খুলনা, বাংলাদেশ | ২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৭ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  দেশ টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গ্রেপ্তার

শখের পোষা বিড়াল এখন খাদিজার আয়ের উৎস

নিজস্ব প্রতিবেদক

পড়াশোনার পাশাপাশি শখের বশে দুইটি পার্সিয়ান বিড়াল পুষতে শুরু করেন খুলনার কলেজছাত্রী খাদিজা আলম। গেল তিন বছরে সেই বিড়ালের সংখ্যা হয় ১৭টিতে। এর মধ্যে তিনটি বিড়াল বিক্রি করে এখন রয়েছে ১৪টি। প্রত্যেকের রয়েছে বাহারি রং আর ভিন্ন ভিন্ন নাম। নাম ধরে ডাকলে দৌড়ে খাদিজার কাছে ছুটে আসে তারা। পিছু পিছু ছুটে যায়। একসঙ্গে খাবার খায়, খেলনা দিলে খেলাধুলা করে। পরিবারের অন্য সদস্যদের মতোই মিশে গেছে বিড়ালগুলোও। শখের বশে লালন-পালন করা বিদেশি বিড়ালের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এখন বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করছেন খাদিজা আলম। বিদেশি বিড়াল বিক্রিতে লাভের মুখও দেখছেন তিনি।

খাদিজা আলম খুলনার আযম খান কমার্স কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্রী। থাকেন নগরীর গগণবাবু রোডে শ্বশুরবাড়িতে। তিনি খুলনা গেজেটকে বলেন, অনেক আগে থেকেই পশুপাখি পালন করি। আমার খরগোশ, পাখি ও দেশি বিড়াল ছিল। তারপর ভাবলাম নতুন কিছু করবো। ২০২১ সালে শখের বশে বিদেশি বিড়াল পালন শুরু করি। প্রথমে আমি সাদা রঙের দুটি বিড়াল দিয়ে শুরু করি। বছরের মাঝামাঝি ভিন্ন রঙের আরেকটি বিড়াল কিনে পালন করি। তিনটি বিড়ালই ঢাকা থেকে কিনে আনি। শখের বশে বিড়াল পালন করলেও বর্তমানে বিড়ালের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে বিড়ালের খামার গড়তে চাই।

খাদিজা আলম বলেন, শুরুতে শখ থাকলেও দিন দিন বিড়ালের সংখ্যা বেড়েছে। শুরুতে তিনটি বিড়াল ছিল, এখন আমার ১৪টি বিড়াল রয়েছে। আর তিনটি বিক্রি করেছি।

তিনি আরও বলেন, বিড়াল পুষতে খুব ভালো লাগে। আমি যখন বাইরে থেকে আসি তখন দেখি বিড়ালগুলো অপেক্ষা করছে। আমাকে সম্বোধন জানাচ্ছে। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকছে। আমার পাশে এসে বসে। আমি যখন পড়াশোনা করি আমার কলম, ব্যাগ, খাতা নিয়ে খেলবে। আমি কোথাও গেলে পিছু পিছু আসে। যা খাচ্ছি তা দেখতে আগ্রহ নিয়ে আসে। যদি ভালো লাগে খাবে। পাশে এসে ঘুমায়, আমার ডাকে সাড়া দেয়। ডাকলে দৌড় দিয়ে চলে আসে। আমি খাবার বানিয়ে নিয়ে গেলে ওরা বুঝে এখন খাবারের সময় রুমে যেতে হবে। লাইট জ্বললে তারা ঘুমায় না। লাইট বন্ধ করলে বোঝে এখন ঘুমানোর সময় ঘুমাতে হবে। এরা খুব পোষ্য, বেশ বোঝে। এদের প্রত্যেকেরই আলাদা আলাদা নাম রয়েছে। আর প্রত্যেকেই প্রত্যেকের নাম জানে। প্রথম বিড়ালটির নাম লিও। এ ছাড়া আছে লুনা, এলফি, এলসা, ফাইলো, জ্যাবি, ব্রাফি ডুরা, ইউনা, এন্ডডি, বেলা। সবই বিদেশি নাম।

খাদিজা আলম বলেন, বিড়াল কিনতে ও দেখতে ক্রেতা এবং দর্শনার্থীরা আসেন। ফেসবুকে আমার একটি পেজ আছে সুইট লুনা নামে। সেখানে বিক্রিযোগ্য বিড়ালের জন্য পোস্ট করি। তখন বিড়াল কিনতে ও দেখতে লোকজন আসে।

