টনসিল খুব সাধারণ ব্যাধি, যা সব বয়সের মানুষের হয়ে থাকে। এটি এক ধরনের ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ। টনসিল হলে পরিবেশগত কারণে এর প্রদাহ তীব্র হয়ে থাকে। আর টনসিল সংক্রান্ত যে কোনো ধরনের সমস্যাকে বলা হয় টনসিলাইটিস।
টনসিল সাধারণত শীতে বেশি হয়ে থাকে। ঋতু পরিবর্তন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেককেই এই রোগে ভুগতে দেখা যায়। টনসিল হলে সমস্যাগুলো শুরুতে হালকা থাকলেও এর সঠিক চিকিৎসা নেয়া না হলে জটিল আকার ধারণ করে। শুরুতে হালকা ব্যথা থেকে তা তীব্র হওয়া, কথা বলায় সমস্যা ও ঘুমের মতো দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডে প্রভাব ফেলে থাকে। এর চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে বিশ্রাম নেয়া এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যথা দূর করতে অ্যান্টিবায়োটিক নেয়া। শীতে টনসিল হওয়ার কারণ এবং এর প্রতিকার নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া। এবার এ বিষয়ে জেনে নেয়া যাক।
শীতকালে টনসিল সংক্রান্ত সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। এ সময় শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ বৃদ্ধির সঙ্গে সর্দি, কাশির সমস্যা হয়ে থাকে। এর অন্তরালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হওয়া এবং শীতের শুষ্ক বাতাসের সংস্পর্শ থেকে অন্যান্য সংক্রমণের ঝুঁকিও বেড়ে থাকে। ধুলাবালির মতো উপাদানে অ্যালার্জেন থাকে এবং এসব নাক-মুখের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলে জ্বালাতন হয়। যা থেকে টনসিলের সমস্যাও বেড়ে যায়।
কারণ ও উপসর্গ: সাধারণত টনসিল ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ ও পরিবেশগত কারণে হয়ে থাকে। এটি সৃষ্টিকারী সংক্রমণের মধ্যে এপস্টাইন-বার ভাইরাস রয়েছে। যা সাধারণত সর্দি সৃষ্টি করে। আর টনসিল সংক্রান্ত অন্যান্য সমস্যার জন্য প্রাথমিক ব্যাকটেরিয়া হচ্ছে স্ট্রেপ্টোকক্কাস পাইজেনস। এ ক্ষেত্রে অ্যালার্জেন ও পরিবেশগত কারণে এই ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে।
টনসিল সংক্রান্ত সমস্যা জটিল হলে সাদা বা হলুদ ছোপযুক্ত ফোলা এবং লাল বর্ণ হতে পারে। রোগীর জ্বর হওয়া, শরীর ব্যথা হওয়া এবং খাবার খেতে গলায় অস্বস্তি বোধ করার মতো সমস্যা হয়। আবার সার্ভিকাল লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়া, নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ এবং অল্প পরিমাণ তরল পানেও মারাত্মক ডিহাইড্রেশন হয়ে থাকে।
রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা: টনসিলের সমস্যা শনাক্তকরণের জন্য ক্লিনিকাল পরীক্ষা, ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ শনাক্ত করতে গলার সোয়াব কালচার এবং ক্ষেত্র বিশেষ মনোনিউক্লিওসিসের অনুপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার জন্য রক্ত পরীক্ষার প্রয়োজন হয়।
ভাইরাল টনসিলাইটিস: ভাইরাল টনসিল বা এ সংক্রান্ত সমস্যায় বেড রেস্ট বা বিছানায় বিশ্রাম, ব্যথা উপশমকারী ওষুধ সেবন করতে হয়। এছাড়া ঘরোয়া উপায়ের মধ্যে রয়েছে লবণ-পানি গার্গল করা।
ব্যাকটেরিয়াল টনসিলাইটিস: ব্যাকটেরিয়া সংক্রান্ত টনসিল সমস্যায় সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হয় রোগীকে।
দীর্ঘস্থায়ী টনসিলাইটিস: টনসিল সমস্যা ঠিক হওয়ার পর পুনরায় কিংবা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনার ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। অনেক সময় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে টনসিল অপসারণ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।
পরামর্শ: টনসিলের সমস্যা গুরুতর হলে, ফোড়া হলে বা গুরুতর ডিহাইড্রেশনের মতো জটিল সমস্যায় যত্নের জন্য একজন ইএনটি বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন হয়। নিজ থেকেও চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে অস্বস্তি কমে এবং উপসর্গগুলো যেন পুনরায় না হয় তা প্রতিরোধ করতে হবে। আবার যদি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অপসারণের মতো উন্নত পদক্ষেপগুলো দীর্ঘস্থায়ী করা হয় তাহলে অন্যান্য চিকিৎসায় ভালো সাড়া পাওয়া যায় না।
টনসিল সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক রোগ নির্ণয়। সচেতন হলে শুরুতেই এ রোগ শনাক্ত করা সম্ভব হয় এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা নেয়া যায়।
খুলনা গেজেট/এনএম