নগরীতে স্কুলছাত্রী লামিয়ার গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় ঠিকাদারের করা চাঁদাবাজি মামলায় চার যুবককে গ্রেফতার করেছে সদর থানা পুলিশ। মামলার এজাহার ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সদর থানার ওসি আশরাফুল আলম। বিষয়টি অধিকতর তদন্তে বেরিয়ে আসবে বলে মনে করেন তিনি। তবে গ্রেপ্তারকৃতদের স্বজনরা বলছেন, ঠিকাদার ইউসুফ আলীর মেয়ে রুকাইয়ার প্রেমিকরা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে সেদিন সেখানে গেলে উত্তেজিত হয়ে তাদের গুলি করেন তিনি। এই গুলি স্কুলছাত্রী লামিয়ার গায়ে লাগে।
এদিকে স্কুল ছাত্রী লামিয়ার অপারেশন সোমবার সকাল ৯টায় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ উপলক্ষে রবিবার তার শারীরিক সকল প্রকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে। ডাঃ মেহেদী নেওয়াজের নেতৃত্বে অর্থ সার্জারি বিভাগ এ অপারেশন করবেন।
অভিযুক্ত ঠিকাদার ইউসুফ আলী জানান, ঠিকাদারি একটি কাজ নিয়ে চার যুবক তার কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করার এক পর্যায়ে তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিলে তিনি পিস্তল নিয়ে তাদের ধাওয়া করেন। এ সময় পিস্তলে তিন রাউন্ড গুলি ছিল। তিনি দুই রাউন্ড গুলি করেন। ওই চার যুবকও দৌঁড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় গুলি করেছিল। তাদের গুলি লামিয়ার পায়ে বিদ্ধ হয়েছে। তবে ঠিকাদারের দায়ের করা মামলা ও দাবি করা সব তথ্য মিথ্যা বলে অভিযোগ করেছেন ওই চার যুবকের স্বজনরা।
তারা জানিয়েছেন, ঠিকাদার ইউসুফ আলীর মেয়ে রুকাইয়া বানরগাতির সোহরাওয়ার্দী কলেজে পড়ে। রুকাইয়ার সাথে শাহিদ নামের একটি ছেলে দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ঠিকাদার তার পছন্দের ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। মেয়ের মোবাইল ফোনও কেড়ে নিয়েছিলেন। কয়েকদিন মোবাইল বন্ধ পেয়ে প্রেমিক শাহেদ তার তিন বন্ধু মেহেদি, ইসমাইল ও সাইফুলকে নিয়ে যান ইউসুফ আলীর বাড়িতে। প্রেমিকা রুকাইয়ার বাবা ঠিকাদার ইউসুফ আলীকে তারা র্দীঘদিনের প্রেমের সম্পর্কের কথা খুলে বলেন। এমন সময় ইউসুফ আলী রেগে উত্তেজিত হয়ে প্রথমে গালিগালাজ শুরু করেন। তখন সেখানে উপস্থিত মেয়ের মামা তাদের বের হয়ে যেতে পরামর্শ দেন। তারা বের হয়ে দরজা পর্যন্ত আসার পরে মেয়ের বাবা ইউসুফ আলী পিস্তল নিয়ে বের হন, গুলিও ছোড়েন।
সাইফুলের মামা সোহেল বলেন, আমার ভাগিনা ও তার বন্ধুদের উপর সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে গুলি ছুড়েছেন ঠিকাদার ইউসুফ আলী। আবার তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজী মামলাও দায়ের করেছেন। আমরা আইনী পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
প্রসঙ্গত্ব, শুক্রবার (২৮ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে ঠিকাদার শেখ মোঃ ইউসুফ আলীর করা গুলিতে বিদ্ধ হয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী শিশু লামিয়া খুমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এঘটনায় জীবনের ঝুঁকিমুক্ত হলেও একটি পা হারানোর ঝুঁকি রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। গুলি বর্ষণের পর ব্যবহৃত পিস্তল, ১০ রাউন্ড গুলি ও দু’টি গুলির খোসা জব্দ করেছিল পুলিশ। শনিবার দুপুরে অজ্ঞাত চার চাঁদাবাজকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছেন ঠিকাদারা শেখ মোঃ ইউসুফ আলী। যার প্রেক্ষিতে রবিবার বিভিন্ন স্থান থেকে অভিযুক্ত চার যুবককে গ্রেপ্তার করে সদর থানা পুলিশ।
খুলনা গেজেট / এমবিএইচ