আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের জন্য চলতি বছরের প্রথমার্ধে মোটাদাগে যেসব শর্ত দিয়েছিল, তার মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভ ও রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। গুরুত্বপূর্ণ দুটি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় আইএমএফের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড় নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
শর্ত বাস্তবায়ন ও দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে আগামী ৬ অক্টোবর ঢাকায় আসছে আইএমএফের একটি মিশন। এর আগে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে আইএমএফের পরামর্শে সংস্কার বাস্তবায়নে গঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির বৈঠক হয়। বৈঠকে গত জুন পর্যন্ত শর্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়। দ্বিতীয় কিস্তি ছাড় নিয়ে ওই বৈঠকে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আইএমএফের ঋণের শর্ত অনুযায়ী গত জুন শেষে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভ ২৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার থাকার কথা ছিল। ওই সময়ে নিট রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রায় চার বিলিয়ন ডলার পিছিয়ে। পিছিয়ে থাকার কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছে, জ্বালানি, সার ও খাদ্যদ্রব্য আমদানির জন্য সরকারকে রিজার্ভ থেকে ডলার দিতে হয়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যান্য প্রতিশ্রুতি, যেমন– সুদের হার নির্ধারণে করিডোর সিস্টেম চালু, আইএমএফের ব্যালান্স অব পেমেন্ট ম্যানুয়াল-৬ অনুসারে রিজার্ভের হিসাব প্রকাশ করা হচ্ছে। এ ছাড়া মুদ্রাবিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ঝুঁকিভিত্তিক তদারকি কর্মপরিকল্পনা শেষ করে ব্যাংকগুলোর আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। সংস্কারমূলক কার্যক্রম আগামীতে রিজার্ভ বাড়াতে সহায়ক হবে বলেও জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
শর্ত অনুযায়ী রিজার্ভ আগামী ডিসেম্বরে ২৬ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে হবে।
এদিকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ৩ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করে আইএমএফ। এনবিআর আহরণ করেছে ৩ লাখ ৩১ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়া প্রসঙ্গে এনবিআরের পক্ষ থেকে বৈঠকে জানানো হয়েছে, কভিড ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে শ্লথগতি থাকায় কাঙ্ক্ষিত হারে শুল্ক-কর আদায় সম্ভব হয়নি।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, আইএমএফ মিশন আগামী ৬ থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকায় সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করবে। সংস্থাগুলো হচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি), বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
মিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে নভেম্বরের শেষ নাগাদ পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। নিয়ম অনুযায়ী কিস্তি ছাড়ের জন্য পর্ষদের ১০০-এর মধ্যে অন্তত ৭৫ ভোট পেতে হবে। পর্ষদের যুক্তরাষ্ট্রে ভোটাধিকার ক্ষমতা ২৬টি। তাই দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ে অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতির প্রয়োজন।
আইএমএফ গত ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণপ্রস্তাব অনুমোদন করে। এর তিন দিন পর প্রথম কিস্তিতে ছাড় করে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার। আগামী নভেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির প্রায় ৭০ কোটি ডলার দ্বিতীয় কিস্তি ছাড় করার কথা রয়েছে। ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাড়ে তিন বছরে মোট সাত কিস্তিতে পুরো অর্থ দেওয়ার কথা। আইএমএফের ঋণ নিতে ছোট-বড় ৩৮টি শর্ত পূরণ করতে হবে বাংলাদেশকে। শর্তগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই আর্থিক খাতের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
খুলনা গেজেট/এইচ