খুলনা, বাংলাদেশ | ১লা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৫ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  বাংলাদেশে চলমান সংস্কার ও রুপান্তরে পাশে থাকবে জাতিসংঘ প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠক জাতিসংঘ মহাসচিব

রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করা এ বছরের অগ্রাধিকার: রোসাটম প্রধান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

চলতি বছর তুরস্ক ও বাংলাদেশের নতুন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদন শুরু করা অগ্রাধিকার তালিকায় রেখেছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু সংস্থা রোসাটম। এ ছাড়া রাশিয়ার পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র লেনিনগ্রাদ টুর চতুর্থ ইউনিটের জন্য প্রথম কংক্রিট ঢালা এবং কুরস্ক পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম নতুন ইউনিটকে বাণিজ্যিক কার্যক্রমে আনার কাজগুলোকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে সংস্থাটি।

সারোভে ‘রোসাটম ইনফরমেশন ডে’ উপলক্ষে দেওয়া এক বক্তৃতায় রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণবিক সংস্থা রোসাটমের মহাপরিচালক অ্যালেক্সেই লিখাচেভ এসব কথা বলেন। সংস্থাটির নিজস্ব ম্যাগাজিন স্ত্রানা রোসাটমে তাঁর এই বক্তৃতা প্রকাশ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, পারমাণবিক জ্বালানি খাতে ২০৪২ সাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্প্রসারণের জাতীয় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করাই প্রধান লক্ষ্য। আমাদের ৩৮টি ইউনিট তৈরি করতে হবে, যেগুলোর মধ্যে কিছু হবে আমাদের জন্য নতুন অঞ্চলে-সাইবেরিয়া ও দূরপ্রাচ্য। সেই সঙ্গে সেভেরস্কে চতুর্থ প্রজন্মের বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, চলতি বছর আমাদের দূরপ্রাচ্যের প্রিমোর্স্কি ক্রাই অঞ্চলে দুটি ইউনিটের একটি কেন্দ্র নির্মাণের সব দিক পরিকল্পনা করতে হবে। এটি প্রেসিডেন্টের সরাসরি নির্দেশ। এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র (এনপিপি) ২০৩২ সালের মধ্যে গ্রিডের সঙ্গে সংযুক্ত হতে হবে। এ বছর আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে লেনিনগ্রাদ এনপিপি-২-এর চতুর্থ ইউনিটের জন্য প্রথম কংক্রিট ঢালা এবং কুরস্ক এনপিপি-২-এর প্রথম ইউনিটকে বাণিজ্যিক কার্যক্রমে চালু করা।

বৈশ্বিক বাজারে নেতৃত্ব বজায় রাখা প্রসঙ্গে রসাটম প্রধান বলেন, ‘আমরা ব্রিকস প্লাস এবং সিআইএস (কমনওয়েলথ অব ইনডিপেনডেন্ট স্টেটস) দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা চালিয়ে যাব, নতুন জোট ও অংশীদারত্ব গড়ে তুলব…আমাদের মূল লক্ষ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে, তুরস্ক ও বাংলাদেশের প্রকল্পগুলোতে প্রথম কিলোওয়াট-ঘণ্টা উৎপাদন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের উজবেকিস্তানে পরিকল্পিত ক্ষুদ্র মডুলার রিয়্যাক্টর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি বাস্তবায়ন শুরু করতে হবে এবং উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ইউনিট নির্মাণের নতুন চুক্তি পেতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাতে হবে।’

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের দুটি ইউনিটে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে কাজ চলছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট ২০২২ সালের ২৩ ডিসেম্বর ও দ্বিতীয় ইউনিট ২০২৩ সালের অক্টোবরে চালু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা কারণে প্রকল্পটি নির্দিষ্ট সময়ে চালু করা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাঠামোগত, প্রযুক্তিগত ও যন্ত্রপাতির প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণ করেছেন।

বক্তৃতায় অর্থনৈতিক লক্ষ্য ও চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে রোসাটম প্রধান লিখাচেভ বলেন, ‘আমাদের উৎপাদনশীলতা ১২ শতাংশ বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে মজুরি ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো যায়। বিনিয়োগ ও প্রকল্প কার্যক্রমের মান এবং দক্ষতা উন্নত করাও গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য। লাভের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে কমপক্ষে ২৬ শতাংশ।’

তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘যেকোনো প্রকল্পের বিনিয়োগের রিটার্ন মূলধনের ব্যয়ের চেয়ে বেশি হতে হবে- শুধু ঋণের জন্য নয়, আমাদের নিজস্ব মূলধনের জন্যও। অর্থের উচ্চ ব্যয়ের কারণে, আমরা অলাভজনক প্রকল্প পরিচালনা করতে পারি না। অন্যথায়, আমাদের সমস্ত আয় ব্যাংকগুলোর কাছে চলে যাবে।’

গত ছয় বছরের অর্জন তুলে ধরে রোসাটম প্রধান লিখাচেভ বলেন, গত ছয় বছরে রসাটমের অর্জনগুলোর মধ্যে রয়েছে:

#রাশিয়া ও বিদেশে ৫টি নতুন ইউনিট কমিশনিং করা

#১০টি নতুন ইউনিটের নির্মাণকাজ শুরু করা

#উত্তর সাগর রুটে পারমাণবিক শক্তিচালিত ৮টি জাহাজ পরিচালনায় আনা, যা ২০১৮ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে দ্বিগুণ হয়েছে।

আগামী ছয় বছরের পরিকল্পনা ও চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে লিখাচেভ বলেন, ‘আগামী বছরগুলো সহজ হবে না, কারণ পারমাণবিক শক্তি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রকল্পের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে।

তিনি চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে যেসব বিষয় উল্লেখ করেন তা হলো:

#বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি

#অর্থনৈতিক চাপ ও নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলা করে রসাটমের নেতৃত্ব ধরে রাখা

#বিশ্বের রাজনৈতিক পরিস্থিতির অস্থিতিশীলতা

#অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রযুক্তি ও উচ্চ-প্রযুক্তি পণ্যের ঘাটতি, যা স্থানীয়ভাবে প্রতিস্থাপন করতে হবে

#বিশেষজ্ঞদের জন্য কর্মসংস্থানের প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি

#অর্থনৈতিক ও আর্থিক কঠিন পরিস্থিতি, যেখানে উচ্চ সুদের হার প্রকল্প বাস্তবায়নে বড় চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে।

আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো-সীমিত সম্পদের মধ্যে কার্যকরভাবে কাজ করার দক্ষতা অর্জন করা। যোগ করেন রোসাটম প্রধান অ্যালেক্সেই লিখাচেভ।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!