খুলনা, বাংলাদেশ | ১৪ পৌষ, ১৪৩১ | ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ছাড়াল এক লাখ ১ হাজার
  জামালপুরে ব্রহ্মপুত্র নদে ডুবে তিন ভাইয়ের মৃত্যু
  সচিবালয়ে আগুনের তদন্ত চলমান থাকায় মানুষের চলাচল সীমিত করা হয়েছে, আলামত যেন নষ্ট না হয়, ক্রাইম সীন রক্ষায় এমন সিদ্ধান্ত : প্রেস সচিব
  শেরপুরে বাস-অটোরিকশার সংঘর্ষে নিহত ৬

শিক্ষক মৃত্যুর ঘটনায় কু‌য়েটে ছাত্র রাজনী‌তি নি‌ষিদ্ধসহ ৫ দফা দা‌বি (ভিডিও)

নিজস্ব প্রতি‌বেদক

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সেলিমের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে দোষীদের চিহ্নিত করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবীসহ ৫ দফা দাবীতে একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করেছে শিক্ষক সমিতি।

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সেলিমের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে দোষীদের চিহ্নিত করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবীসহ ৫ দফা দাবীতে একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করেছে শিক্ষক সমিতি। বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) দুপুরে প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে কুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানান শিক্ষকরা।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রতীক চন্দ্র বিশ্বাস। বক্তৃতা করেন প্রফেসর ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান ড. মো সাইফুর রহমান খান, প্রফেসর ড. শিবেন্দ্র শেখর শিকদার, প্রফেসর ড. মোস্তফা সরোয়ার, পল্লব কুমার চৌধুরী, প্রফেসর ড.রাফিজুল ইসলাম. কম্পিউটার সায়েন্সের প্রফেসর ড. পিন্টু চন্দ্র শীল, ম্যাকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রফেসর ড. সোবহন মিয়া,সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. সজল কুমার অধিকারী, ইলেক্টিক্যাল বিভাগের ড. মোহাম্মদ আলমগীর প্রমুখ।

সকালে সাড়ে ১০টায় শিক্ষক সমিতির আহবানে শিক্ষকরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে সমবেত হন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এরপর বেলা সোয়া ১১টায় শিক্ষকরা প্রতিবাদ র‍্যালি করেন। শেষে বেলা সাড়ে ১১টায় কুয়েট ক্যাম্পাসের দুর্বার বাংলা চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজন করা হয়।

সমাবেশে ইলেক্টিক্যাল বিভাগের ড. মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, “আমরা শিক্ষকরা ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু স্বাভাবিক পরিবেশ চাই। যাতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা নিরাপদে ক্যাম্পাসে অবস্থান করাসহ নির্বিঘ্ন পদচারণা করতে পারেন।”

সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. সজল কুমার অধিকারী বলেন, “শিক্ষক সেলিম একজন সম্ভাবনাময় শিক্ষক ছিলেন। সেলিমের মৃত্যু একটি সম্ভাবনার মৃত্যু। এ ধরনের মানসিক নির্যাতনের মুল উৎপাটন করতে হবে। যাতে ভবিষ্যৎ ক্যাম্পাস সকলের জন্য নিরাপদ হয়। মানসিক নির্যাতনে সেলিমের মৃত্যুর বিচার না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকরা ক্লাসে যাবে না।”

প্রফেসর ড. মোস্তফা সরোয়ার বলেন, “ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগের সেইসব মানসিক নির্যাতনকারীদের ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে- এমনটা শিক্ষকদের প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু ঘটনার তিন দিন পার হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। অবিলম্বে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বহিস্কার করতে হবে।”

প্রফেসর ড. শিবেন্দ্র শেখর শিকদার বলেন, “শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মানুষ গড়ার প্রতিষ্ঠান। সেখানে যদি অমানুষ তৈরী হয় তা কাম্য নয়। মানষিক নির্যাতনে মৃত্যুবরণ করা সেলিম আসলে হত্যার শিকার। সুতরাং সেলিমকে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যার সঙ্গে জড়িতদের আগে ক্যাম্পাস থেকে বিতারিত করতে হবে। হত্যাকারীর সঙ্গে একসঙ্গে ক্যাম্পাসে থাকতে চাননা শিক্ষকরা।”

সমাবেশ থেকে কুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানানো হয়। ছাত্রদের মধ্যে অসহিসনু ভাব তৈরী হয়েছে। যা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃস্টি করেছে। শিক্ষকরাও এ বিষয়ে চরম উদ্বিগ্ন।

উল্লেখ্য, গত ৩০ নভেম্বর বেলা ৩টায় মারা যান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেন (৩৮)। এরপর অভিযোগ ওঠে কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান তার লোকজন নিয়ে ৩০ নভেম্বর ড. মো. সেলিমের দাপ্তরিক কক্ষে প্রবেশ করে অশালীন আচরণ ও মানষিক নির্যাতন করে। সাধারণ সম্পাদকসহ উপস্থিত লোকজন তাদের মনোনীত প্রার্থীকে নির্বাচত করার জন্য হল প্রভোষ্ট ড. সেলিম হোসেনকে নিয়মিত হুমকি দিয়ে আসছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায়, ৩০ নভেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাদমান নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বাধীন ছাত্ররা ক্যাম্পাসের রাস্তা থেকে ড. সেলিম হোসেনকে জেরা করা শুরু করে। পরবর্তীতে তারা শিক্ষককে অনুসরণ করে তার ব্যক্তিগত কক্ষে (তড়িৎ প্রকৌশল ভবন) প্রবেশ করে।

সিসি টিভি ফুটেজে দেখা যায়, তারা আনুমানিক আধা ঘন্টা ওই শিক্ষকের সঙ্গে রুদ্ধদার বৈঠক করে। পরবর্তীতে শিক্ষক ড. সেলিম হোসেন দুপুরে খাবারের উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাস সংলগ্ন বাসায় যান। সেখানে বেলা ২টার দিকে তার স্ত্রী লক্ষ্য করেন তিনি বাথরুম থেকে বের হচ্ছেন না। পরে তিনি দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করেন এবং খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেন। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!