আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার পেলেন বাংলাদেশি কিশোর সাদাত রহমান। সাইবার অপরাধ থেকে শিশুদের সুরক্ষা নিয়ে একটি অ্যাপ তৈরি করে এ সাফল্য পেয়েছেন তিনি। ৪২টি দেশের ১৪২ জন শিশুর মনোনয়নের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছিল এ প্রতিযোগিতা। শুক্রবার এ পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। গত বছর এ পুরস্কার পেয়েছিল পাকিস্তানের নোবেল বিজয়ী তরুণী মালালা ইউসুফজাই। এএফপির বরাত দিয়ে এ খবর জানায় ফ্রান্স ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ফ্রান্স টোয়েন্টিফোর।
খবরে বলা হয়, ১৭ বছর বয়সী সাদাত নড়াইল আবদুল হাই সিটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। সাদাত রহমান সাইবার বুলিং ও সাইবার ক্রাইম থেকে শিশু-কিশোরদের রক্ষায় নানা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
সাদাত একজন ‘তরুণ চেঞ্জমেকার’ ও সমাজ সংস্কারক। সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়ে এক কিশোরীর (১৫) আত্মহত্যার পর কাজে নামে সাদাত। সে তার বন্ধুদের সহায়তায় ‘নড়াইল ভলেন্টিয়ারস’ নামের একটি সামাজিক সংগঠন শুরু করে। এ সংগঠন বেসরকারি সংস্থা একশনএইডের ‘ইয়ুথ ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ–২০১৯’–এ বিজয়ী হয়ে তহবিল পায়। এ তহবিলের মাধ্যমে তারা ‘সাইবার টিনস’ মোবাইল অ্যাপ তৈরি করে। এ অ্যাপের মাধ্যমে কিশোর–কিশোরীরা জানতে পারে কীভাবে ইন্টারনেট দুনিয়ায় সুরক্ষিত থাকতে পারে। প্রায় ১ হাজার ৮০০ কিশোর–কিশোরী এই অ্যাপ ব্যবহার করছে। এ অ্যাপের মাধ্যেম ৬০টির বেশি অভিযোগের মীমাংসা হয়েছে এবং ৮ জন সাইবার অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত হয়েছে।
সাদাত আরো বলে, অনলাইন বুলিংয়ের শিকার ১৫ বছর বয়সী এক কিশারীর আত্মহত্যার ঘটনার পর আমি এ কাজ শুরু করি। আমি সিদ্ধান্ত নিই তরুণদের সহায়তা দরকার এবং আমাদের এমনভাবে কাজ করা উচিত যাতে অন্য শিশুদের এ করুণ পরিণতি না হয়। অনেক ক্ষেত্রে শিশু-কিশোররা বড়দের দ্বারা যৌন নিগ্রহের শিকার হয়, যার মধ্যে রয়েছে তাদের কাছে পর্নো ছবি বা ভিডিও পাঠানো। নিজের পুরস্কারের টাকা দিয়ে সাদাত বিশ্বব্যাপী শিশুদের সুরক্ষার একটি মডেল তৈরি করতে চায় বলে জানায়।
সাদাত রহমানকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তার প্রশংসা করেছেন নোবেলবিজয়ী আর্চ বিশপ ডেসমনড টিটু। তিনি এএফপিকে বলেন, এই অদ্ভূত সময়ে যখন মনে হচ্ছে সব কিছু সংশয়ের মধ্যে আছে, তখন একদল তরুণ অন্যদের জন্য নিজেকে নিয়োজিত করে আমাদের সবাইকে আশাবাদী করে তুলছে পৃথিবীটাকে বাসযোগ্য করে তুলতে।
উল্লেখ্য, ২০০৫ সালে রোমে অনুষ্ঠিত নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ীদের এক শীর্ষ সম্মেলন থেকে এই পুরস্কার চালু করে ‘কিডস-রাইটস’ নামে একটি সংগঠন। শিশুদের অধিকার উন্নয়ন ও নিরাপত্তায় অসাধারণ অবদানের জন্য প্রতিবছর আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়। ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সীরা ওই পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য। গত বছর সুইডেনের শিশু পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ ও ক্যামেরুনের ডিভিনা মালম যৌথভাবে মর্যাদাপূর্ণ ওই পুরস্কার পান। ২০১৩ সালে এই পুরস্কার বিজয়ী মালালা ইউসুফজাই পরের বছর জয় করেছিলেন নোবেল।
খুলনা গেজেট/এমএম