ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় টানা পঞ্চম রাতের মতো বিমান থেকে বোমাবর্ষণ করেছে ইসরায়েল। সর্বশেষ শনিবার হামলা হয়েছে একটি শরণার্থীশিবিরে। এতে নিহত হয়েছেন ১০ জন। তাঁরা একই পরিবারের সদস্য। এর মধ্যে দুজন নারী ও বাকিরা শিশু।
জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্ম সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) তথ্যমতে, গাজা উপত্যকায় আটটি শরণার্থীশিবির আছে। এর মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম শিবিরটির নাম শাতি। এখানে ৮৫ হাজারের বেশি লোকজন থাকেন। যাঁদের স্থায়ী বাস ছিল শিবির থেকে আধা কিলোমিটার দূরে। শনিবার(১৫ মে) ওই শিবিরেই হামলা হয়েছে। হামলায় আবু হাতাব নামের এক ব্যক্তির বাড়িটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।
স্থানীয় আল-শিফা হাসপাতালের চিকিৎসক নাবিল আবু আল রিশ আল–জাজিরা টেলিভিশনকে বলেন, স্বজনেরা এখন লাশ শনাক্তের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এটি সত্যি বেপরোয়া হত্যাকাণ্ড, যা বর্ণনাতীত।
আবু হাতাব পরিবারের স্বজন দাবি করে একজন বলেন, ‘কোনো ধরনের সতর্কবার্তা ছাড়াই এ হামলার ঘটনা ঘটে। আমরা দৌড়ে বাইরে চলে আসি। দেখলাম, চারতলা ভবনটি পুরোপুরি ধসে পড়ে মাটির সঙ্গে মিশে গেল। ভবনে যারা ছিল, সবাই মারা গেছে।’এই ধ্বংসযজ্ঞের সময় ওই বাড়িতে বাড়ির মালিকের বোন ও বাচ্চারা ছিল। তারাও মারা গেছে।
হামলায় মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি এক যুবক আল–জাজিরাকে বলেন, ‘ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় জানালার কাচ ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। আমরা খালি পায়ে দৌড়ে বেরিয়ে যাই।’
ইউএনআরডব্লিউএর মুখপাত্র তামারা আলরিফাই বলেন, শাতি শরণার্থীশিবিরে ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলার ঘটনায় ইউএনআরডব্লিউএ ‘অত্যন্ত হতবাক ও বিচলিত’। তিনি বলেন, ‘গাজাসহ পুরো ফিলিস্তিন অঞ্চলে যা হচ্ছে, এতে আমরা খুবই ক্ষুব্ধ। গাজায় বা পশ্চিম তীরের ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়।’
তবে ইসরায়েল বলছে, তাদের বাহিনী সাধারণ মানুষকে নয়, হামাসের যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। আর এসব যোদ্ধা সাধারণ মানুষের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে।
তবে আলরিফাই হামাসের যোদ্ধারা জাতিসংঘের শরণার্থীশিবিরে আছে, এমন দাবি নাকচ করেছেন। তিনি বলেন, এটি পুরোপুরি গুজব।
এদিকে বিমান হামলা চালিয়ে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় অবস্থিত কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার স্থানীয় কার্যালয় পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে ইসরায়েল। শনিবার হামলা চালানোর এক ঘণ্টা আগে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী আল-জাজিরার কার্যালয় গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল।
নিজেদের কার্যালয়ে এমন হামলার খবর শনিবার অনলাইন প্রতিবেদনে নিশ্চিত করেছে আল-জাজিরা। টুইটারে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, ইসরায়েলের বিমান হামলার পর ভবনটি মাটির সাথে মিশে গেছে। ধোঁয়ার কুণ্ডলীতে ছেয়ে গেছে ভবনের চারপাশ।
ওই ভবনে মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেসের (এপি) কার্যালয়ও ছিল। ইসরায়েল হুমকি দেওয়ায় শনিবারের হামলার এক ঘণ্টা আগেই ভবনটির বাসিন্দাদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল। তবে তাৎক্ষণিকভাবে এই হামলায় কোনো হতাহত হয়েছে কি না তা জানা যায়নি।
অন্যদিকে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সংঘর্ষ গাজার পর পশ্চিম তীরে ছড়িয়ে পড়েছে। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে সংঘর্ষের শুরু গত সপ্তাহে। জেরুজালেমের আল-আকসায় পবিত্র জুমাতুলবিদা আদায়কে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত। বলা হচ্ছে, বিগত কয়েক বছরের মধ্যে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে এটাই সবচেয়ে বড় সংঘর্ষের ঘটনা। বড় ধরনের সংঘর্ষের সূচনা হয় গত সোমবার পূর্ব জেরুজালেমে। সেই সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে।
খুলনা গেজেট/ এস আই