বাবলু মন্ডল (৪২)। চাকরী করতেন ঢাকার একটি রপ্তানিমুখি শিল্প প্রতিষ্ঠানে। মাসিক বেতন ছিল লাখ টাকা। মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রশাসন ও কমপ্লায়েন্স (এজিএম) পদে ১৬ বছর চাকরী করেছেন। করোনার প্রভাবে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেরার শ্যামপাড়া গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন। বাড়িতে এসে বসে থাকেনি বাবলু। শুরু করেন বিভিন্ন মৎস্য চাষ। চিংড়ি, রুই, কাতলা ও কার্প জাতীয় মাছের পর সে শুরু করে হাইব্রীড কই মাছের চাষ। এ চাষেই মাত্র ৪৭ দিনে সফল বাবলু। টুপটাপ শব্দে মুখরিত তাঁর কই মাছের খামার।
বাবলু মন্ডল বলেন, কই মাছ জনপ্রিয়। কই মাছে কম চর্বি ও পুষ্টিকর হওয়ার কারণে এর ব্যাপক চাহিদা। এই মাছটি জীবন্ত অবস্থায় বাজারজাত করা যায়। এ কারণে বাজারে কই মাছের দাম তুলনামূলক বেশি। অতীতে কই মাছ ডোবা-পুকুর, খালবিল, হাওর-বাঁওড় এবং প্লাবনভ‚মিতে পাওয়া যেত। বর্তমানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং সেচের জন্য বাঁধ নির্মাণ, শিল্পকারখানার বর্জ্য, পানিদূষণ, নির্বিচারে মাছ আহরণ, প্রাকৃতিক জলাশয় ভরাট, ফসলি জমিতে অতিমাত্রায় কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মাছে রোগবালাই বৃদ্ধির কারণে অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে কই মাছ তেমন একটা পাওয়া যাচ্ছে না। পাশাপাশি খালবিল, নদীনালা, প্লাবন ভূমি ও মোহনায় প্রজনন ও বিচরণ ক্ষেত্র নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে কই মাছ বিলুপ্তির পথে। তাই আমি অনেক ভেবে চিন্তে কই মাছের চাষ শুরু করি।
নিজেদের ৩৬ শতক জলাশয়ে ৪৭ দিন আগে ৩৫ হাজার কই মাছের পোনা ছাড়ি। মাছ গুলো এখন ৫০ থেকে ১০০ গ্রামের মত ওজন হয়েছে। আর ১৫ দিন পর বাজারজাত করব। মাছের সব পরিচর্যা ও খাবার প্রদান আমি নিজেই করি। আমার কোন কামলা বা কর্মচারি নেই। একমাত্র ভাসমান ফিড (খাবার) খাওয়াচ্ছি। তাতেই ভাল সাইজে এসেছে। কোন নোংরা খাবার খাওয়াইনি। যেটা নিজে খেতে পারব না সেটা মানুষকে খায়াব? এটা ভাবতেও পারি না। প্রথম বার তাই ১ লাখ ৬৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আশাকরি মাছ বিক্রি করে দ্বিগুন টাকা আসবে। আগামীতে আর খরচ নেই। তখন আসবে আরো সাফল্য।
বাবলু আরও জানান, তার এ কই মাছ চাষে সার্বিক সহযোগিতা করেছে চিতলমারী উপজেলা মৎস্য অফিসের স্টাফরা। তারা নিয়মিত তার মাছের খামার দেখাশুনা করেছেন।
শ্যামপাড়া গ্রামের যুবক প্রদীপ বৈরাগী, মিলন মন্ডল, মনোজ বৈরাগী, মিঠুন বৈরাগী ও পরিমল বৈরাগী বলেন, বাবলুর মত অতবড় একজন অফিসার যদি চাকুরী ছেড়ে মাছ চাষ করে সাফল্য আনতে পারে তাহলে আমরাও পারব। তাই আমরা কই মাছ চাষের জন্য চিতলমারী মৎস্য অফিস থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছি।
এ ব্যাপারে চিতলমারী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সোহেল মোহাম্মাদ জিল্লুর রহমান রিগান বলেন, বাবলু মন্ডলের উৎসাহে আমরা মুগ্ধ। কঠোর পরিশ্রমই তাকে সাফল্যে পৌঁছে দিয়েছে। আমরা নিয়মিত তার সহযোগিতা করেছি। মাছ চাষিদের জন্য আমাদের দুয়ার সব সময়ই খোলা। তাদের প্রয়োজনে আমাদের ডাকলে আমরা হাজির হব।
খুলনা গেজেট/ টি আই