প্রতিবন্ধিতা অথবা মানসিক বিকৃতি বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। তবে অন্যান্য বিকৃতি হতে শিক্ষণের বিকৃতির মধ্যে কিছুটা পার্থক্য বিদ্যমান এই যে,শিক্ষণের বিকৃতি সাধারণত: স্বাভাবিক ও প্রতিভাবান শিশুদের মধ্যেও দেখা যায়। বিশেষ ধরণের শিক্ষণ ক্ষমতার বিকাশের ত্রুটি সাধারণত: প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা,কথাবার্তা,ভাষার ব্যবহার,অথবা অঙ্গসঞ্চালনমূলক কৌশলে ধরা পড়ে। এসব বিকৃতির জন্য মস্তিষ্কের ক্ষয়-ক্ষতি বা মানসিক প্রতিবন্ধিতাকে দায়ী করা যায় না। তবে মনোযোগের অভাব ও অতিচঞ্চলতা এরুপ বিকৃতির জন্যও কারণ হতে পারে।
শিক্ষণ বিকৃতির লক্ষণ: (১) শিশু সামঞ্জস্যপূর্ণ ভাবে এক বা একাধিক স্কুল পাঠ্য বিষয়-যেমন: গনিত, বানান লিখন,পঠনে প্রত্যাশিত যোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ হয়। (২) শিক্ষা কার্যক্রমে শিশু তার বয়স উপোযোগী অন্যান্য শিশুদের তুলনায় পিছিয়ে পড়ে। (৩) বয়স উপযুক্ত অন্যান্য শিশুদের তুলানায় বুদ্ধিমত্তা, সংস্কৃতি ও চিন্তা চেতনায় এরা পিছিয়ে থাকে। (৪) এরুপ শিশুদের মধ্যে প্রেষণা ও সহোযোগিতামূলক মনোভাব তুলনা মূলক ভাবে কম থাকে। (৫) শিক্ষক ও পিতা-মাতাকে সন্তুষ্ট করার মনোভাব এদের মধ্যে তুলনামূলক ভাবে কম থাকে। (৬) শিক্ষা জীবনের প্রথম অবস্থায় শিশুদের মধ্যে এ সব বৈশিষ্ট্য ধারা পড়ে না, তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে শিক্ষণগত সমস্যা দেখা দিতে থাকে।
শিক্ষণ বিকৃতির কারণ: (১) মস্তিষ্ক তথ্য: অনেকে মনে করেন মস্তিষ্কের দুটি গোলার্ধের বা যোগাযোগের ত্রুটির কারণে শিক্ষণের বিকৃতি দেখা দিতে পারে।(২) বংশগত প্রভাব তথ্য: কিছু কিছু গবেষণায় পড়ার অক্ষমতায় বংশগতির প্রভাব সম্পর্কে প্রমান পাওয়া গেছে। (৩) জিন সংক্রান্ত গবেষণা: এ প্রকার গবেষণায় উক্ত বিকৃতির জন্য ৬ নং ক্রমোসোমের একটি এলাকে দায়ী করা হয়েছে।(৪) স্মৃতির কৌশল: শিক্ষণের বিকৃতিতে আক্রান্ত শিশুরা স্বাভাবিক শিশুর তুলনায় ভিন্নধর্মী শিক্ষণ কৌশল ব্যবহার করে থাকে।(৫)পাঠর অগ্রগতি মূল্যায়ন সংক্রান্ত তথ্য: এ সব শিশুরা তাদের অগ্রগতি ভাল ভাবে মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হয়।(৬) প্রেষণা তথ্য: এদের প্রেষণা ও অন্যান্য লক্ষ্য স্বাভাবিক শিশুর তুলনায় ভিন্ন প্রকৃতির হয়ে থাকে। (৭) দর্শন সংক্রান্ত তথ্য: প্রায়শ: বিভিন্ন গবেষণায়, শিক্ষণের বিকৃতিতে আক্রান্ত শিশুদের স্বাভাবিক দর্শন অক্ষমতার প্রমান পাওয়া গেছে।
শিক্ষণ বিকৃতি দূর করার কৌশল: (১) এলিস মডেল: শিক্ষণের বিকৃতিতে আক্রান্ত শিশুদের শিক্ষণ তরান্বিত করার জন্য এলিস উদ্ভাবিত সমন্বিত শিক্ষণ কৌশল’- একটি মডেল বেশ প্রভাব বিস্তার করতে পারে। এ মডেলে বেশ কয়েটি মৌলিক বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে- যেমন: সচেতনতা বৃদ্ধিকরণ,গঠন করণ, প্রয়োগ করণ, বিস্তৃত করণ; ইত্যাদি কৌশল সমূহ প্রয়োগ করে ফলপ্রসূ হাওয়া সম্ভব। (২) শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ: শিক্ষণে বিকৃত শিক্ষার্থীরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক শিক্ষণ কার্যক্রমে সমস্যার সম্মুখীন হয় – তার জন্য বিদ্যলয়ের প্রশাসনিক পরিবর্তন, শিক্ষকদের দক্ষতার মান উন্নয়নে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। (৩) শিক্ষণের বিষয়বস্তু খন্ডে খন্ডে বিভক্তকরণ: শিশুর জন্য শিক্ষনীয় বিষয়কে খন্ডে খন্ডে বিভক্ত করে ধাপে ধাপে শিখানো যেতে পারে। প্রত্যেক ধাপে শিশুর উন্নতিকে পুরস্কৃত করা গেলে শিক্ষার মান বাড়তে পারে। (৪) শিশুর ক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন করা: এ সব শিশুদের তাদের দক্ষতা সম্পর্কে ইতিবাচক অনুভ’তি লাভের সুযোগ প্রদান করতে হবে এবং সাফল্য গুলোকে পুরস্কৃত করা হলে, শিক্ষার্থীর মনোযোগ এবং প্রেষণা দু’ই বৃদ্ধি পেতে পারে।
শিক্ষণের বিকৃতি শিশুর স্বাভাবিক জীবন ধারা লাভে একটি বড় অন্তরায় হিসেবে বিবেচিত। সুতরাং এরুপ সমস্যা দেখা দিলে একজন দক্ষ মনোবিজ্ঞানীর সঠিক পরামর্শ গ্রহন করে শিক্ষণ বিকৃত শিশুর আত্মোন্নয়ণ সম্ভব হিসেবে বিবেচিত।
(লেখক: সহকারি অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, মনোবিজ্ঞান বিভাগ, সরকারি সুন্দরবন আদর্শ কলেজ,খুলনা।
খুলনা গেজেট/ এ হোসেন