খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে একদিনের ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ২১৪

রোজাদারের জন্য রোজার শাফাআত

মুফতি সাআদ আহমাদ

এটা ঐ দিনের কথা যেদিন সকল মানুষ নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। কেউ কারো দিকে তাকানোর সুযোগ টুকুও পাবে না। কেউ কাউকে নিয়ে ভাবার অবকাশ থাকবেনা। যার যার নেক আমল এবং আল্লাহর রহমতই কেবল ভরসা। ঠিক সে সময় কেউ যদি সুপারিশের জন্য এগিয়ে আসে তবে তা কত বড় প্রাপ্তি।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ঈমানদারদেরকে কিয়ামতের দিন আবদ্ধ করে রাখা হবে। পরিশেষে তারা পেরেশান হয়ে ওঠবে এবং বলবে, আমরা যদি আমাদের রবের কাছে কারো দ্বারা শাফাআত করাই যিনি আমাদের সস্তি দান করেন। তারপর তারা আদম (আলাইহিস সালাম) এর কাছে এসে বলবে, আপনিই তো সে আদম, যিনি মানবকুলের পিতা, স্বয়ং আল্লাহ নিজ হাত দিয়ে আপনাকে সৃষ্টি করেছেন। আপনাকে বসবাসের সুযোগ প্রদান করেছেন তাঁর জান্নাতে, ফেরেশতাদের দ্বারা আপনাকে সিজদা করিয়েছেন এবং আপনাকে সব জিনিসের নামের তালীম দিয়েছেন। আমাদের এ স্থান থেকে প্রদানের নিমিত্ত আপনার সেই রবের কাছে শাফাআত করুন। তখন আদম (আলাইহিস সালাম) বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের জন্য নই।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এরপর তিনি নিষিদ্ধ গাছের ফল খাওয়ার ভুলের কথাটি উল্লেখ করবেন। তিনি বলবেন, বরং তোমরা নূহ (আলাইহিস সালাম) এর কাছে যাও, যিনি পৃথিবীবাসীদের প্রতি প্রেরিত নবীগণের মধ্যে প্রথম নবী।

তারপর তারা নূহ (আলাইহিস সালাম) এর কাছে এলে তিনি তাদেরকে বলবেন আমি তোমাদের এ কাজের জন্য নই। আর তিনি না জেনে তাঁর রবের কাছে প্রার্থনার ভুলটি উল্লেখ করবেন এবং বলবেন বরং তোমরা রাহমানের বন্ধু ইবরাহীমের কাছে যাও।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অতঃপর তারা ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এর কাছে আসবে। তখন ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের জন্য নই। আর তিনি এরূপ তিনটি বাক্যের কথা উল্লেখ করবেন যেগুলো বাহ্যত বাস্তব-পরিপন্হী ছিল। পরে বলবেন, তোমরা বরং মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে যাও। আল্লাহর এমন এক বান্দা যাকে আল্লাহ তাওরাত দান করেছিলেন, তার সাথে কথা বলেছিলেন এবং গোপন বাক্যালাপের মাধ্যমে তাঁকে সান্নিধ্য দান করেন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সবাই তখন মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে আসবে। তিনিও বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের জন্য নই। এবং তিনি (অনিাচ্ছাকৃত) হত্যার ভুলের কথা উল্লেখ করবেন। তিনি বলবেন, তোমরা বরং ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে যাও। যিনি আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসুল এবং তার রূহ ও বাণী।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তারা সবাই তখন ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে আসবে। ঈসা (আলাইহিস সালাম) বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের জন্য নই। তিনি বলবেন, তোমরা বরং মুহাম্মদসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে যাও। তিনি আল্লাহর এমন এক বান্দা যার পূর্বের ও পরের ভুল মাফ করে দিয়েছেন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তারা তখন আমার কাছে আসবে। আমি তখন আমার রবের কাছে তার নিকটে হাযির হওয়ার অনুমতি চাইব। আমাকে তাঁর কাছে যাওয়ার অনুমতি প্রদান করা হবে। তাঁর দর্শন লাভ করার সাথে সাথে আমি সিজদায় পড়ে যাবো। তিনি আমাকে সে অবস্থায় যতক্ষন রাখতে চাইবেন ততক্ষন বাখবেন।

