খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৮৬

শবে বরাতের তাৎপর্য

ইমদাদুল হক শেখ

শবে বরাত নামটি একটি ফার্সি ও একটি আরবি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। ‘শব’ শব্দটি ফার্সি, অর্থ রাত, ‘বারাআত’ শব্দটি আরবি, অর্থ মুক্তি। দুটি মিলে অর্থ হয় ‘মুক্তির রাত’। যেহেতু এই রাতে অগণিত মানুষের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয় এবং বহু জাহান্নামিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয়, তাই এই রাত শবে বরাত বা মুক্তির রাত নামে পরিচিত। হাদিস শরিফে রাতটি ‘লাইলাতুন নিসফ মিন শাবান’ (অর্ধ শাবানের রাত তথা ১৪ শাবানের দিবাগত রাত) বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানের রাতে (শবে বরাতে) তার সৃষ্টির প্রতি মনযোগী হন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যক্তি ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’ (ইবনে হিব্বান :৫৬৬৫)

অন্য এক হাদিসে আম্মাজান আয়েশা (রা.) বলেন, একবার রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে নামাজে দাঁড়ালেন এবং এত দীর্ঘ সিজদা করলেন যে, আমার আশঙ্কা হলো তার হয়তো ইন্তেকাল হয়ে গেছে। আমি তখন উঠে তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। যখন তিনি সিজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করে বললেন, হে আয়েশা! অথবা বললেন, ওহে হুমায়রা! তোমার কি এই আশঙ্কা হয়েছে যে আল্লাহর রসুল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, না, ইয়া রসুলুল্লাহ! আপনার দীর্ঘ সিজদা থেকে আমার আশঙ্কা হয়েছিল আপনি ইন্তেকাল করেছেন কি না। নবিজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি জান এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তার রসুলই ভালো জানেন। তিনি তখন বললেন, ‘এটা হলো অর্ধ শাবানের রাত। আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানের রাতে তাঁর বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন, ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহপ্রার্থীদের প্রতি অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই।’ (বায়হাকি : মুরসাল হাদিস)

উল্লিখিত হাদিসসমূহ থেকে প্রতিয়মান হয় যে, এই রাত অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। তবে ইবাদতের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের নির্দিষ্টতা নেই, বরং এই রাতে এমন সব নেক আমল করা উচিত, যার মাধ্যমে আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত লাভ করা যায়। তাই এই রাতে আমরা নিম্নোক্ত আমলসমূহ করতে পারি।

এক. দীর্ঘ কিরাত, রুকু ও সিজদাহর মাধ্যমে নফল নামাজ আদায় করা। এক্ষেত্রে লক্ষণীয় বিষয় হলো, অনির্ভরযোগ্য কিছু বই-পুস্তকে নফল ইবাদতের বিভিন্ন নিয়মের কথা লেখা আছে যেমন—বারো বা বিশ রাকাত নামাজ পড়তে হবে, প্রতি রাকাতে ‘সুরা ইখলাস’ পড়তে হবে। অথচ সহিহ হাদিসে শবে বরাত, শবে কদর বা অন্য কোনো ফজিলতপূর্ণ রাতে এসব বিশেষ পদ্ধতির কোনো নামাজ প্রমাণিত হয়নি।

দুই. বেশি বেশি ইস্তেগফার করা এবং আল্লাহর কাছে বিশেষ রহমত প্রার্থনা করা। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, নবিজি (স.) এই রাতে মদিনার কবরস্থান ‘জান্নাতুল বাকি’তে গিয়ে মৃতদের জন্য দোয়া ও ইস্তিগফার করতেন। তিনি আরো বলেন, ‘নবিজি (স.) তাকে বলেছেন, এই রাতে বনি কালবের ভেড়া-বকরির পশমের (সংখ্যার পরিমাণের) চেয়েও বেশিসংখ্যক গুনাহগারকে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দেন। (তিরমিজি :৭৩৯)

তিন. তওবা করা। তওবা হলো—১. কৃত পাপের জন্য অনুতপ্ত হওয়া। ২. সঙ্গে সঙ্গে এই পাপকর্ম পরিহার করা। ৩. ভবিষ্যতে এই পাপকাজ আর করব না মর্মে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা। ৪. বান্দার হক নষ্ট করে থাকলে তার হক আদায় করে কিংবা ক্ষমা চেয়ে দায়মুক্ত হওয়া। ৫. কোনো ফরজ-ওয়াজিব ছুটে গিয়ে থাকলে মাসআলা অনুযায়ী তার কাজা কাফফারা আদায় করা। অতঃপর আল্লাহর আনুগত্যের দিকে ফিরে আসা এবং অন্তর থেকে তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।

চার. অন্তরকে হিংসা ও শিরক থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত করা। হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী কিছু লোক এমন রয়েছে, যারা এই সাধারণ ক্ষমার রাতেও ক্ষমা লাভ করতে পারে না। যতক্ষণ না সে তওবা করে ফিরে আসে। হাদিসের আলোকে এরা হলো—১. আল্লাহ তাআলার সঙ্গে অংশীদার স্থাপনকারী মুশরিক। ২. হিংসুক। ৩. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী। ৪. যে পুরুষ টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পরতে অভ্যস্ত। ৫. পিতামাতার অবাধ্য সন্তান। ৬. মদ্যপানে অভ্যস্ত ব্যক্তি। ৭. অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যাকারী। (মুসনাদে আহমাদ ৬৬৪২)

কিছু কুসংস্কারমূলক কাজ হলো—১. আতশবাজি, পটকা ইত্যাদি ফোটানো ও তারাবাতি জ্বালানো। ২. মসজিদ, ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও অন্যান্য জায়গায় আলোকসজ্জা করা। ৩. হালুয়া-রুটি, খিচুড়ি পাকানো এবং এই আয়োজনকে এ রাতের বিশেষ কাজ মনে করা এবং মসজিদে হইচই ও শোরগোল হয়। ইবাদত করার পরিবেশ নষ্ট হয় এবং এসবের পেছনে পড়ে এই রাতের তওবা-ইস্তেগফার, নফল ইবাদত ইত্যাদি ছুটে যায়। (আল মাদখাল লি ইবনিল হাজ্জ, ১/২৯৯) ৪. দলবদ্ধ হয়ে কবর জিয়ারাতের নামে বিভিন্ন কুসংস্কার বা প্রথা পালন করা।

লেখক: সিনিয়র শিক্ষক, জামেয়াতুস সুন্নাহ, ঝিনাইদহ সদর

খুলনা গেজেট/ বিএম শহিদ




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!