস না করে ফেলে। এই খাবারগুলো হঠাৎ খাওয়া হয় বলে পেটের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।
পানি জীবন : ‘পানির অপর নাম জীবন’- ছোটবেলা থেকে পাঠ্যবইতে থেকে শুরু করে পত্রিকার পাতায় কোথায় পড়িনি এই প্রবাদ বাক্যটি। কিন্তু শীত এলেই কথাটা কতটা সত্যি তা হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যায়। আসলে হয় কী, শীতে আবহাওয়া শুকনো হয়ে থাকে বলে তার প্রভাবে শুকিয়ে যেতে থাকে আমাদের শরীরও। শুধু ত্বকেই ভাঁজ পড়ে না, পাশাপাশি শরীর ভেতর থেকেও শুকিয়ে যায়। তাই শীতে ভালো থাকতে হলে ভেতরে-বাইরে পানি ছাড়া গতি নেই। তেষ্টা না পেলেও দিনে লিটার দুয়েক পানি আপনাকে খেতেই হবে। অন্যথায় অসুস্থতা ছাড়া আর কিছু পাওনা হবে না।
ত্বকের যত্নে যা করবেন : রূপটান : শীতের ক্ষতিকর প্রভাব সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ত্বকের ওপরে। একেবারে হাতেনাতে বোঝা যায়। কতটা দুর্দশা হয়েছে ত্বকের। ফলে এই সময় ত্বক এমনিতেই খুব সংবেদনশীল একটা পর্যায়ে থাকে। তাতে হয় কী সামান্য অনিয়মেও র্যাশ, অ্যালার্জি দেখা দেয়। তাই এই শীতে মেক-আপ, ক্রিম- এসব রূপটানের জিনিস খুব সাবধানে ব্যবহার করুন এবং কম দামি কিছু ব্যবহার না
করাই ভালো। কেননা পারদযুক্ত কম দামের প্রসাধনী শুধু শীতে কেন, বছরের যে কোনো সময় ত্বকের বারোটা বাজানোর পক্ষে আদর্শ। শীতে ক্ষতিটা একটু তাড়াতাড়ি হয় এই যা। পাশাপাশি খুব হালকা ঘরোয়া কোনো ফেস-প্যাক ব্যবহার করতে পারেন ত্বককে কোমল রাখার জন্য।
এই যে বলছি শীতে ত্বকের ক্ষতি হয়। সে তো জানা কথা। কিন্তু ক্ষতিটা ঠিক কীভাবে হয় বলুন তো? আসলে এই সময় ত্বকের অ্যাসিডিটির লেভেল কমে যায়। ফলে ত্বক তার আর্দ্রতা হারায়। খুব তাড়াতাড়ি শুকনো অনুজ্জ্বল হয়ে পড়ে। ত্বককে তাই শীতে তরতাজা রাখার একমাত্র উপায় তেলের আদরে রাখা। রোজ স্নানের আগে নিয়ম করে তেল মাখুন বা পরে মাখুন দেখবেন রুক্ষ শীতেও ত্বক দিব্যি চকচকে থাকছে।
পায়ের যত্নে যা করবেন : শীতে পা নিয়ে ভোগেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুর্লভ। কিছু না কিছু একটা সমস্যা পায়ে দেখা যায় শীতে। হয় দুর্গন্ধের সমস্যা, নয় ফাটা গোড়ালির সমস্যা। এর হাত থেকে বাঁচতে পা পরিষ্কার রাখুন। রোজ বাইরে থেকে এসে ভালো করে সাবান দিয়ে ঘষে পা পরিষ্কার রাখুন। তাতে শুকনো, মরা কোষ বেরিয়ে যাবে, পায়ে দুর্গন্ধ হবে না। এছাড়া শীতে পা ফাটার হাত থেকে বাঁচতে বাড়িতেও খালি পায়ে থাকা বন্ধ করুন। তাতে পায়ে সরাসরি ঠাণ্ডা লাগবে না। এছাড়া ঘুমাতে যাওয়ার আগে পায়ের পাতায়, গোড়ালিতে কোনো ক্রিম মাসাজ করুন। সবার শেষে মোজা পরে নিন। তাতে ক্রিমের আস্তরণের ওপরে ধুলো-বালি জমে পায়ের ক্ষতি করতে পারবে না।
খুলনা গেজেট/ এস আই