এরপর আল্লাহ তা’আলা বলবেন, মুহাম্মাদ, মাথা ওঠান; বলুন, আপনার কথা শোনা হবে, আর শাফাআত করুন, কবুল করা হবে, চান আপনাকে দেওয়া হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তখন আমি আমার মাথা ওঠাবো। তারপর আমি আমার প্রতিপালকের এমন শ্রুতি ও প্রশংসা (হামদ ও সানা) করবো যা তিনি আমাকে শিখিয়ে দিবেন। এরপর আমি সুপারিশ করবো, তবে আমার জন্য একটা সীমা নির্ধারণ করা হবে। আমি বের হয়ে তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবো।

বর্ণনাকারী কাতাদা (রহঃ) বলেন, আমি আনাস (রাঃ) কে এ কথাও বলতে শুনেছি যে, আমি বের হবো এবং তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করবো এবং জান্নাতে প্রবেশ করাব। তারপর আমি ফিরে এসে আমার প্রতিপালকের নিকটে হাযির হওয়ার অনুমতি চাইব। আমাকে অনুমতি দেওয়া হবে।

আমি তাঁকে দেখার পর সিজদায় পড়ে যাব। আল্লাহ তাআলা যতক্ষন রাখতে চাইবেন, আমাকে সে অবস্থায় রাখবেন। তারপর বলবেন, মুহাম্মদ! মাথা উঠান। বলুন, তা শোনা হবে, শাফাআত করুন, কবুল করা হবে, চান দেওয়া হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তারপর আমি আমার মাথা উঠাবো। আমার রবের এমন প্রশংসা ও শ্রুতি করব, যা তিনি আমাকে শিখিয়ে দিবেন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এরপর আমি শাফাআত করব, আমার জন্য একটা সীমা নির্ধারণ করা হবে। আমি বের হয়ে তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাব। বর্ণনাকারী কাতাদা (রহঃ) বলেন, আমি আনাস (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তখন আমি বের হব এবং তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করব এবং জান্নাতে প্রবেশ করাব।

তারপর তৃতীয়বারের মত ফিরে আসব এবং আমার রবের নিকটে প্রবেশ করার অনুমতি চাইব। আমাকে অনুমতি দেওয়া হবে। আমি তাকে দেখার পর সিজদায় পড়ে যাব। আল্লাহ আমাকে সে অবস্থায় রাখবেন, যতক্ষন তিনি চাইবেন। তারপর আল্লাহ বলবেন, মুহাম্মাদ! মাথা উঠান এবং বলুন, শোনা হবে, সুপারিশ করুন, তা কবুল করা হবে, চান, দেওয়া হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি মাথা উঠিয়ে আমার রবের এমন শ্রুতি ও প্রশংসা (হামদ ও সানা) করব, যা আমাকে শিখিয়ে দেবেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এরপর আমি শাফাআত করব, আমার জন্য একটা সীমা নির্ধারন করা হবে। তারপর আমি বের হয়ে তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাব। (বুখারী-৩১২৬)

শাফায়াতকারীদের এই তালিকায় বিশেষভাবে থাকবে কুরআন ও রোজার অবস্থান। প্রিয় নবীজি সা. বলেন- রোজা এবং কোরআন বান্দার জন্য আল্লাহর কাছে শাফায়াত করবে। রোজা বলবে, হে আল্লাহ! আমি তাকে খাওয়া এবং কামনা থেকে বেঁচে থাকতে বলেছি, সে আমার কথা শুনেছে। তাই তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করো। কোরআন বলবে, হে আল্লাহ! সারাদিনের ক্লান্তি শেষে তোমার বান্দা রাতে আমাকে তেলাওয়াত করেছে। আমাকে নিয়ে গবেষণা করেছে। দিনের প্রতিটি মুহূর্তে আমার বলে দেয়া পথে চলেছে। তার ব্যাপারে আমার সুপাারিশ গ্রহণ করো।

রাসুল (সা.) বলেন, তাদের দু’জনের সুপারিশই কবুল করা হবে। আরেক হাদিস থেকে জানা যায়, বান্দাকে যখন কবরে রাখা হবে, তখনও কোরআন ও সিয়াম তাকে আজাব থেকে রক্ষা করবে। (মেশকাত-১৯০৪)




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!