শীতে অ্যালার্জির সমস্যায় ভুগছেন অনেকেই। এ সময় বৃষ্টি না হওয়ার কারণে বাইরে ধুলোবালি ও বাতাসে জীবাণুর পরিমাণ বেড়ে যায়, যা থেকে ত্বকে অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দেয়। কারও কারও ক্ষেত্রে অ্যালার্জি সামান্য অসুবিধা করে, কারও ক্ষেত্রে জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে।
এদিকে করোনা সংক্রমণের হার দিন দিনই বাড়ছে। সেই সঙ্গেই ধুলাবালি ও আবহাওয়ার কারণে অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বাড়ছে। এমনিতেই ঘরের কাজ করতে গিয়ে বারবার হাঁচি, চোখ দিয়ে পানি পড়া বা চোখ লাল হয়ে যাওয়ার সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বারবার এমন হওয়া রোধ করা না গেলে ভবিষ্যতে সামান্য হাঁচি-কাশিই গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে।
এই সময় বাড়িতে থেকেও অ্যালার্জিতে ভোগার কারণ হিসেবে ঘরের ভিতরেই ধূমপান, অতিরিক্ত ভারী পর্দা বা কার্পেটের ব্যবহার, জীবাণু পরিষ্কারের কাজে রাসায়নিক পদার্থের অতিরিক্ত ব্যবহার এবং পোকামাকড় তাড়ানোর ধূপ বা স্প্রে জাতীয় জিনিসেরও বড় প্রভাব রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
এছাড়া গরুর মাংস, চিংড়ি মাছ, ইলিশ, গরুর দুধ, বেগুন খেলেই অনেকেরই শুরু হয় গা চুলকানি। এ থেকে চামড়ায় লাল লাল চাকা হয়ে ফুলে ওঠে। অনেক সময় ফুলের ঘ্রাণ নিলেও অস্বস্তি লাগে। এসব উপসর্গ দেখা দিলে আপনার অ্যালার্জি আছে ধরে নিতে হবে।
বিশেষজ্ঞের মতে, এখন গরম এবং আর্দ্রতা বেশি হওয়ায় ভারী পর্দা ও কার্পেট ঘরের মধ্যে অস্বাভাবিক পরিবেশ তৈরি করছে। অনেকের ঘরে এসি চলছে। এতে কারও কারও অ্যালার্জির সমস্যা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনকার আবহাওয়ায় অ্যালার্জি থেকে বাঁচতে ঘরে আলো-বাতাস চলাচল করতে দিতে হবে। যতটা সম্ভব স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখতে হবে।
তাদের মতে, খোলা জায়গায় ফেলে রাখা খাবার, ঠিক মতো শুকনো না-হওয়া বা দীর্ঘদিন ব্যবহার না-করা পোশাক থেকেও বিভিন্ন প্রকার অ্যালার্জি হতে পারে। এ কারণে যাদের আগে অ্যালার্জি হয়েছে এবং কী থেকে সমস্যা হয় তা জানা আছে, সেগুলি যথাসম্ভব এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতিতে অ্যালার্জির লক্ষণ দেখা দিলে বিভ্রান্ত হতে পারেন সাধারণ মানুষ। কারণ, গলা ব্যথা, গলা খুসখুস, কাশি এবং শ্বাসকষ্ট দুই রোগই হতে পারে। তবে চিকিৎসকদের মতে, অ্যালার্জির ক্ষেত্রে কখনও জ্বর থাকে।
কোভিড-১৯ মূলত শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ হওয়ায় অ্যালার্জি বা হাঁপানির রোগীদের উপরে মানসিক চাপ আরো বেড়েছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। তাদের মতে, যার আগে থেকেই অ্যালার্জির ওষুধ খান তাদের এই সময় ওষুধ বন্ধ করা ঠিক হবে না। প্রয়োজনে নিয়মিত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে তাদের সবসময় খোলামেলা পরিবেশ থাকা দরকার। অনেক অ্যালার্জি রোগীর এই সময় মাস্ক পরে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাচ্ছে। আবার মাস্কের কাপড় থেকেও অনেকের সমস্যা হচ্ছে। অথচ এখন মাস্ক পরাটাও অত্যন্ত জরুরি। সে ক্ষেত্রে তাদের নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলেছেন বিশেষজ্ঞরা।
জেনে নিন কোন খাবারগুলো আপনার অ্যালার্জির সমস্যা কমাতে সাহায্য করে-
লেবু : লেবু হলো অন্যতম সাইট্রাস জাতীয় ফল যা অ্যালার্জির ক্ষেত্রে দারুণ কাজ করে থাকে। পানি এবং মধুর সঙ্গে লেবুর রস মেশালে শরীরের জন্য দারুণ এক ডিটক্সিফাইং পানীয় তৈরি হয়ে যায়। নিয়মিত এই পানীয় পান করলে শরীরের টক্সিক পদার্থগুলো বের হয়ে যেতে সাহায্য করবে এবং অ্যালার্জির সমস্যা কমে আসবে।
কলা : কলার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে কম বেশি আমরা সকলেই জানি। তবে খুব দারুণ একটা ব্যাপার হচ্ছে, অ্যালার্জি জাতীয় কোনো খাবার খাওয়ার ফলে শরীরে তার প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে কলা খুবই উপকারী একটি খাদ্য। শরীরে লাল রঙের ছোট র্যাশ দেখা দিলে অথবা পেটের সমস্যা দেখা দিলে কলা খুবই উপকারী একটি খাদ্য।
শসা ও গাজরের রস : কোনো খাবার খাওয়ার পরে হুট করেই শরীরে অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিলে শসা এবং গাজরের রস একসঙ্গে মিশিয়ে খেয়ে ফেললে খুব দ্রুত কাজে দেবে। শসা এবং গাজর দুইটি সবজিতেই এন্টি অ্যালার্জিক উপাদান শরীরে অ্যালার্জির সমস্যাকে কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।
আদা ও আদা চা : আদা গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল এবং অ্যালার্জির সমস্যার ক্ষেত্রে খুব ভালো কাজে দেয়। প্রদাহজনক বিরোধী এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট মূলক উপাদান আদাতে থাকায় বমি ভাব, মাথা ঘোরানো, হজমের সমস্যার এমনকি ডায়েরিয়ার ক্ষেত্রেও খুব কাজে দেয় আদা।
গ্রিন টি : গ্রিন টি শুধুমাত্র ওজন কমাতেই নয় অ্যালার্জির সমস্যা কমাতেও সাহায্য করে থাকে। গ্রিনটিতে থাকা এন্টি-অক্সিডেন্ট, এন্টি-হিস্টাসিন এবং প্রদাহ বিরোধী উপাদানের জন্য অ্যালার্জিক খাবার খাওয়ার ফলে যে সকল সমস্যা দেখা দেয় তা বাঁধা দিয়ে থাকে।
খুলনা গেজেট/এনএম