তিনি আরও বলেন, এখন সবাই পার্সিয়ান বিড়াল পালন করছে। খুলনায় আগে কম ছিল, এখন অনেকেই পুষছে। ফলে চাহিদা কমে গেছে। আগে যে দাম পাওয়া যেত, এখন সেই দাম পাওয়া যায় না। আমি প্রথম বিড়ালটি ১৯ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি, দ্বিতীয়টি ১৫ হাজার এবং সবশেষ বিড়ালটি ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। এখন ১০ হাজার, ১২ হাজার ও ১৫ হাজার টাকায় বিড়াল পাওয়া যাচ্ছে।

বিদেশি বিড়াল পুষতে খরচ অনেক বেশি। তাদের যত্নও অনেক বেশি নিতে হয়। এরা মুরগি, মাছ, মাংস, কলিজা, ক্যাট ফুড খেতে অভ্যস্ত।

খাদিজা আলম বলেন, বিড়াল যেহেতু বাড়ছে, তাই আমি ব্যবসায়িক পর্যায়ে যাচ্ছি। কারণ এত বিড়াল তো আর রাখা সম্ভব হবে না। আমার নিজের লেখাপড়া, স্বামী-সংসার এবং সামনে চাকরি করবো। সবকিছু মিলিয়ে আমি এত বিড়াল রাখতে পারছি না। এজন্য কিছু বিড়াল বিক্রি করি আর কিছু রেখে দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, বিড়ালের খামার পর্যায়ে গেলে বেশি লাভবান হওয়া সম্ভব। বিড়াল একসঙ্গে ৪ থেকে ৫টি বাচ্চা দেয়। অনেক সময় ২-৩টিও দেয়। ফলে বিড়ালের পরিমাণ বেশি থাকলে বাচ্চাও বেশি হবে। একবারে ৫ থেকে ৮টি বিড়ালের বাচ্চা বিক্রি করতে পারলে লাভ।

কলেজছাত্রী খাদিজা বলেন, বিড়ালের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বছরে একবার ভ্যাকসিন দিতে হয়। জ্বর হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে মেডিসিন দিতে হয়। তিন মাস অন্তর বিড়ালকে কৃমির ওষুধ দিতে হয়। গরমে দুবার গোসল করাতে হয়, শ্যাম্পুসহ প্রয়োজনীয় জিনিস আলাদা পাওয়া যায়। শীতের সময় যথাসম্ভব গোসল না করানোই ভালো।

তিনি আরও বলেন, বিড়াল পুষতে ভালোই লাগে। কিন্তু সমস্যা এদের রেখে কোথাও যাওয়া যায় না। এদের দুই বেলা খাবার ও যত্ন নিতে হয়। আমার তেমন কোথাও যাওয়া হয় না। আমি কোথাও গেলে আমার শ্বশুর-শাশুড়ি দেখভাল ও যত্ন নেন।

শুধু খাদিজা নয়, খুলনার অনেকেই এখন বিদেশি বিড়াল লালনপালন করছেন। খাদিজার কাছ থেকে কিনছেনও।

নর্দান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মেঘলা ব্যানার্জি বলেন, আমি এখানে প্রায় আসি। আপুর কাছ থেকে সাদা রঙের একটি বিড়াল নিয়েছি। আপুর অনেকগুলো বিড়াল। দেখতেও অনেক সুন্দর। আমি আমার বিড়ালের জন্য পরামর্শ নিতে আসি কী করলে ভালো হবে, কী করলে রোগাক্রান্ত হবে না সুস্থ থাকবে। সম্প্রতি আমার বিড়াল বাচ্চা দিয়েছে, তাই পরামর্শ নিতে এসেছি। আগে একটি ছিল, এখন আমার পাঁচটি বিড়াল।

তিনি আরও বলেন, বিড়াল পালন করতে খুবই ভালো লাগে। শখের কারণেই বিড়াল নেওয়া। পার্সিয়ান বিড়াল খুবই আদরের। আর এরা মানুষের সঙ্গে মিশতে পারে। এ জন্যই মূলত বিড়াল আমার নেওয়া।

খুলনা গেজেট/এএজে

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!