সাতক্ষীরার শ্যামনগরে স্কুল শিক্ষক আবুল বাসারের আত্মহত্যা প্ররোচনাকারীদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে মৃতের পরিবার ও গ্রামবাসী। বুধবার (১৮ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
মৃতের শশুর নুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন প্রধান শিক্ষক আবুল বাসারের স্ত্রী নুরুন্নাহার পারভীন, ছেলে মেদেহী হাসান, সামিউল আযম সাদিম, গ্রামবাসীদের মধ্যে আবুল কালাম, আব্দুল জলিল প্রমুখ।
মানববন্ধনে তারা বলেন, শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী শামছুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল বাসারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ তুলে ২ জানুয়ারি নোটিশ প্রদান করেন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুর রহিম। নোটিশ পাওয়ার পর ৪ জানুয়ারি গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করেন শিক্ষক আবুল বাসার। আমরা এই চক্রান্তে জড়িতদের দৃষ্টান্তুমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
পরে একই দাবিতে স্কুল শিক্ষকের পরিবারের পক্ষ থেকে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পড়েন মৃত স্কুল শিক্ষক আবুল বাসারের স্ত্রী নুরুন্নাহার পারভীন। তিনি বলেন, একজন প্রধান শিক্ষককে পরিকল্পিতভাবে মানহানি করে আত্মহত্যায় বাধ্য করেছে কৈখালী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম সহ উল্লেখিত ব্যক্তিরা। কারাগারে আটক ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৬ আসামীর স্বজনরা প্রকাশ্যে এবং বিভিন্ন মাধ্যমে মামলা তুলে নিতে আমাকে হুমকি দিচ্ছে। তারা খুন জখমসহ আমাকে এবং আমার সন্তানদের হত্যার হুমকি প্রদর্শন করে যাচ্ছেন। এছাড়া আসামীরা জামিনে বের হয়ে আসার পর আমাদের মজা দেখাবে বলে আস্ফালন করে যাচ্ছেন। তিনি আসামীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিতকরাসহ পরিবারের সদস্যদেও নিরাপত্তার দাবিতে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন বড়ছেলে জিএম মেহেদী হাসান ছোট ছেলে জিএম সামিউল আযম, শ^শুর মোঃ নুরুল ইসলাম ও নাজনীন জাহান।
উল্লেখ্য,গত বছর শ্যামনগরের কৈখালি সামছুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চারজন কর্মচারি নিয়োগকে কেন্দ্র করে ওই বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের বর্তমান সভাপতি কৈখালি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহিমসহ তিনজন অভিভাবক সদস্য ও তিনজন শিক্ষক পরিকল্পিতভাবে প্রধান শিক্ষক আবুল বাসারকে অপবাদ দিয়ে ও তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের চেষ্টা ও টাকা আত্মসাতের মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছিল।
পরে ওই চক্রটি বিরোধ মীমাংসার নামে প্রধান শিক্ষকের কাছে ৫০ লাখ টাকা দাবি করে পাঁচ লাখ টাকা আদায় করে। এরপরও মানসিক ও শারীরিকভাবে ভেঙে পড়া প্রধান শিক্ষককে ছুটি মঞ্জুর না করে তাকে ২ জানুয়ারি কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে চাকুরিচ্যুত করার হুমকি দেন সভাপতি আব্দুর রহিম।
মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা প্রধান শিক্ষক আবুল বাসার ৪ জানুয়ারি তার গোপালপুরের ভাড়া বাসার সামনে আম গাছে ঝুলে আত্মহত্যা করতেত বাধ্য হন। এ ঘটনায় তার শিক্ষকের স্ত্রী নুরুন্নাহার পারভিন বাদি হয়ে ওই রাতেই সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহিমসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে ৭ জানুয়ারি রাতে রাজধানীর টিকাতলী এলাকা থেকে কৈখালী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহিমসহ ছয়জনকে গ্রেফতার র্যাব। ৮ জানুয়ারি তাদেরকে শ্যামনগর থানায় হস্তান্তর করা হয়।
খুলনা গেজেট/এসজেড