রাজধানীর লালবাগের আজিজ হত্যা মামলায় এক সময়ের ত্রাস খুলনার এরশাদ শিকদারের সহযোগীসহ চারজনের বিরুদ্ধে আজ রায় ঘোষণা করবেন আদালত। রবিবার (২০ সেপ্টেম্বর) আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) বেলায়েত হোসেন ঢালী গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকার ৯নং বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান এই রায় ঘোষণা করবেন।
পিপি বলেন, গত ১৪ জানুয়ারি বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান রায়ের জন্য ১৯ ফেব্রুয়ারি দিন নির্ধারণ করেন। কিন্তু ১৯ ফেব্রুয়ারি রায় প্রস্তুত না হওয়ায় বিচারক ১ এপ্রিল রায়ের জন্য নতুন দিন নির্ধারণ করেন। সে দিন করোনা ভাইরাসের কারণে আদালত বন্ধ থাকায় আর রায় দেয়া হয়নি। তাই আদালত আজ রায় ঘোষণা করবেন।
পিপি বলেন, এই মামলায় চার আসামির বিরুদ্ধে বিচার হচ্ছে। এরমধ্যে এরশাদ শিকদারের মেয়ের জামাই ফারুক ও ইদ্রিস কারাগারে আছেন। এ ছাড়া জয়নাল (এরশাদের শিকদারের সহযোগী) ও রুস্তম আলী (এরশাদ শিকদারের পিয়ন) পলাতক আছেন। এ মামলায় এরশাদ শিকদার আসামির তালিকায় থাকলেও অন্য একটি মামলায় তার ফাঁসির আদেশ কার্যকর হওয়ায় মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
আইনজীবী আরো বলেন, মামলার অন্যতম আসামি এরশাদ শিকদারের দেহরক্ষী নূর আলম রাজসাক্ষী হওয়ায় তাঁকে মামলায় জামিন দিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি নিজে দোষ স্বীকার করায় তাঁকে মুক্তি দেয়া হয়েছে এবং লিয়াকত লস্কর নামের এক আসামি মামলা চলাকালীন মারা যাওয়ায় তাঁকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
যেভাবে জামিন পান নূর আলম-
১২টি হত্যাকাণ্ডে এরশাদ শিকদারের সহযোগী ছিলেন তার দেহরক্ষী নূর আলম। পরে তিনি এসব হত্যা মামলার রাজসাক্ষী হন এবং আদালতে এরশাদ শিকদারের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন। তার সাক্ষ্যের ওপর ভিত্তি করে খুলনার জলিল টাওয়ারের মালিকের ম্যানেজার খালিদ হত্যা মামলায় এরশাদ শিকদারের ফাঁসির আদেশ হয়। ওই মামলায় ২০০৪ সালের ১০ এপ্রিল মধ্যরাতে খুলনা জেলা কারাগারে তার ফাঁসি কার্যকর হয়। এভাবে একে একে ১১টি মামলায় রাজসাক্ষী হিসেবে কারাগারে থেকেই এরশাদ শিকদারের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন নূর আলম। বাকি ছিল রাজধানীর লালবাগের আজিজকে অপহরণ করে হত্যার মামলা। পুরাতন মামলা হিসেবে ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি হাইকোর্ট মামলাটি চার মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির আদেশ দেন।
এর আগে এ মামলায় এরশাদ শিকদারের দেহরক্ষী নূর আলমকে কারাগার থেকে মুক্তির আদেশ দেন বিচারক। নূর আলম চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার আজিমপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ১৯৯৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে কারাগারে ছিলেন।
এদিকে নূর আলম কারাগারে থাকা অবস্থায় তার ছেলে রাফী (১৮) মারা গেছে এবং স্ত্রী ছেড়ে গেছেন। বাড়ি, জমি এখন কিছুই নেই। তিনি প্রথম জীবনে জাহাজে চাকরি করতেন। সেই চাকরি ছেড়ে এরশাদ শিকদারের দেহরক্ষী হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন।
এরশাদ শিকদারের গ্রেপ্তার ও ফাঁসি কার্যকর-
১৯৯৯ সালের নভেম্বরে গ্রেপ্তার হন এরশাদ শিকদার। তখন তার নামে ৪৩টি মামলা বিচারাধীন ছিল। এর বেশিরভাগই হত্যা মামলা। নিম্ন আদালতের বিচারে সাতটি হত্যা মামলায় তার ফাঁসির আদেশ হয় ও চারটি মামলায় যাবজ্জীবন সাজা হয়। তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন। রাষ্ট্রপতি তার আবেদন নাকচ করে দেন এবং ২০০৪ সালের ১০ মে মধ্যরাতে খুলনা জেলা কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। পরে খুলনা মহানগরীর টুটপাড়া কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়।
খুলনা গেজেট/এআইএন