খুলনা, বাংলাদেশ | ১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ভারতে হাসপাতালে আগুন লেগে ১০ শিশুর মৃত্যু

ছাত্র আন্দোলন দমনে উসকানিমূলক পরামর্শের অ‌ভি‌যোগ অস্বীকার করেননি শহীদুল

গেজেট ডেস্ক

সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন টকশোতে আন্দোলন দমনে উসকানিমূলক বক্তব্য, সরকার এবং পুলিশকে উসকানিমূলক পরামর্শ দেওয়ার তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। রিমান্ডে এ সংক্রান্ত ভিডিও দেখানো হয় সাবেক এ পুলিশ কর্তাকে। এর কোনো কিছুই অস্বীকার করেননি তিনি।

তার দাবি, পরিস্থিতির কারণে তিনি সেটা করেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে সাবেক পুলিশ কর্তাদের ভোকাল হতে বলা হয়েছিল।

গ্রেপ্তারের পর ডিবি হেফাজতে সাত দিনের রিমান্ডে ছিলেন সাবেক এ আইজিপি। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে আজ আদালতে হাজির করা হলে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।

জিজ্ঞাসাবাদে অংশ নেওয়া তদন্ত সংশ্লিষ্ট ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কর্মকর্তারা বলছেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনের নামে নিপীড়ন, নির্যাতন গ্রেপ্তার ও গণহত্যায় পুলিশকে উসকানিমূলক পরামর্শ দিয়েছেন শহীদুল হক৷

সাবেক আইজিপি শহীদুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) রেজাউল করিম মল্লিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নির্বিচারে গুলি, দমন-পীড়ন ও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডে শহীদুল হকের ভূমিকা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ম অনুযায়ী আদালতকে জানানো হবে। প্রয়োজনে আবারও তার রিমান্ড চাওয়া হবে।

গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিল শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ ঘিরে উৎকণ্ঠার মধ্যে মধ্যরাতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। শত শত মৃত্যুর অভিযোগ করা হলেও তা ধামাচাপা দেওয়া হয়। সে সময় নানামুখী চাপ ও নিষেধ সত্ত্বেও সাবেক ডিএমপি কমিশনার ও পরবর্তীতে আইজিপি হওয়া বেনজীর আহমেদের নেতৃত্বে হেফাজতের সমাবেশে সেই রাতে অভিযানের নামে গণহত্যা চালানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। সে সম্পর্কে তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ও টকশোতে আত্ম-স্বীকৃতির বয়ান দিয়েছেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট ও জিজ্ঞাসাবাদে জড়িত এক ঊর্ধ্বতন গোয়েন্দা কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, গ্রেপ্তারের সময় বাসা থেকে তারই লেখা ‘পুলিশ জীবনের স্মৃতি: স্বৈরাচার পতন থেকে জঙ্গি দমন’ নামে একটি বই নিয়ে আসি। সেই বইটি ঘেঁটেছি। যে কেউ বইটি পড়লে তাকে আত্ম-স্বীকৃত অপরাধী পুলিশ কর্মকর্তা ভাববেন।

ওই কর্মকর্তা বলেন, তিনি ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে উসকানি দিয়েছেন, পুলিশের তৎকালীন হাইকমান্ডকে নানা আন্দোলনের দমনে উসকানিমূলক পরামর্শ দিয়েছেন। টকশোতে কথা বলেছেন। উসকানির বেশ কিছু ম্যাসেজ, পরামর্শ ও যোগাযোগের তথ্য-প্রমাণ ও ভিডিও নিয়েই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তিনি অস্বীকার করেননি। তিনি বলেছেন, পরিস্থিতির কারণে সরকারকে সহায়তায় এসব করেছি। সাবেক পুলিশ কর্তা হিসেবে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে জনমত গড়তে তাকে ভোকাল হতে বলা হয়েছিল বলেও দাবি করেন তিনি।

৫ আগস্ট উত্তরা থেকে আসা গণমিছিল ‘ডিসপাচ’ করার বার্তা দেন শহীদুল

গোয়েন্দা রমনা বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বড় ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের চূড়ান্ত দিন গত ৫ আগস্ট সকালে তার নামে একটি মোবাইল নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে দুবার বার্তা দেওয়া হয়। বার্তাটি পাঠানো হয়েছিল সেদিন আন্দোলন দমনে সক্রিয় ডিএমপির এক ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাকে। যিনি বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে রয়েছেন। উত্তরা থেকে গণভবন অভিমুখে আসা গণমিছিল রুখে দিতে ‘ডিসপাচ’ করার বার্তা দিয়েছিলেন তিনি। এটা যদি সত্যি তিনিই করে থাকেন, তাহলে সেটা হবে ভয়াবহ উসকানি। ওই বার্তাটি তথ্যপ্রযুক্তিগত সহায়তায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। কাকে কাকে এমন ম্যাসেজ পাঠানো হয়েছি, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র ও সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা হবে।

উল্লেখ্য, ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগ থেকে জানানো হয়, গত ৩ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হককে উত্তরা ১৬ নম্বর সেক্টর থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিবি)।

পরদিন ৪ সেপ্টেম্বর(বুধবার) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১০ দিন করে রিমান্ড অনুমতি চেয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়। রাজধানীর নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী আবদুল ওয়াদুদ হত্যা মামলায় শহীদুল হকের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।

সাত দিনের রিমান্ড শেষে আজ বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকালে শহীদুল হককে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা নিউমার্কেট থানার সাব-ইন্সপেক্টর বায়েজীদ বোস্তামী। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আলী হায়দার তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

শহীদুল হক ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আইজিপি হিসেবে নিয়োগ দেয় আওয়ামী লীগ সরকার। ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি অবসরে যান তিনি। এরপর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরীয়তপুর-১ (পালং-জাজিরা) আসনে নৌকা প্রতীকে লড়তে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন শহীদুল হক। যদিও তাকে দলীয় মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!