মহান মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন খুলনার মাসিক সেতু ও সন্দীপন পত্রিকার সম্পাদক অধ্যাপক খালেদ রশীদ। তিনি ৭১’র আগস্ট মাসে ডুমুরিয়ার শোভনায় পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে যুদ্ধে শহীদ হন। অপরদিকে সাতক্ষীরার কোরক পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন আজমল হোসেন খান। ৭১’র ২৫ জুলাই সাতক্ষীরা পৌরসভার থানাঘাটা গ্রাম থেকে পাকবাহিনী তাকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করে। ৬ ডিসেম্বর তাকে হত্যা করে। এ দু’জন শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি।
অধ্যাপক খালেদ রশীদ সুন্দরবন কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল) এর রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। খুলনা জেলা কমিটির সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য। তার রাজনৈতিক জীবনের উল্লেখযোগ্য অধ্যায় ১৯৬৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে মিউনিসিপ্যাল পার্কে শহীদ মিনারে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন। তার সম্পাদিত সেতু ও সন্দীপন পত্রিকা শোষনমুক্ত সমাজ গঠনের লক্ষ্যে মার্কসবাদী দর্শনে জনমত গঠনের জন্য প্রকাশিত হতো। কৃষি শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি ও বর্গা চাষিদের অত্যাচারের নির্যাতনের কাহিনী প্রকাশ পেত এ দু’টি পত্রিকায়। ৭১’র ২৫ মার্চের গণহত্যার পর তিনি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ডুমুরিয়ার শোভনা এলাকায় গেরিলা ঘাঁটি স্থাপন করেন। আগস্ট মাসের একটি দিনে পাকিস্তান বাহিনীর দু’টি গানবোট গেরিলা ঘাঁটিতে আক্রমণ করে। পাকবাহিনীর গুলিতে তিনি শহীদ হন। তিনি মূলত: সিরাজগঞ্জের সন্তান।
শহীদ আজমল হোসেন খান ১৯৬৭ সালে সাইক্লোস্টাইল মেশিনে পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির মূখপাত্র মার্কসবাদী নামক প্রকাশনার সাথে সম্পৃক্ত হন। তার সম্পাদনায় সাতক্ষীরা থেকে কোরক নামে পত্রিকা প্রকাশিত হয়। ৭১’র ২৫ মার্চের পর সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত সৃষ্টিতে একটি লিফলেট বিলি করতে যেয়ে ৭১’র ২০ জুলাই থানাঘাটা গ্রাম থেকে পাকিস্তানি বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে। সাতক্ষীরার সাবেক জেলা প্রশাসক কাতিবুর রহমানের ভাষ্যানুযায়ী, পাকবাহিনী তাকে ধরে নিয়ে ৬ ডিসেম্বর হত্যা করে। তিনি শহরের মুনজিতপুর গ্রামের সন্তান। উল্লিখিত খ্যাতিমান দুই সাংবাদিক শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি।
খুলনা গেজেট/এনএম