গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। শিক্ষক সংকটের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। রুটিনমাফিক ক্লাস নেয়া যেমন সম্ভব হচ্ছে না, তেমনি ফলাফল দেয়ার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতা দেখা দিয়েছে। এর ফলে পরবর্তীতে রিটেক পরীক্ষা কিংবা ব্যাকলগ পরীক্ষা দিতে বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। পাশাপাশি সেশনজটে পড়তে হচ্ছে বিভিন্ন বিভাগকে। একাডেমিক কার্যক্রমের পাশাপাশি বিভাগের প্রশাসনিক কার্যক্রমেও দেখা দিয়েছে জটিলতা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শিক্ষক সংকটের কারণে দিনের পর দিন সেশনজট বেড়েছে,ফলাফল প্রদানে দেরি হচ্ছে, সময়মত ক্লাস নেয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এছাড়া শিক্ষকের উপরেও অতিরিক্ত কোর্স নেয়ার চাপ পড়ছে।
বশেমুরবিপ্রবিতে বর্তমানে ৭টি অনুষদের অধীনে ৩৩টি বিভাগ রয়েছে। যার অধিকাংশ বিভাগে দেখা দিয়েছে শিক্ষক সংকট।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ৪৮তম বার্ষিক প্রতিবেদনেও বশেমুরবিপ্রবির শিক্ষক সংকটের চিত্র ফুটে উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তথ্যমতে বর্তমানে বশেমুরবিপ্রবির ১১০৫৬ জন শিক্ষার্থীকে পাঠদান করছেন যার বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন ২৭২ জন। বিশ্বব্যাপী উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর গড় অনুপাতের নূন্যতম মানদণ্ড ধরা হয় ১:২০। অর্থাৎ প্রতি ২০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন করে শিক্ষক থাকতে হবে। কিন্তু বশেমুরবিপ্রবিতে এর অনুপাত ১:৪০ অর্থাৎ প্রতি ৪০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন করে শিক্ষক রয়েছেন।
শিক্ষক সংকট নিরসন নিয়ে সম্প্রতি কয়েকটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা দফায় দফায় আন্দোলন করেও কোন ফল পাননি। ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগ,রসায়ন বিভাগ,মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। ৫-৬ টি ব্যাচের জন্য ২-৩ জন করে শিক্ষক রয়েছেন এসব বিভাগে। এছাড়া অন্যান্য বিভাগেও শিক্ষার্থীদের তুলনায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক নেই। বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ হলেও উচ্চ শিক্ষার জন্য অনেক শিক্ষক দেশের বাইরে অবস্থান করায় তীব্র হয়েছে শিক্ষক সংকট।
শিক্ষক সংকট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি, সহযোগী অধ্যাপক ড. হাসিবুর রহমান বলেন,বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদেরকে ক্লাস, একাডেমিক কাজ, প্রশাসনিক কাজসহ অনেক কিছুই করতে হয়। শিক্ষক স্বল্পতার কারণে অতিরিক্ত ক্লাস নিতে হচ্ছে। ফলে একজন শিক্ষক হিসেবে গবেষণা কাজে যতটুকু সময় দেয়ার প্রয়োজন, সেটা আমরা শিক্ষকরা দিতে পারছি না। মাঝে মাঝে একাডেমিক কাজগুলোও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করা যায় না।
ইউজিসি থেকে পদ ছাড় দেয়া হচ্ছে না জানিয়ে তিনি আরো বলেন, আমরা বারবার শিক্ষক সংকটের কথা জানালেও ইউজিসি আমাদের কোন পদ দিচ্ছে না।যার কারণে আমরাও কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পারছি না।
এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার মোঃ দলিলুর রহমান বলেন, শিক্ষক সংকটের কারণে শিক্ষকদের অতিরিক্ত চাপ নিতে হচ্ছে। ফলে একাডেমিক কার্যক্রমে সমস্যা তৈরি হচ্ছে এবং শিক্ষার্থীরা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে বেশকিছু বিভাগে শিক্ষক পদে সার্কুলার দেয়া হয়েছে এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান আছে।
এদিকে শিক্ষা ছুটিতে শিক্ষকদের চলে যাওয়ার কারণে শিক্ষক সংকট পূর্বের চেয়ে তীব্র আকার ধারণ করেছে জানিয়ে বশেমুরবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. একিউএম মাহবুব বলেন, বিভাগে শিক্ষক সংখ্যা ৬ জন থাকলে ৪ জনই হয়তো শিক্ষা ছুটির আবেদন করেছেন। বিভাগে নির্দিষ্ট সংখ্যক শিক্ষক রেখে ছুটি দেয়ার একটা নিয়ম থাকলেও শিক্ষকদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ তৈরি হলে আসলে বাধা দেয়া যায় না। ফলে ছুটি দিতে হয়েছে। এক্ষেত্রে বিভাগের ৬ জন শিক্ষকের ৩/৪ জন চলে গেলে শিক্ষক সংকট তৈরি হবে। এটাই হচ্ছে। এছাড়া ইউজিসি নতুন করে শিক্ষক পদে নিয়োগ দিতে পদ ছাড়ছে না সেভাবে। আমরা চাচ্ছি,কিন্তু পাচ্ছি না। বেশকিছু পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান আছে। সেগুলো শেষ হলে সমস্যার অনেকটাই সমাধান হবে।
খুলনা গেজেট/কেডি