ডিজেলের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বাড়ানোর কারণে লঞ্চমালিকরা শতভাগ ভাড়া বাড়ানোর যে দাবি করেছেন, সেটি যৌক্তিক মনে করছে না সরকার। ভাড়া কী পরিমাণ বাড়ানো যায়, সেটি নির্ধারণে গঠন করা হয়েছে কার্যকরী কমিটি।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এমনিতে যাত্রীসংকটে ভাড়া কমিয়ে দেয়া লঞ্চের মালিকরা কিলোমিটারপ্রতি ৪ টাকা থেকে ৪ টাকা ৬০ পয়সা ভাড়া চাইছেন, যা সড়কপথের ভাড়ার প্রায় দ্বিগুণ।
শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ডিজেলের দাম বাড়ানোর পর রোববার ভাড়া দ্বিগুণ করার প্রস্তাব দেয় লঞ্চমালিকদের সমিতি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থা। এর সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা শতভাগ ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছি।’
গত নভেম্বরে যখন তেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানো হয়, তখন লঞ্চের ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল ৩৫ শতাংশ।
তখন ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ভাড়া কিলোমিটারপ্রতি ১ টাকা ৭০ পয়সার বদলে ২ টাকা ৩০ পয়সা ও ১০০ কিলোমিটারের ঊর্ধ্বের জন্যও ১ টাকা ৪০ পয়সার বদলে ২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। জনপ্রতি সর্বনিম্ন ভাড়া ১৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ টাকা করা হয়েছে।
অর্থাৎ এবার মালিকরা ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত কিলোমিটারপ্রতি ৪ টাকা ৬০ পয়সা এবং ১০০ কিলোমিটারের বেশি পথের জন্য কিলোমিটারপ্রতি ৪ টাকা ভাড়া ঠিক করতে চাইছেন।
সোমবার সচিবালয়ে লঞ্চমালিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। তবে সেখানে ভাড়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোস্তফা কামাল বলেন, ‘মালিকপক্ষ যে প্রস্তাব দিয়েছে সেটিকে আমরা যৌক্তিক মনে করছি না। এ জন্য একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওয়ার্কিং কমিটি আজকের মধ্যে সরকারের কাছে প্রস্তাব দেবে। সে অনুযায়ী ভাড়া বাড়ানো হবে।’
লঞ্চমালিকরা যে হারে ভাড়া চাইছেন, তা বাস ভাড়ার হারের চেয়ে অনেকটাই বেশি, যদিও নৌপথের ভাড়া সাধারণত সড়কপথের চেয়ে কম থাকে।
বর্তমানে ঢাকা ও চট্টগ্রামে নগর পরিবহনে কিলোমিটারপ্রতি আড়াই টাকা এবং দূরপাল্লায় ৫১ আসনের বাসের ক্ষেত্রে ২ টাকা ২০ পয়সা হারে ভাড়া ঠিক করা আছে। কোনো বাস আসনসংখ্যা কমালে আনুপাতিক হারে ভাড়া বাড়াতে পারবে।
বাস ও লঞ্চের ভাড়া কতটা বাড়তে পারে, তার একটি অনুমিত হিসাব অবশ্য দিয়েছে জ্বালানি মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ডিজেলের দাম বাড়ার কারণে প্রতি কিলোমিটারে যাত্রীপ্রতি লঞ্চ ভাড়া বাড়তে পারে ৪২ পয়সা।
কিন্তু এতে সন্তুষ্ট না লঞ্চমালিকরা। লঞ্চমালিক নেতা সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ‘বাসের হারে আমাদের বাড়ালে চলবে না। আমাদের ক্ষেত্রে আরও বেশি বাড়াতে হবে।’
বাংলাদেশে লঞ্চের প্রধান পথ ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলে বৃহত্তর বরিশাল, চাঁদপুর ও শরীয়তপুর রুটে। নৌপথেই এতদিন যাত্রী বেশি থাকলেও গত ২৬ জুলাই থেকে পদ্মা সেতু চালুর পর পরিস্থিতি উল্টে গেছে।
যাত্রীরা সড়কপথে পদ্মা সেতু হয়ে তুলনামূলক দ্রুত রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে যাত্রীদের ফেরাতে ভাড়া অনেকটাই কমিয়ে আনা হয়েছে লঞ্চে। শতভাগ ভাড়া বাড়লে তারা যাত্রী কতটা পাবেন, এ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।