শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের সরকারি ভবনে আলমারির দরজা খুলতেই চোখে পড়ল সিঁড়ি। ধাপে ধাপে সেই সিড়ি নেমে গিয়েছে অনেক নীচে। সিঁড়ি ধরে নামলে থেমে যেতে হবে এক লোহার দরজার সামনে। সম্ভবত ওই দরজার ওপারে রয়েছে সুড়ঙ্গ। সেই সুড়ঙ্গ দিয়েই কি তবে পালিয়ে গিয়েছেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে।
শনিবার প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবনে ঢুকে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। দাবি, ইস্তফা দিতে হবে গোতাবায়াকে। তার পর থেকেই প্রেসিডেন্টের বাসভবন তছনছ করছেন বিক্ষোভকারীরা। বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, কখনও সুইমিং পুলে স্নান করছেন তাঁরা। কখনও সরকারি ভবনের রান্নাঘরে খাওয়াদাওয়া করছেন। অন্য একটি ভিডিয়োতে দেখা গেল, প্রেসিডেন্টের পালঙ্কে শুয়ে রয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। তুলছেন ছবি।
সরকারি বাসভবন খানাতল্লাশির সময়ই বিক্ষোভকারীরা খুলে ফেলেন নকল ওই আলমারির দরজা। তার পরেই তাঁদের চোখে পড়ে সেই সিঁড়ি।
শনিবার দুপুরে প্রেসিডেন্টের বাড়িতে বিক্ষোভকারীদের জোর করে ঢুকে পড়ার কিছুক্ষণ আগেই সেখান থেকে পালিয়ে যান গোতাবায়া। মনে করা হচ্ছে, ওই সুড়ঙ্গ দিয়েই পালিয়ে গিয়েছেন তিনি। শনিবার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিঙ্ঘের ব্যক্তিগত বাড়িতেও আগুন দেন বিক্ষোভকারীরা।
শনিবার যেখানে ছিল গণ অসন্তোষের দগদগে ক্ষত, রবিবার সেখানেই পিকনিকের আমেজ। ছোটদের নিয়ে অনেকেই যেন ঘুরতে এসেছেন প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে। এমন সুযোগ হাতছাড়া করা যায়! যে পোডিয়াম থেকে প্রেসিডেন্ট জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতেন, সেখানে ছোট ছেলেকে দাঁড় করিয়ে মোবাইলে ছবি তুলছেন বড়রা।
প্রেসিডেন্টের ঘন সবুজ লনে দাঁড়িয়েও রীতিমতো পোজ দিয়ে সেলফি তুলতে দেখা গিয়েছে অনেককে। কেউ কেউ আবার প্রেসিডেন্টের প্রাসাদের রাজকীয় নার্সারি থেকে চারাগাছও তুলে নিয়ে গিয়েছেন। বাড়িতেও থাক প্রেসিডেন্টের বাড়ির গাছ!
রবিবার সকালে অনেক তরুণকেই দেখা গেল গোটা প্রাসাদ ঘুরে দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে আরামদায়ক সোফায় একটু জিরিয়ে নিতে। অনেকে মোবাইলে মগ্ন। আবার কেউ কেউ সোফায় পা ছড়িয়ে দিয়েছেন ঘুম।
এহ বাহ্য, প্রেসিডেন্টের বেডরুমে ঢুকে খাটে জায়গা না পেয়ে নিজেদের মধ্যে বালিশ ছোড়াছুড়ি করে খুনসুটির ছবিও উঠেছে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার ক্যামেরায়।
বিরাট প্রেসিডেন্ট নিবাস ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে এক দল যখন আরামদায়ক সোফায় বিশ্রামরত, তখন কয়েক জনকে দেখা গেল প্রাসাদের কেয়ারি করা নরম ঘাসের মাঠে আকাশের দিকে চেয়ে শুয়ে থাকতে।
সবই যখন হল, প্রেসিডেন্টের জিম আর বাদ থাকে কেন। অনেককেই দেখা গেল প্রাসাদের রাজকীয় জিমে কসরত করতে। তবে কসরত করার ভাব মুখে এনে ছবি তোলার লোকও কম নয়!
যেখানে দিন কয়েক আগে পর্যন্ত ঘুমোতেন রাজাপক্ষে, সেখানেই হাত-পা ছড়িয়ে ঘুমোচ্ছে কেউ। আবার কেউ গা এলিয়ে ব্যস্ত মোবাইলে। প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ রাতারাতি যেন পর্যটনস্থল হয়ে উঠেছে।
প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে একাধিক সুইমিং পুল। গোতাবায়া পালিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু বাড়ির দরজা খুলে রেখে। দু’দিন আগে যে সুইমিং পুলে গা ভাসাতেন দেশের প্রেসিডেন্ট, আজ সেই তরঙ্গে মিশেছে জনসাধারণের বারোয়ারি বপু।
শনিবারই আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল, প্রেসিডেন্টের প্রাসাদের সুইমিং পুল ব্যবহার করছে সাধারণ মানুষ। রবিবারও তার অন্যথা হল না। অনেকে প্রাসাদে ঢুকেই ডুব মারলেন সুইমিং পুলে।
জনতার দখলে রাষ্ট্রপতির প্রাসাদ। অভিযোগ, প্রাসাদের অভ্যন্তরে মিলেছে থরে থরে টাকা। কার টাকা, কে রেখে গেলেন? এখনও সবই অজানা।
খুলনা গেজেট/ এস আই