বদলে যাচ্ছে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) বর্তমান ইউনিফর্ম। বিশেষায়িত এই বাহিনীর নতুন পোশাকের রং, নকশাসহ সার্বিক বিষয় চূড়ান্ত করতে কাজ শুরু করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। আশা করা হচ্ছে, শিগগিরই নতুন ইউনিফর্ম পাচ্ছেন র্যাব কর্মকর্তা ও সদস্যরা। সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এরপর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেনের (অব.) নির্দেশে এই কাজ শুরু হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের একটি সূত্র বলেছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তা ও সদস্যদের পোশাক একটি বিশেষ মানসিকতা তৈরি করে। সে কারণেই র্যাবের ইউনিফর্ম পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে পুলিশ বাহিনীর ইউনিফর্ম ও লোগো পরিবর্তনের জন্যও কমিটি গঠন করা হয়েছে।
র্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) অতিরিক্ত আইজিপি এ কে এম শহিদুর রহমান বলেন, ‘র্যাবের পোশাক পরিবর্তনের জন্য আমরা কাজ শুরু করেছি। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন, সেভাবেই কাজ চলছে।’
র্যাব মহাপরিচালক বাহিনীর পোশাক পরিবর্তনের কাজ শেষ হতে কত সময় লাগবে তা তাত্ক্ষণিকভাবে বলতে পারেননি। তিনি এ বিষয়ে বলেন, ‘এটা নিয়ে অনেক কিছু পর্যালোচনা করতে হবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সভা
এদিকে বৃহস্পতিবার বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ ও সুরক্ষা সেবা বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়সভা করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। বৈঠকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের পরিবর্তনের বিষয়ে আলোচনা হয়। জননিরাপত্তা বিভাগ ও সুরক্ষা সেবা বিভাগের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে তাঁদের মতামত দেন। এ সময় র্যাবের নতুন পোশাকের রং ও নকশা নিয়েও পরামর্শ দেন কর্মকর্তারা।
তবে এ বিষয়ে র্যাবের নিজের প্রতিবেদনই প্রাধান্য পাবে বলে জানা গেছে।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, মতবিনিময়সভায় জননিরাপত্তা বিভাগ ও সুরক্ষা সেবা বিভাগের কার্যক্রম উপস্থাপন করা হয়। দুই বিভাগের ভিশন, মিশন, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, অনুবিভাগের জনবল ও গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলি, চলতি অর্থবছরের বাজেটসহ সার্বিক বিষয়ে উপদেষ্টাকে জানানো হয়।
এদিকে সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদা র্যাবের পোশাক পরিবর্তন পরিকল্পনা প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটা আমাদের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কতখানি ঠিক হবে তা যাঁরা দেশের আর্থিক বিষয়াদি সম্পর্কে ভালো জানেন, তাঁরা ভালো বলতে পারবেন। এর উদ্দেশ্য হয়তো ভালো, কিন্তু ব্যয়টা অনুৎপাদনশীল খাতে হচ্ছে।’
র্যাব গঠনের প্রেক্ষাপট
২০০৪ সালে র্যাব গঠন করার প্রক্রিয়া শুরু করে তৎকালীন বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার। ওই বছরের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণের মাধ্যমে এলিট ফোর্স র্যাবের আত্মপ্রকাশ ঘটে। মূলত দেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমন এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নের লক্ষ্যে এটি গঠন করা হয়েছিল। র্যাবের কর্মকর্তাদের জঙ্গি দমনসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পর্যন্ত পাঠানো হয়। র্যাবের জন্য বেশ কিচু অস্ত্রও দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। জঙ্গিবাদী সন্ত্রাস ও চরমপন্থী দমন, উপকূলীয় ও বনদস্যু দমন এবং মাদক প্রতিরোধে সাফল্যের জন্য র্যাব প্রশংসা পেয়েছে। পাশাপাশি বিতর্কিত ক্রসফায়ারসহ নানা কারণে এই বাহিনীর বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনেও র্যাবের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এর আলোকেই বাহিনীর ভাবমূর্তি এবং বাহিনী সদস্যদের ভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তনের জন্য ইউনিফর্ম পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
খুলনা গেজেট/এইচ