নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে কার্টন ফ্যাক্টরির আগুনে দুই নারী শ্রমিকসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে আগুনে পুড়ে দুইজনের এবং ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ২৫ জন। তাদের রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তিনজন ও শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে তিনজন ভর্তি আছেন।
আগুনের পর ছয় শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছেন বলে দাবি করেছেন স্বজনরা। আহত বা নিহতের মধ্যে তাদের পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে উপজেলার ভুলতার কর্ণগোপ এলাকায় হাশেম ফুড বেভারেজ কোম্পানির কার্টন ফ্যাক্টরিতে আগুন লাগে। আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয় ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট। প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস। তবে রাত সাড়ে ১২টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কারখানার বিভিন্ন জায়গায় আগুন জ্বলার খবর পাওয়া গেছে।
আগুনে মৃত দুই শ্রমিক হলেন হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ বুলডোবা গ্রামের যতি সরকারের স্ত্রী স্বপ্না রানী ও উপজেলার গোলাকান্দাইল নতুন বাজার এলাকার হারুন মিয়ার স্ত্রী মিনা আক্তার। ইউএস-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাদের মৃত্যু হয়।
আরেক শ্রমিক মুরসালিন ভবনের তৃতীয় তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত হন। ঢাকা মেডিক্যালে হাসপাতালে রাত ১১টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
রূপগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার হোসেন জানান, আগুন লাগার পর দগ্ধ দুই নারীকে হাসপাতালে নিয়ে যান শ্রমিকরা। সেখানে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
ইউএস-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক শাহাদাত হোসেন তাদের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, হাসপাতালে আরও ২১ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। গুরুতরদের অ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন পরিবহনে রাজধানীর একাধিক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া জানান, নারায়ণগঞ্জ থেকে আহত অবস্থায় ছয়জন এসেছে। তাদের মধ্যে নারীসহ তিনজনকে ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। অন্য তিনজনের শ্বাসকষ্ট হওয়ায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে।
শ্রমিক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সেজান জুস কারখানার সাততলা ভবনটির নিচতলায় কার্টন ফ্যাক্টরি থেকে আগুনের সূত্রপাত। আগুন একপর্যায়ে পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে।
তখন শ্রমিকরা ছোটাছুটি শুরু করেন। কেউ কেউ ভবনের ছাদে অবস্থান নেন। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এমন প্রায় ২৫ জনকে রশি দিয়ে ছাদ থেকে নামিয়েছেন।
ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক তানহারুল ইসলাম জানান, হাশেম ফুড বেভারেজ কোম্পানির কারখানার নিচতলার কার্টনের ফ্যাক্টরি থেকে আগুনের সূত্রপাত। খবর পেয়ে ডেমরা, কাঞ্চন, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এখন ডাম্পিং চলছে।
তিনি বলেন, ‘এটি একটি ফুড বেভারেজ কারখানা। এখানে জুসসহ কোমল পানীয় তৈরি করা হয়। কীভাবে আগুন লেগেছে তা জানা যায়নি।’
খুলনা গেজেট/ টি আই