খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  মানবতাবিরোধী অপরাধ : চিফ প্রসিকিউটর দেশে না থাকায় ফখরুজ্জামান ও সাত্তারের জামিন শুনানি ২ সপ্তাহ পেছাল আপিল বিভাগ
  আজ থেকে জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহ শুরু
  অ্যান্টিগা টেস্ট: শেষ দিনে বাংলাদেশের দরকার ২২৫ রান, হাতে ৩ উইকেট

শিশু বিশেষজ্ঞ ছাড়াই চলছে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

শিশু বিশেষজ্ঞ ছাড়াই চলছে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ড। গত ১৮ মাস ধরে হাসপাতালে কোন শিশু চিকিৎস্যক নেই। হাসপাতালে শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় মেডিকেল অফিসার দিয়েই চালানো হচ্ছে শিশুদের বর্তমান চিকিৎসা কার্যক্রম। এ কারণে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় ক্ষুব্ধ হাসপাতালে সেবা নিতে আসা শিশুর অভিভাবক ও স্বজনরা।

তবে সিভিল সার্জন বলছেন, ঘটনাটি দুঃখজনক হলেও সত্য। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বড়দল বাসিন্দা মেহেদি হাসান কয়েকদিন আগে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু সোহানাকে (৫ মাস) হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। তিনি জানান, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের পরিবেশটা ভালো। কিন্তু এখানে কোনো শিশু বিশেষজ্ঞ নেই। মেডিকেল অফিসাররা শিশুদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন বলে জেনেছি।

প্রায় ১০দিন দিন আগে হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি হন সাতক্ষীরা সদরের মেসেরডাঙ্গা গ্রামের হারুন অর রশিদের গর্ভবতী স্ত্রী মিতু আক্তার। কয়েকদিন আগে একটি সন্তান প্রসব করেছেন এই নারী। বর্তমানে গাইনি ওয়ার্ড থেকে সদ্যোজাত শিশুকে শিশু ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়েছে। শিশুটির মা মিতু আক্তার জানান, ভর্তি হওয়ার পর থেকে চিকিৎসার তেমন কোনো ত্রুটি পাইনি। তবে হাসপাতালে শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই বিষয়টি জানার পর চিন্তায় পড়ে গেলাম। হাসপাতালে একজন শিশু বিশেষজ্ঞ থাকলে ভালো হয়।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, গত ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত ৩০ দিনে সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে মোট ৫১৬ জন শিশু ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে শিশু ডায়েরিয়া ওয়ার্ডে ২৯৫ জন ও শিশু নিউমনিয়া ওয়ার্ডে ২২১ জন। বর্তমানে এই দু’টি ওয়ার্ডে ২১ ও ২৮ জন শিশু চিকিৎসাধীন আছে। এসময় মারা গেছে ৪টি শিশু। ২০২১ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর থেকে এই দু’টি ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি কমেছে। গত দুই মাসে এখান থেকে ৬০০ থেকে ৭০০ শিশু চিকিৎসা নিয়েছে। তার আগের মাসগুলোতে শিশু ওয়ার্ডে একশ’র বেশি শিশু রোগী ভর্তি থাকত। প্রতি মাসে চিকিৎসা নিয়েছে দেড় থেকে দুই হাজার শিশু। বিশেষজ্ঞ চিকিৎস্যক না থাকায় বর্তমানে হাসপাতালে শিশু রোগীর ভর্তি সংখ্যা কমে গেছে।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স নাছিমা খাতুন জানান, হাসপাতালটিতে একজন শিশু কনসালট্যান্ট খুব প্রয়োজন। এখন মেডিকেল অফিসার রওশন দায়েমী শিশুদের দেখাশোনা করছেন। জরুরি মুহূর্তে জরুরি বিভাগ থেকে পরামর্শ আবার কখনো কখনো মোবাইল ফোনে পরামর্শ নিয়ে শিশুদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। এর আগে যখন শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. অসীম কুমার স্যার ছিলেন, তখন অনেক রোগী ছিল। তিনি বদলি হওয়ার পর থেকে শিশু রোগীদের দেখার একটু সমস্যা হচ্ছে। তিনি জানান, অনেক অভিভাবক এসে জিজ্ঞেস করেন, এখানে শিশু বিশেষজ্ঞ কে? যখন জানতে পারেন হাসপাতালে কোনো শিশু বিশেষজ্ঞ নেই, তখন শিশুকে ভর্তি না করে অন্যত্র চলে যান।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ ফয়সাল আহম্মেদ বলেন, ডাঃ অসীম কুমার ছিলেন সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের খুব জনপ্রিয় একজন চিকিৎসক। তিনি বদলি হয়ে যাওয়ার পর শিশু বিভাগটির কার্যক্রম একটু ঝিমিয়ে গেলেও কোনো সমস্যা হচ্ছে না। মেডিকেল অফিসার রওশন দায়েমী নিয়মিত ইনডোর-আউটডোরে শিশু রোগী দেখছেন।

তবে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ ফয়সাল আহম্মেদ এর হাসপাতালে কম আসা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। তিনি ঠিকমত ডিউটি না করায় প্রশাসনিক কার্যক্রম সহ নানা অসুবিধা হয় বলে অভিযোগ করেন অনেকে। এছাড়া হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে শিশু চিকিৎস্যক, গাইনি, চক্ষু, জেনারেল সার্জন, নাক কান গলা, এন্সেথেসিয়া ডাক্তার সহ বেশ কয়েকজন মেডিকেল অফিসার নেই। যে কারণে সদও হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ হুসাইন শাফায়াত জানান, সদর হাসপাতালটি ১০০ শয্যার হাসপাতাল। এখানে শিশু চিকিৎসার জন্য ১৪টি শয্যা রয়েছে। এই ১৪ শয্যার বিপরীতে একসময়ে ১২০ জন শিশুকে চিকিৎসা আমরা দিয়েছি। কেউ কোনো অভিযোগ তুলতে পারেনি। দুঃখজনক হলেও সত্য যে গত দেড় বছরের বেশি সময় ধরে সদর হাসপাতালে এখানে কোনো শিশু বিশেষজ্ঞ পাচ্ছি না।

মেডিকেল অফিসার দিয়েই বর্তমানে হাসপাতালের শিশু বিভাগের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, নিয়মিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট করছি, শিশু বিভাগের একজন কনসালট্যান্ট প্রয়োজন। একই সাথে প্রয়োজন গাইনি, চক্ষু, জেনারেল সার্জন, নাক কান গলা, এন্সেথেসিয়া ডাক্তার সহ বেশ কয়েকজন মেডিকেল অফিসারের। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে, সামনে অনেকে প্রমোশন পাবেন। সেখান থেকে একজন শিশু সহ অন্যান্য কনসালট্যান্ট দেওয়া হবে।

 

খুলনা গেজেট/এএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!