সাতক্ষীরার দেবহাটা-কালিগঞ্জের ভূমিহীন আন্দোলনে শহিদ জায়েদার ২৫তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রয়াত নেতাদের স্মরণ সভা ও ভূমিহীন সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। কালিগঞ্জের শহিদ জায়েদানগর বাজারে বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন শহিদ জায়েদার স্বামী আব্দুল হামিদ।
সমাবেশের বক্তারা বলেন, শহিদ জায়েদার আত্মত্যাগ এবং আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের আপোষহীন সংগ্রাম একটি নতুন জনপদের জন্ম দিয়েছে। যে জনপদে হাজার হাজার মানুষ তাদের জমির অধিকার প্রতিষ্টিত করেছে। ভূমিহীন-সহায় সম্বলহীন মানুষের তালিকা থেকে নাম মুছে দিয়ে তারা এখন আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠেছে।
বক্তারা বলেন, সেদিন দেবহাটা-কালিগঞ্জের ৯টি এলাকায় বসবাসকারী ভূমিহীনদের বেআইনী উচ্ছেদের বিরুদ্ধে শুধু সাতক্ষীরা নয়- সারাদেশের মানুষ রুখে দাড়িয়েছিল। তীব্র গণআন্দোলনের মুখে প্রভাবশালী স্বার্থানেশীরা জমি থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছিল। জনগনের এই ন্যায় সংগত আন্দোলনে পাশে এসে দাড়িয়েছিলেন দেশের সকল রাজনৈতিক দলের জাতীয় পর্যায়ের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ভূমিহীনদের উচ্ছেদ বন্ধ এবং খাসজমি সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী বন্দোবস্ত দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই ঘোষণা বাস্তবায়নের ফলে আজ এই জনপদ গড়ে উঠেছে।
বক্তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর বিভিন্ন সময়ে এই জনপদের সহস্রাদিক মানুষ জমির দলিল পেলেও এখনো না পাওয়া অনেকে দলিলের জন্য হাটাহাটি করছে। রেকর্ডের সময় দলিলে উল্লেখিত জমির চেয়ে কম পরিমান জমি রেকর্ড করে বাকী জমি নতুন লোকদের দখল দেখানো হয়েছে, যারা এলাকায় বসবাস করে না। এলাকার একটি সুযোগ সন্ধানী গ্রুপ দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারী কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে এই অপকর্ম করেছে। জমির মিউটেশনসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় এলাকার মানুষ অযথা হয়রানী হচ্ছে। বক্তারা এসব হয়রানী বন্ধের দাবী জানান এবং এখনো যারা জমির দলিল পাননি তাদেরকে অবিলম্বে দলিল দেওয়ার আহবান জানিয়ে ভূমিহীনদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানান।
বক্তারা শহিদ জায়েদার আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে বলেন, সেদিন ভূমিহীনদের পাশে এসে দাড়িয়েছিলেন সাতক্ষীরার রাজনৈতিক, সামাজিক, পেশাজীবী, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিকসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষ। তাদের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছিল সাতক্ষীরার দেবহাটা-কালিগঞ্জের ভূমিহীন উচ্ছেদ প্রতিরোধ সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি। খুলনায় গড়ে উঠেছিল সাতক্ষীরার ভূমিহীন উচ্ছেদ প্রতিরোধ সংহতি কমিটি। বীরত্বের সাথে সেই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া প্রয়াত এড. আব্দুর রহিম, সাইফুল্লাহ লষ্কর, এড. শেখ ফিরোজ আহমেদ, আশরাফ-উল-আলম টুটু, কাজী কামাল ছোট্টু, কুদরত-ই-খোদা, মো. আনিসুর রহিম, চেয়ারম্যান আব্দুল গনি, কাজী সাঈদুর রহমান, আব্দুর রশিদ, ফয়জুল ইসলাম প্রমুখদের স্মরণ করেন নেতৃবৃন্দ।
মা শহিদ জায়েদার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দীর্ঘ ২৫ বছর পর এলাকায় এসে সমাবেশে যোগ দেন সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের পালিত পুত্র আরমান এরশাদ আলম। ১৯৯৮ এর আন্দোলনে জায়েদা নিহত হওয়ার পর এলাকায় এসে তার
এই পুত্রকে নিয়ে যেয়ে নিজের পুত্র হিসেবে লালন পালন করেন সাবেক রাষ্ট্রপতি।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক এড আজাদ হোসেন বেলাল, দক্ষিণের মাশালের সম্পাদক অধ্যাক্ষ আশেক ই এলাহী, জেলা জাসদের সভাপতি ওবায়দুস সুলতান বাবলু, সাতক্ষীরা সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আনোয়ার জাহিদ তপন, জেলা আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক সাবেক পিপি এড ওসমান গনি, জেলা গণফোরাম এর সভাপতি আলীনূর খান বাবুল, সিপিবি’র সভাপতি কমরেড আবুল হোসেন, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক ইদ্রিস আলী, উদীচী সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি শেখ সিদ্দিকুর রহমান, সুশীলনের সহকারী পরিচালক জি এম মনিরুজ্জামান মনির, শহীদ জাহেদার পুত্র আরমান এরশাদ, জেলা ভুমিহীন সমিতির সভাপতি কওছার আলী, নদী খাল পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি আদিত্য মল্লিক, সাধারণ সম্পাদক মফিজুল ইসলাম, বাস্তহারা লীগ সাতক্ষীরা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ, স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রহিম, শাহিন আলম, করিম পাড়, ইউপি সদস্য শওকত হোসেন, বায়জিদ হোসেন, জিয়াদ আলী, বাবর আলী গাজী, শওকত আলী সরদার প্রমুখ।